শিক্ষাদান।
বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধ ‘আরামের অভ্যাসটুকু ছেড়ে’ (২৭-৯) পড়ে কিছু কথা বলতে চাই। এটা বলা যেতে পারে, সরকারি স্কুলে ছাত্র কমে যাওয়া, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত ঘরের ছাত্রছাত্রীদেরও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার যে জোয়ার সাম্প্রতিক কালে এসেছে, তার জন্য শিক্ষকদের আরাম বা বাড়ির কাছে ট্রান্সফার— কোনওটাই দায়ী নয়। এর কারণ প্রথমত, পূর্বতন রাজ্য সরকারের আমলে সরকারি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি এবং পাশ-ফেল তুলে দেওয়া এবং পরে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সারা দেশেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া। ফলে অভিভাবককুলের একটা বড় অংশ বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করতে শুরু করেন। রাজনৈতিক খবরদারি কাজ না করায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দ্বিধায় সব রকম চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, যাতে আখেরে তাদের মঙ্গলই হয়।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে সরকারি স্কুলগুলোতে মিড-ডে মিল, পোশাক, সাইকেল প্রভৃতি বিতরণ, ভোট-সহ নানা রকম শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষক-ছাত্র-বিদ্যালয় গৃহ ব্যবহারের প্রবণতা, যখন তখন সরকারি নির্দেশে ছুটি ঘোষণার ফলে পাঠদানের বহু অমূল্য সময় নষ্ট হয়। বেসরকারি স্কুলে এই সমস্ত ঝঞ্ঝাট নেই।
আরও একটা কারণ হল, এক বিরাট অংশের মধ্যবিত্ত বাঙালির ধারণা যে, শুধুমাত্র এই রাজ্যেই বেকার সমস্যা রয়েছে। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে বড় হয়ে অন্য প্রদেশে গেলে ছেলেমেয়েরা বোধ হয় শুরুতেই লক্ষ টাকা মাইনের চাকরি পাবে। কাজেই, সরকারি শিক্ষানীতির সদর্থক পরিবর্তন ছাড়া সরকারি স্কুল রক্ষা করা অসম্ভব।
কিছু দিন আগেও, যখন কলকাতার মুষ্টিমেয় নামী বেসরকারি স্কুল ছাড়া আর কোথাও বেসরকারি স্কুলের বিশেষ কোনও অস্তিত্বই ছিল না, তখন কিন্তু প্রায় সব পরিবারের ছেলেমেয়ে সরকারি স্কুলেই পড়ত। স্কুলে পড়ানোর বরাবরের যে পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিতে পড়েই সব পরিবার থেকে অসংখ্য ভবিষ্যৎ জীবনের সফল নাগরিক তৈরি হয়েছে। আজ, যে শিক্ষক স্কুলছুট পড়ুয়াকে খুঁজতে গিয়ে দেখছেন যে, সে বাবার সঙ্গে বসে দিশি মদ বিক্রি করছে, সেই সহকর্মীর পরিশ্রম ও আন্তরিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েও বলতে হচ্ছে, এই পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা শিক্ষকদের সাধ্যাতীত। তারা নৈতিক বা অনৈতিক যে কোনও উপায়ে কিশোর বয়স থেকেই যে অর্থ রোজগারে বাধ্য হচ্ছে, তার কারণ সংসারের ভয়ঙ্কর অন্নাভাব। স্কুলে এক বেলা দু’মুঠো ভাত আর সয়াবিনের তরকারি দিয়ে বাড়ন্ত শিশুর পেটের কোণও ভরে না, মা-ভাই-বোনের অন্নবস্ত্রের সংস্থান তো অনেক দূরের কথা। সংসারে অন্নাভাব থাকলে তেরো-চোদ্দো বছর বয়স হলেই শারীরিক দিক থেকে সবল হতে শুরু করা শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে বাধ্য হবে পড়া ছেড়ে রোজগারে নামতে। আর সেই ছেলেটা চার বছর রোজগার করলেই নাইনে পড়া দরিদ্র মেয়েটা খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ওই রোজগেরে ছেলেটার সঙ্গে আলাদা ঘর বাঁধবে, অথবা বাবা মা-ই তাকে ‘পার করে’ অভাবের সংসারে একটা পেট কমাবে।
এইখানেই স্কুলছুটের সমস্যার আসল কারণ নিহিত। এই মৌলিক আর্থসামাজিক সমস্যা ও সরকারি শিক্ষানীতির পরিবর্তনের চিন্তা এড়িয়ে গেলে, আসল সমস্যার গায়ে আঁচড় কাটা যাবে না।
পার্থ ভট্টাচার্য, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
আত্মবিশ্লেষণ চাই
বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধের সূত্রে এক জন শিক্ষক হিসেবে কিছু বলতে চাই। প্রথমত, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা শিক্ষার উন্নতিতে কতটা সচেষ্ট বা আন্তরিক? দ্বিতীয়ত, ভারত মানবসম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তা হলে আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না কেন? তৃতীয়ত, শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষকরা, অথচ শিক্ষার উন্নতিতে তাঁদের মতামতের কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়? চতুর্থত, পড়াশোনার পরিকাঠামো, সূচিপত্র, পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত না হলে, তার দায় কি শুধু শিক্ষকদের? পঞ্চমত, আমাদের দেশে কি ভাল শিক্ষক নেই, না কি তাঁরা পড়াতে চান না? আসল কথা, আমাদের দেশে সব কিছুতেই রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শিক্ষাক্ষেত্রও ব্যতিক্রম নয়। দেশের রাজনৈতিক নেতারা দলমত নির্বিশেষে সকলেই যদি একমত হয়ে দেশের উন্নয়নে বা শিক্ষার উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তা হলে প্রাচীন কালের মতো ভারত আবার শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত হতে পারত। আমরা যদি শিক্ষা বা দেশের উন্নতি করতে চাই, তা হলে সবচেয়ে আগে দরকার আত্মসমালোচনা এবং দেশের ভাল করার মানসিকতা। এটা যত দিন না সম্ভব হচ্ছে, দেশে ভাল কিছু আশা করা বৃথা।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
সদিচ্ছার অভাব?
