সংগৃহীত চিত্র।
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্বেচ্ছাবসর নিতে হলে পর্ষদের কাছে আবেদন নয়। রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক-প্রধান শিক্ষকদের এবং শিক্ষাকর্মীরা স্বেচ্ছাবসর নিতে চাইলে আবেদন করতে হবে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (ডিআই) মাধ্যমে। স্বেচ্ছাবসরের এই ধরনের কোনও আবেদন সরাসরি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে এলে তা গ্রাহ্য করা হবে না। পর্ষদের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের ইস্তফা দেওয়া বা স্বেচ্ছাবসরের আবেদনের ক্ষেত্রে স্কুলের কাছে আগে আবেদন করতে হয়। স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, তারপর পুরো বিষয়টি যাবে জেলা পরিদর্শকের কাছে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পৌঁছবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে বহু ক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনে সরাসরি আবেদন করা হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। সূত্রের খবর, সেই আবেদনের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। তাই পর্ষদের তরফ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের আগে পর্যন্ত এই আবেদন জমা পড়তো শিক্ষা দফতরের কাছে। পরিবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী এখন পর্ষদই নিয়োগকর্তা তাই শিক্ষকরা সম্ভবত সেখানেই এই আবেদন পাঠাচ্ছেন।
তবে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে ভিআরএসে যে ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এ ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এই প্রক্রিয়াকে স্বেচ্ছাবসর না বলে প্রাক-অবসর বলাই ভাল। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদারের বক্তব্য, “এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে নতুন কিছু নেই। শুধু আবেদনের পদ্ধতিগত সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে ভিআরএস বা স্বেচ্ছাবসরের যে সুযোগ সুবিধাগুলি আছে তা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের যাতে দেওয়া হয় আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।” প্রসঙ্গত, এই প্রক্রিয়ায় পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে ৬০ বছরে অবসর গ্রহণের পরের দিন থেকে হিসাব করে আরও সাত বছর অর্থাৎ, ৬৭ বছর বয়সের মধ্যে মৃত্যু হলে, বাকি সময়টুকুর জন্য তাঁর পরিবারের লোকেরা পুরো পেনশন পাবেন। কেউ ৫৫ বছর বয়সে স্বেচ্ছাবসর নিলে তার ক্ষেত্রে সময়সীমা ৬২ বছর পর্যন্ত হবে। বাকি সুযোগ সুবিধা একই।
বিগত আট বছর ধরে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা সময়ের আগে অবসর নিলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “বর্তমানে রাজ্যে স্কুলগুলিতে কোন নিয়োগ হচ্ছে না। এই অবস্থায় স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে। তা হলে কি পক্ষান্তরে বলতে চাইছেন যে স্কুলগুলি আরও ফাঁকা হয়ে যাক।”
হঠাৎ করে কেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে এই ধরনের নির্দেশ দিতে হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক মহলে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই ধরনের নির্দেশিকা নজিরবিহীন। আর এখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে তা হলে কি এই সরকারের আমলে ভিআরএস নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে?”