Israel Palestine Conflict

কৃষ্ণ মেঘ

একুশ শতকের কোনও যুদ্ধ মহাদেশ-সীমানায় আবদ্ধ থাকে না। গত শতাব্দীর বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের এটাই বাস্তব, বিশ্বায়নের দুনিয়ায় সেই বাস্তব স্পষ্টতর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:০৭
Share:

ইজ়রায়েল ও প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ। —ফাইল চিত্র।

গত সপ্তাহে যখন প্যালেস্টাইনি সন্ত্রাস গোষ্ঠী হামাস ভয়ানক জঙ্গি হানা হানল ইজ়রায়েলে, এবং সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল গাজ়ায় ইজ়রায়েলের ভয়াল প্রতি-আক্রমণ, আমেরিকার বিদেশসচিব বলেছিলেন, একটা নয়, দশটা ‘৯/১১’-র সমান ঘটনা ঘটে গেল। কী ভেবে তিনি বলেছেন জানা নেই, কিন্তু পরিস্থিতি ভয়াবহ। নিহত আহত মৃতপ্রায় আশ্রয়হীন সম্বলহীন চিকিৎসাহীন ক্ষুধার্ত মানুষে ভরে গিয়েছে গাজ়া, সেখান থেকে সমস্ত মানুষকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা চলছে। হামাস এখনও পণবন্দি ইজ়রায়েলি মানুষজনকে ছাড়েনি, তার ইঙ্গিতও নেই। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে জেরুসালেম ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও। স্পষ্টতই ৯/১১ ছিল ‘একটি’ ঘটনা, কিন্তু এ বারের ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষ ঘটনা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যেই একটি সামূহিক সংঘর্ষে পরিণত। বিশ্ব জুড়ে অনেকেই বলছেন, ইউক্রেনের পর আরও একটি যুদ্ধ বাধল একবিংশ শতকের পৃথিবীতে। তবে আর একটি মতও ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যে, এ কোনও ‘যুদ্ধ’ নয়, একতরফা আক্রমণ— গাজ়ায় প্যালেস্টাইনি মানুষের উপর ইজ়রায়েল নামক রাষ্ট্র সর্বশক্তিতে চড়াও হলে তাকে কি আর দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধ বলে অভিহিত করা যায়? এ-ও ঠিক যে, হামাসের প্রাথমিক আক্রমণ ছাড়া ইজ়রায়েলের আক্রমণ ঘটত না, সুতরাং হয়তো বলা ভাল প্যালেস্টাইনি জঙ্গিদের একাংশের আক্রমণে ইজ়রায়েল সেখানকার সমগ্র জনগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করে দিতে বসেছে। এই ব্যাখ্যা-প্রতিব্যাখ্যা, তর্ক-বিতর্কের মধ্যে একটি বিষয় স্থিরনিশ্চিত: প্যালেস্টাইনি মানুষ লড়াই করতে না পারলেও তাদের সমর্থক কম নেই। ইরান, লেবানন, জর্ডন ইত্যাদি দেশ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা সর্বতোভাবে প্যালেস্টাইনের সঙ্গে। আরবভূমির অন্যান্য দেশও সামনে এগিয়ে আসছে, প্রাথমিক ভাবে সরাসরি মন্তব্য না করলেও সেখানকার জনমতের চাপ রাষ্ট্রগুলির উপর পড়ছে। সুতরাং গাজ়াবাসী ‘যুদ্ধ’ করতে না পারলেও পশ্চিম এশিয়ায় ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়ে গেল, এ কথা বলাই যায়।

Advertisement

একুশ শতকের কোনও যুদ্ধ মহাদেশ-সীমানায় আবদ্ধ থাকে না। গত শতাব্দীর বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের এটাই বাস্তব, বিশ্বায়নের দুনিয়ায় সেই বাস্তব স্পষ্টতর। ইউরোপের নানা দেশে ও আমেরিকায় ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল-বিরোধী আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে, পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে ‌ইজ়রায়েলের গভীর সংযোগ সর্ববিদিত। জার্মানি অস্ট্রিয়াও ইসলামি কট্টরপন্থার সমর্থকদের উপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে। ইসলাম-ভীতির বৃহত্তর প্রেক্ষিতে এই সব ঘটনা উদ্বেগজনক— বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থী সিরীয় উদ্বাস্তুদের জন্য পরিস্থিতি কঠিনতর হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। এর মধ্যে ‘পশ্চিম বিশ্ব’-এর দুই প্রতিস্পর্ধী চিন ও রাশিয়ার ভূমিকা কী এখনও স্পষ্ট নয়, তবে যা-ই হোক, তা শান্তি পুনঃস্থাপনে সহায়ক হবে না নিঃসন্দেহে।

বিশ্ব-অর্থনীতিতেও এই সংঘর্ষের প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এখনই তেলের জোগান বিঘ্নিত হতে পারে, সে আশঙ্কা ক্ষীণ— কিন্তু সংঘাত জারি থাকলে, এবং পশ্চিম এশিয়া জুড়ে তার ভূ-রাজনৈতিক জল গড়ালে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্য দিকে, ইরান যদি হারমুস-এর খাঁড়ি অবরোধ করে, তা হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বড় পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তেলের দাম বৃদ্ধি বা বাণিজ্যে ব্যাঘাতের আঁচ পড়বে মূল্যবৃদ্ধির হারের উপর। এমনিতেই গোটা দুনিয়া এখন প্রবল মূল্যবৃদ্ধির চাপে ধ্বস্ত। রুশ-ইউক্রেন সংঘাত থামার আগেই আরও একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে স্বভাবতই জটিলতর করবে। দুনিয়ার সর্বত্রই যে কঠোর মুদ্রা-নীতি গৃহীত হয়েছে, তা আরও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার আশঙ্কা। ফলে বিনিয়োগের উপর তার প্রভাব পড়বে। লগ্নিকারীরা ইতিমধ্যেই সতর্ক হয়েছেন, পুঁজির বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে আরও একটি আর্থিক মন্দা প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement