টেট পরীক্ষা। প্রতীকী ছবি।
প্রিয় ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, তোমরা সকলেই আশা করি ভাল আছো এবং প্রস্তুতিও ভীষণ ভাল চলছে। যাই হোক, পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ এর পরেও অনেকেই নিশ্চয়ই দ্বন্দ্বে ছিলে সঠিক সময় পরীক্ষা হবে কিনা? কিন্তু তোমাদের সকল প্রতীক্ষা, সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে পর্ষদ কিন্তু অ্যাডমিট কার্ড প্রকাশ করেছে এবং সবাই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরে গিয়েছো যে পরীক্ষা নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময় মতোই হবে। তাই আর কোন সংকোচ না রেখে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা। একটা মুহূর্ত মানে, একটা প্রশ্ন, একটা প্রশ্ন মানে একটা সঠিক উত্তর এই ব্রতে ব্রতী হতে পারলে সফলতার শিখর তুমি ছোঁবেই ছোঁবে এই আমাদের বিশ্বাস, আমাদের প্রত্যয়।
যাই হোক, গত পর্বে তোমাদের বলেছিলাম কীভাবে পরীক্ষার আগে গুছিয়ে নেবে, কোন প্ল্যান বা কোন স্ট্র্যাটেজিতে এগোবে। এখন প্রস্তুতিপর্বের চূড়ান্ত পর্যায়। আশা রাখি যে অধ্যায়গুলো নিয়ে তোমাদের কোন রকম ভীতি-দ্বন্দ্ব বা দুর্বলতা ছিল সেগুলো তোমরা কাটিয়ে উঠেছ। এবার কিন্তু শুধুই মগজাস্ত্রে শান দেবার পালা। খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব দামি এই আগামী এক সপ্তাহের কয়েকটা দিন। আমাদের আলোচনার বিষয় পরিবেশবিদ্যা এবং প্রত্যেক পরীক্ষার্থী নিশ্চয়ই জানো পরিবেশবিদ্যার সিলেবাস দুটি অংশে বিভক্ত। আজকে আমরা মূলত আলোচনা রাখব পরিবেশের যেটি কনটেন্ট নির্ভর অংশ তার চ্যাপ্টার এবং সেখান থেকে সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি আসার জায়গা নিয়ে। তোমাদের আজকের এই ছোট প্রবন্ধে জানাব এই সময়ের মধ্যে কোন কোন অংশগুলি দেখে নেবে।
সিলেবাসের প্রথমেই রয়েছে ভৌত এবং সামাজিক পরিবেশ। এখান থেকে তোমরা দেখবে আমাদের প্রতিনিয়ত জীবনে ঘটে চলা বিভিন্ন ধরনের ঘটনাবলী, পরিবেশের প্রকারভেদ, পরিবেশের উপাদান সমূহ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বলব নবম ও দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞানের কিছু সাধারণ চ্যাপ্টার যেমন পদার্থের অবস্থা, স্থিতি গতি, বিভিন্ন রাশি সমূহ, তাদের মাত্রা এগুলি একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়।
দ্বিতীয় অংশ হল পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের ভূগোল। এখান থেকে দেখে যাবে বিভিন্ন ধরনের বনাঞ্চল, তাদের বৈশিষ্ট্য, নদনদী, গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ, পাহাড় পর্বত, হ্রদ এগুলি কোথায় কোথায় রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন তথ্য যেমন—কোনটি দীর্ঘ, কোনটি বৃহত্তম বা কোনটির কী ডাকনাম রয়েছে যা তোমরা মাধ্যমিক স্তরে পড়েই এসেছ। এর পরবর্তী অংশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ যেখান থেকে দেখে যাবে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত দুর্ঘটনা যেমন ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, আমাজন অববাহিকার দাবানল, পরিবেশগত বিভিন্ন আন্দোলন, তাদের নেতৃত্ব, তাদের উদ্দেশ্য ইত্যাদি।
পরবর্তী অংশগুলির মধ্যে আছে খাদ্য, জামাকাপড়, ভ্রমণ, বাসস্থান ইত্যাদি যেখান থেকে পড়তে হবে ভারতের কোন অংশে কোন ধরণের মানুষরা কী জামাকাপড় পরেন, কী ধরনের খাবার কোথায় বিখ্যাত, কোন রাজ্যের কী বিশেষ উৎসব রয়েছে যাকে কেন্দ্র করে পর্যটন জড়িয়ে আছে, রাস্তাঘাটের বিভিন্ন ট্র্যাফিক এর চিহ্নসমূহ, বিভিন্ন হাইওয়ে বা তাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বিষয়সমূহ, বিভিন্ন বৈদেশিক পর্যটক, বিভিন্ন বাড়ির বৈশিষ্ট্য যেমন ইগলু কী, স্থায়ী-অস্থায়ী বাসস্থান কী ইত্যাদি।
