RBI

ঋণের অধিক

ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বিচার না করিয়া তাঁহাকে ঋণ দেওয়া সুনীতি নহে— অর্থনৈতিক যুক্তিতেও নহে, মানবিকতার ধর্মেও নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৫:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরিবারের বার্ষিক আয়ের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ঋণের বাৎসরিক কিস্তির অঙ্ক হইতে পারিবে না— ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য নিয়ম বাঁধিয়া দিল ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। একটি আপত্তি উঠিতে পারে— কোনও পরিবারের যতখানি ঋণের প্রয়োজন, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান হইতে যদি তাহা না পাওয়া যায়, তবে এই দরিদ্র মানুষেরা মহাজনের দ্বারস্থ হইবেন, বিqষমতর সুদের জালে জড়াইয়া পড়িবেন। আপত্তিটি যে অবাস্তব, এমন দাবি করিবার কোনও উপায় নাই। কিন্তু, কাহারও ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বিচার না করিয়া তাঁহাকে ঋণ দেওয়া সুনীতি নহে— অর্থনৈতিক যুক্তিতেও নহে, মানবিকতার ধর্মেও নহে। সুতরাং, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোই বিধেয়। আরও একটি কথা স্মরণে রাখা জরুরি— মানুষের শিখিয়া লইবার ক্ষমতা বিপুল। ফলে, ঋণযোগ্যতার ঊর্ধ্বসীমা বিষয়ে যদি সাধারণ মানুষ অবহিত থাকে, তবে আশা করা যায়, এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অতি দ্রুত ঋণের কুশলীতর ব্যবহারের পন্থা শিখিয়া লইবে। তাহাতে সেই মানুষগুলির তো বটেই, সমগ্র অর্থব্যবস্থারই লাভ।

Advertisement

ক্ষুদ্র ঋণ বস্তুটিকে নেহাত একটি অর্থনৈতিক পরিষেবা হিসাবে গণ্য করিলে তাহার প্রকৃত গুরুত্বকে খর্ব করা হইবে। এই ঋণ চরিত্রগত ভাবেই দরিদ্রতর শ্রেণির মানুষের জন্য। শুধু তাহাই নহে, এই ঋণের মূল প্রাপক মহিলারা। মহিলাদের হাতে এই অর্থের জোগান যে শুধু তাঁহাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়াছে, স্বনির্ভর হইবার সুযোগ দিয়াছে, তাহাই নহে— এই ‘সক্ষমতা’ তাঁহাদের সামাজিক ক্ষমতায়ন ঘটাইয়াছে, পরিবারে গুরুত্বের ভারসাম্য পরিবর্তন করিয়াছে। একাধিক গবেষণা বলিতেছে, মহিলাদের ক্ষমতায়নের ফলে পরিবারে সার্বিক পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদিতেও উন্নতি ঘটিয়াছে। ফলে, ক্ষুদ্র ঋণকে তাহার সামাজিক তাৎপর্যের মাপকাঠিতে বিচার করা বিধেয়। এবং, যে হেতু এই তাৎপর্য বহুলাংশে পরোক্ষ— এক অর্থে যাহাকে এই ঋণের ইতিবাচক অতিক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা চলে— ফলে, অর্থনীতির যুক্তি বলিবে, যতখানি ঋণ গৃহীত হইলে তাহা সমাজের পক্ষে সর্বোত্তম হইত, প্রকৃত প্রস্তাবে ঋণগ্রহণের পরিমাণ তাহার তুলনায় কম। সুতরাং, এই ক্ষেত্রে সরকারের একটি দায়িত্ব থাকিয়া যায়।

ঋণযোগ্যতার ঊর্ধ্বসীমা যেমন বাঁধিয়া দেওয়া জরুরি, তেমনই যাঁহারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন— এবং, ঋণের সহায়তায় যাঁহারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ঘটাইতে পারিয়াছেন— তাঁহাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করাও জরুরি। তাহার একটি উপায় হইতে পারে আর্থিক পুরস্কার। কেহ নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ করিলে, এবং সেই একই সময়কালে তাঁহার আর্থিক অবস্থায় তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ঘটিলে সরকার তাঁহার জন্য কিছু বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা করিতে পারে। অন্য দিকে, বিশেষত দরিদ্রতর পরিবারগুলির জন্য সাময়িক ভাবে সুদে ভর্তুকির ব্যবস্থাও করা সম্ভব। ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার বিষম রকম চড়া। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এই হার কমানো যায় কি না, ভাবা প্রয়োজন। কেহ ঋণ পরিশোধে অপারগ হইলে তাঁহাকে সাময়িক ভাবে নিষ্কৃতি দেওয়া যায় কি না, তাহাও দেখিতে হইবে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধে অপারগ যুবকের আত্মহত্যার যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটিল, তাহার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করিতেই হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement