প্রতীকী ছবি
দ্বাদশের পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হবে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট (আন্তর্জাতিক)। এই ধরনের বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্ত করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষক মহলে।
দীর্ঘ ১১ বছর পর উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন করা হয়েছে। শেষ পরিবর্তন হয়েছিল ২০১৩ সালে। পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে । ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ ভাগের পরবর্তী ইতিহাস ও তার বর্তমান যে ফল সেটাও তুলে করা হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “ইতিহাসের আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন করেছি। আজাদ হিন্দ ফৌজ, ৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ও তারপরে দেশ ভাগের পরবর্তী ইতিহাস পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে। যা আগে পড়ানো হলেও এত বিস্তারিত ভাবে ছিল না।”
বিজ্ঞান ছাড়া বাকি বিষয়ে প্রজেক্ট ওয়ার্ক করানো হয় পড়ুয়াদের। তার জন্য ২০ নম্বর ধার্য করা আছে। ইতিহাসের প্রজেক্টের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন বিষয়বস্তুও পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে। তার মধ্যে অন্যতম হল ‘অ্যান্টি করাপশন মুভমেন্ট’ বা দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই বিষয়টি সব থেকে চর্চিত। দুর্নীতি ও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রত্যেক দিনের গণমাধ্যমে এই সংক্রান্ত কোনও না কোনও খবর প্রকাশিত হয়। সেই বিষয়টিকে নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি সচেতন করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ।
বঙ্গীয় শিক্ষক-শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এই বিষয়টি যুক্ত করে ভালই করেছে সরকার। দুর্নীতি এখন সমাজ ব্যবস্থার একটি পরিপূরক অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুর্নীতি সম্পর্কে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তারা এই বিষয়ে ভাল ফলও করতে পারবে।”
যোধপুর পার্ক বয়েজ-এর শিক্ষক সুজিত কুমার সাহু বলেন, “প্রজেক্ট-এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে যা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সবথেকে বেশি চর্চিত। এ ছাড়াও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখে পাঠ্যক্রমকে অত্যন্ত ভাল এবং আধুনিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে।”
৭১-মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ও তার পরবর্তী যে প্রভাব সেটা ইতিহাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলায়-এর প্রভাব যথেষ্ট বেশি। তাই পরিবর্তনশীল সমাজে যুগোপযোগী পঠন-পাঠনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বেশ কিছু ইতিহাসবিদ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুনানক চেয়ার প্রফেসর ইতিহাসবিদ কৌশিক রায় বলেন, “পাঠ্যক্রম পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে রাজ্য স্কুলগুলির ক্ষেত্রে বিষয় যুক্ত করার ক্ষেত্রে বা পড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে বোর্ডকে। যাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভুল বার্তা না পৌঁছায়। দুর্নীতির বিষয় পক্ষপাতদুষ্ট না হয়।”
বিশ্বজুড়েই বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পড়ছে। সেই বিষয়টিকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে দ্বাদশ শ্রেণির প্রজেক্টে যুক্ত করা হয়েছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কেছাত্রছাত্রীরা ওয়াকিবহাল হবে বলে মনে করছেন শিক্ষক মহল।