খাদ্যশৃঙ্খল, বাস্তুবিদ্যা এবং বাস্তুতন্ত্র থেকে পড়তে হবে খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন প্রকারভেদ, শক্তিপ্রবাহ, বাস্তুতান্ত্রিক পিরামিড ইত্যাদি। উৎপাদক, খাদক, বিয়োজক এদের ভূমিকা সম্পর্কেও জেনে যেতে হবে। এর পর আসা যাক ষষ্ঠ ও সপ্তম অংশে অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল এবং শিলামন্ডল ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর, তাদের বৈশিষ্ট্য, উষ্ণতার তারতম্য, স্বাদু জল, নোনতা জল তাদের পরিমাণ এই বিষয়গুলি ভাল ভাবে দেখে যেও এখান থেকে। আর দূষণ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। সব সময়ের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন বিষয়ের দূষণ যেমন বায়ু, শব্দ, মাটি, জল এগুলি রিভিশন দাও বার বার করে। প্রাথমিক ও গৌণ দূষক, তাদের বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে তারা কীভাবে প্রভাব ফেলে, বিভিন্ন ধাতব জলদূষক যেমন পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, আর্সেনিক, শব্দের বিভিন্ন মাত্রা এগুলি কোন ভাবেই দেখে যেতে ভুলবে না।
প্রাণীরাজ্য, উদ্ভিদরাজ্য, জীব বৈচিত্র্য থেকে দেখবে বিভিন্ন প্রাণী, তাদের রেচনঅঙ্গ, গমন অঙ্গ ইত্যাদি। বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রকৃতি, উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থান অর্থাৎ কোনটি মূলের অংশ, কোনটি পরিবর্তিত কান্ড, কোনটি পাতার অংশ, কোনটি ফুলের অংশ ইত্যাদি। জীব বৈচিত্র্য থেকে পড়বে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান, তাদের অবস্থান, সেখানে কোন কোন জীবকে বিশেষভাবে গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের সংখ্যা, ইন-সিটু, এক্স-সিটু সংরক্ষণ, জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে দেখে যেতে হবে বিভিন্ন উপাদান যেমন কয়লা, তেল, সোনা এগুলি কোথায় সবথেকে বেশি পাওয়া যায়, বিভিন্ন প্রকার নবীকরণযোগ্য, অনবীকরণযোগ্য শক্তি উপাদান, তাদের গুরুত্ব, কোন রাজ্যে কোনটি বেশি তৈরি হয়, কোন তাপবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোথায় আছে এগুলি।
পরিবার এবং বন্ধু ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকটিও বেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের বিভিন্ন সম্পর্কগুলি তুলে প্রশ্ন দিতে পারে অনেকটা রিজনিং-এর মতো যেমন ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য পরীক্ষাগুলিতে আমরা আসতে দেখি। এছাড়া বিভিন্ন রক্তের গ্রুপ, সেগুলির বৈশিষ্ট্য পড়ে যেও সবাই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার থেকে পড়বে বিভিন্ন প্রকার কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ, তাদের উদাহরণ, তাদের কমানোর বা নিয়ন্ত্রণের উপায়, ইলেকট্রনিক বর্জ্য, কোন রাজ্য থেকে সেগুলি বেশি তৈরি হয় এগুলির মতন তথ্য।
পরিবেশের বিভিন্ন বিষয়সমূহ থেকে দেখে যাবে গ্রিন হাউস প্রভাব, বিশ্ব উষ্ণায়ন, ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণ, বিভিন্ন আইন কবে এসেছে, বিভিন্ন প্রোটোকল কবে হয়েছে, কপ-২৭ –এর মতো সাম্প্রতিক বিষয়সমূহ।
সবশেষে রয়ে গেল আর দুটি অংশ। সেগুলিই বা বাকি থাকে কেন? পরিবেশ এবং মানুষের বিভিন্ন রোগ থেকে দেখে যাবে বিভিন্ন মশাবাহিত, মাছিবাহিত, ভাইরাসঘটিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত, প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণীঘটিত রোগসমূহ। এছাড়াও বিভিন্ন ভিটামিন, তাদের বৈজ্ঞানিক নাম এবং অভাবজনিত লক্ষণ তো পড়ে যেতেই হবে।
মানুষের দক্ষতা—এই অংশটি থেকে দেখবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চিত্রকলা, বিভিন্ন প্রকারের উৎসব, বিভিন্ন রাজ্যের লোকগান, লোকনৃত্য, বিভিন্ন খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি।
আর একটা কথা আগেও বলেছি, আবারো মনে করিয়ে দিই—যেহেতু এই পরীক্ষার সিলেবাস সম্পূর্ণ সিটেট পরীক্ষার প্যাটার্ন কেন্দ্রিক তাই সিটেট পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নগুলি ভীষণ ভাল ভাবে দেখে যেও।
আশা রাখি এই বিষয়গুলি দেখে গেলে তোমরা অনায়াসেই এই অংশ থেকে ১৫টির মধ্যে ১২-১৩টি প্রশ্ন কমন পাবেই সঠিক ভাবে উত্তরও করে আসতে পারবে।সবশেষে একটাই কথা বলি সবাই মন দিয়ে ভাল ভাবে নিজের সর্বস্ব দিয়ে অনুশীলন কর। খুব খুব ভাল হবে তোমাদের পরীক্ষা, এই আশাই রাখি।
এই প্রতিবেদনটি ‘রাইস এডুকেশন’-এর পক্ষ থেকে টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সংকলিত।