‘টেট ১১ ডিসেম্বর, নিয়োগ মাধ্যমিকেও’ (২৮-৯) খবরে বলা হচ্ছে, প্রাথমিকে ১১ হাজারেরও বেশি পদ তৈরির কথা ঘোষণা করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ‘বেআইনি’ ভাবে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন বা এখনও করছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায় কার্যত আদালতের, এমনটাই বক্তব্য শিক্ষা দফতরের। শিক্ষা দফতর যদি বুঝে থাকে কোনগুলো ‘বেআইনি’ নিয়োগ, তা হলে ‘বেআইনি’ শিক্ষকদের তালিকা তাঁদের নথিপত্র থেকেই তো পাওয়া যাবে। তার জন্য আদালতের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরকার আছে কি? আদালত তো শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয়নি, সুপারিশ-সহ নিয়োগপত্রও দেয়নি। পরীক্ষা নেওয়া, যোগ্যদের তালিকা বানিয়ে নিজ নিজ পদে চাকরি দেওয়ার কাজ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও এসএসসি-সহ শিক্ষা দফতরের। যে কোনও সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি বেরোয় সেই সময় হাতে থাকা শূন্যপদের ভিত্তিতে। পদ্ধতিটি শেষ হওয়া পর্যন্ত সেই সংখ্যা আরও কিছু বেড়ে যায়, কমে না কখনও যদি না সরকার নিয়োগ না-করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৬ সাল থেকে যে প্রক্রিয়াটি চলছে, সেখানে শূন্যপদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা আছে, চার-পাঁচ বছরে অবসরও নিয়েছেন অনেকে। এগুলো সবই ইতিমধ্যে থাকা শূন্যপদ। তা হলে নতুন পদ সৃষ্টির মহানুভবতা কোন দিক দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে শিক্ষা দফতর? এই সংখ্যক শূন্যপদের জন্য সরকারি কোষাগারে না-দেওয়া মাইনের এতগুলো মাসের টাকাও তো বেঁচেছে।
শিক্ষা দফতর ‘বেআইনি’ নিয়োগ নিজেরাই বাতিল করে মহামান্য আদালতকে জানিয়ে বলতে পারে, সব যোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ এক লপ্তে তারা করে দিচ্ছে এখনই। আদালত একেবারেই বাদ সাধবে না, মনে হয়। এই ন্যায়ের জন্যই তো আদালত এত তদন্ত, এত ধরপাকড়, রাশি রাশি বেহিসাবি টাকা-সম্পত্তি উদ্ধারের নির্দেশ দিচ্ছে। এইটুকু কাজ সরকারের তরফে শিক্ষা দফতর অবিলম্বে করে ফেলতে পারলে অসহায় বহু ছেলেমেয়ে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে। এই কাজ করতে কিসের অভাব? মেধার, সময়ের, না কি সদিচ্ছার?
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
মৃতের শংসাপত্র
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আসেন বহু রোগী। অনেকে রোগের জটিলতায় কলকাতা ও আশেপাশের হাসপাতালে মারা যান। সমস্যা হল, যিনি যে হাসপাতালে মারা গেলেন, সেখানকার কর্পোরেশন বা মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্ভুক্ত কোনও শ্মশানে দাহ কাজ করলে তবেই পাকা ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। মৃত ব্যক্তি যে ঠিকানায় বাস করতেন সেই এলাকার কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি বা পঞ্চায়েত থেকে পাকা ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায় না। এর ফলে হয়রান হতে হয় মৃত ব্যক্তির বাড়ির লোকজনকে। এই ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা মৃত ব্যক্তির লোকাল কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি বা পঞ্চায়েত থেকে কি করা যায় না?
অরুণ কুমার সেন, বালিগঞ্জ, কলকাতা