চন্দ্রযান ২
অমেয় গরিমার দিন ভারতের জন্য। সমগ্র জাতির বুক গর্বে প্রশস্ত হল আকাশের দিকে তাকিয়ে। শ্রীহরিকোটার আকাশ কাঁপিয়ে চাঁদের দিকে উড়ে গেল চন্দ্রযান-২। গোটা দেশ টেলিভিশনে বা ওয়েবসাইটে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎসাহী চোখ রেখে সাক্ষী রইল সেই গৌরব-স্পন্দিত মাহেন্দ্রক্ষণের।
চাঁদের দিকে এই প্রথমবার রওনা হলাম না আমরা। আগেও চন্দ্রাভিযান করেছে ভারত, সফল ভাবে করেছে। ত্রিবর্ণ পতাকা সেবারও চাঁদের পৃষ্ঠকে স্পর্শ করেছে। এ বার দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান। এ বার আগের চেয়েও উচ্চাকাক্ষী অভিযান।
চাঁদের পৃষ্ঠকে এখনও পর্যন্ত স্পর্শ করতে পেরেছে এ বিশাল পৃথিবীর মাত্র চার দেশ। ভারত সেই চারের অন্যতম, এ কথা ভাবলেই উদ্দীপণা জাগে স্পন্দনে। তবে এক দশক আগে ওই রকম একটা গর্বের পঙ্ক্তিতে নাম নথিভুক্ত করেই ভারত যে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করেনি, তার প্রমাণ এই উন্নততর এবং সক্ষমতর দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানেই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
চন্দ্রযান-২ তার সম্পূর্ণ যাত্রাপথ অতিক্রম করে ফেলেছে, এমন নয়। যাত্রা সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু নিখোঁজ সাফল্যের সঙ্গে প্রাথমিক ধাপগুলো অতিক্রম করে চন্দ্রযান পৌঁছে গিয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে। বাকি যাত্রাপথটাও নির্বিঘ্নেই অতিক্রম করুক এই ভারতীয় মহাকাশ যান— গোটা দেশ এখন এই প্রার্থনায় রত। এবং দেশকে এই অসামান্য গরিমার মুখোমুখি দাঁড় করানোর কারিগর যাঁরা, সেই বিজ্ঞানীদের প্রশংসায় সমগ্র জাতি আজ পঞ্চমুখ।
আরও পড়ুন: চাঁদের মাটিতে নামুক ভারত, পাশাপাশি উন্নতি হোক মানবজমিনেরও, চান এঁরা
প্রশংসায় পঞ্চমুখ না হলে ঘোর অন্যায় হবে। মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের যে সুনাম তৈরি হয়েছে, তাকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যেতে এই বিজ্ঞানীরা যেমন তৎপর, তেমনই তৎপর তাঁরা অমিতব্যয়ীতা এড়িয়ে চলতেও। দেশের অর্থনীতি যত বড় আকারই ধারণ করে থাকুক না কেন, ভারত এখনও উন্নয়ণশীল দেশই। অতএব ন্যূনতম সম্ভাব্য খরচে মহাকাশ অভিযানের ব্যবস্থা করার কথাও খেয়াল রেখেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যে বিপুল খরচে মহাকাশ অভিযান করে থাকে, তার সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে ইসরো বিশ্বকে দেখিয়েছে, সরলতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে কত কম খরচে মহাকাশ অভিযান করা সম্ভব। ভারতের এই দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের খরচের হিসেব বলছে, সাম্প্রতিক হলিউডি ছবি ‘অ্যাভেঞ্জারস: এন্ডগেম’ বানাতে যা খরচ হয়েছিল, চন্দ্রযান-২ মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ খরচের সামান্য বেশিতে। এই অসামান্য সাফল্যের জন্য অতএব, অশেষ অভিনন্দন ইসরোকে। অভিনন্দন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের।