‘উপেক্ষিত শিল্পী’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১০-৬) শীর্ষক চিঠিটির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি তথ্য। শম্ভু মিত্রের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর শতবর্ষ পর্যন্ত তাঁকে নানা ভাবে স্মরণ করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পরেই দেশ পত্রিকা প্রকাশ করেছিল ‘শম্ভু মিত্র স্মরণ সংখ্যা’, যাতে ‘তর্পণ’ শীর্ষক একটি অসাধারণ লেখা লিখেছিলেন শাঁওলি মিত্র। দেশ-এর পাতায় একটি মূল্যবান লেখা লেখেন শেখর সমাদ্দার। রথীন চক্রবর্তীর নাট্যচিন্তা প্রকাশ করেছিল বিশেষ শম্ভু মিত্র সংখ্যা। কলকাতা পুরশ্রী ও পশ্চিমবঙ্গ প্রকাশ করেছিল তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা। বহুরূপী পত্রিকার ১০২ ও ১০৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘রক্তকরবী বিশেষ প্রযোজনা সংখ্যা’।
তাঁর শতবর্ষের বছর থেকেই নানা উদ্যোগ করা হয়েছে। যেমন— পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির নিজস্ব নাট্য আকাদেমি পত্রিকা প্রকাশ করেছিল শম্ভু মিত্র সংখ্যা, বৃহৎ আকারে। উক্ত সংস্থাই আয়োজন করেছিল নাট্য আকাদেমি সভাগৃহে তাঁকে নিয়ে আলোচনা সভার, যাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁর সময় ও পরবর্তী কালের অনেক নাট্যব্যক্তিত্ব। মনে রাখতে হবে, এই অনুষ্ঠানগুলি হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে। এ ছাড়া তাঁর শতবর্ষের এক বছর আগে হিন্দুস্থান রেকর্ডস প্রকাশ করেছিল শম্ভু মিত্র ও শাঁওলি মিত্রের উপস্থাপনায় তাঁদের আবৃত্তির একটি দুষ্প্রাপ্য রেকর্ড, যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিশির মঞ্চে, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ সালে গান্ধারের প্রযোজনায়। তাঁর জন্মশতবর্ষে বহুরূপী তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল দিল্লির হ্যাবিট্যাট সেন্টারে ‘তোমারে স্মরণ করি রূপকার’ শিরোনামে। উত্তম মঞ্চে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা দিয়েছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ২০১৪ সালে। তা ছাড়া আকাশবাণী কলকাতা ‘ক’ এবং একটি এফ এম চ্যানেল ২০১৪ সালের অগস্টে সপ্তাহব্যাপী সম্প্রচার করেছিল তাঁর প্রযোজিত ও অভিনীত নাটক, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বিসর্জন, রক্তকরবী, স্বীকারোক্তি, বিরাজ বউ, কাক, তাহার নামটি রঞ্জনা প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত, শম্ভু মিত্র আকাশবাণীতে বিভিন্ন সময়ে সে সব সাক্ষাৎকার দিতেন, সেই সব সাক্ষাৎকার নিতেন কুমার রায়, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, মোহিত চট্টোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, শাঁওলি মিত্র প্রমুখ। সেই সব দুর্লভ সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়েছিল ওই দিনগুলোতে প্রতি দিন রাত ন’টায়। তাঁর শতবর্ষে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে শম্ভু মিত্রের রচনাসমগ্র। ১৮ অগস্ট, ২০১৪ সালে ‘কলকাতার কড়চা’য় প্রকাশিত হয়েছিল ‘শতবর্ষে শম্ভু মিত্র’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদন।
এই সব তথ্য থেকে কি প্রমাণ হয় না যে, তিনি মোটেই এক জন উপেক্ষিত শিল্পী ছিলেন না? তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গেই সম্মান দেওয়া হয়েছে।
শৈবাল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-২৬
অকুতোভয়
রুশতী সেন তাঁর ‘আমরা চিনতে চাইনি, চাই না’ (২০-৬) শীর্ষক প্রবন্ধে গৌরকিশোর ঘোষের জন্মশতবর্ষের সূচনা উপলক্ষে লিখেছেন— “গৌরকিশোর ঘোষের সাংবাদিক সত্তাটি অত্যন্ত জোরালো। তার আড়ালে সচরাচর চাপা পড়ে যায় তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রসঙ্গ।” কেবল সাংবাদিক বা সাহিত্যিক নয়, রূপদর্শী-গৌড়ানন্দ কবির কর্মক্ষেত্রের পরিধি ছিল বহুধা বিস্তৃত। প্রেম নেই গ্রন্থের লেখক পরিচিতিতে তাঁর অতীত পেশার পরিচয় দেওয়া হয়েছে— “প্রাইভেট টিউটর, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, ফিটার। এ-আর-পি রেস্কিউ সার্ভিসের খালাসী, রেস্তোরাঁয় বয়, কাঠের কনট্রাক্টার, রোড সরকার, বিমান জাহাজের ফিটার, ট্রেড্ ইউনিয়ন অর্গানাইজার, রেশন দোকানের কেরানী, ইস্কুল মাস্টার, ওষুধ কোম্পানীর এজেন্ট, কার্ডবোর্ড ও বীমা কোম্পানির দালাল, বালতির কারখানার এজেন্ট, ভ্রাম্যমাণ নৃত্য সম্প্রদায়ের ম্যানেজার, ল্যান্ডকাস্টমস্ ক্লিয়ারিং কেরানী, প্রুফ রিডার সর্বোপরি মোসাহেব।” বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে তাই সহজেই তাঁর গড়ে উঠেছিল নিবিড় সখ্য।
সেই পরিচয়ই বিধৃত আছে তাঁর নানান কিসিমের লেখাপত্রে। অকুতোভয় মানুষটি জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে জেলে গেছেন। তাঁকে দেখা গেছে ভাগলপুরে দাঙ্গা কবলিতদের ত্রাণকাজে। বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কলকাতার দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় একাই চলে গেছেন খবর সংগ্রহ করতে। ছদ্মনামে তাঁর কৌতুক ও তির্যক ব্যঙ্গমিশ্রিত রম্যরচনাগুলিও শাণিত কলমের মুনশিয়ানার স্বাক্ষর বহন করে। সর্বোপরি, ১৯৬০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র তৎকালীন সম্পাদক অশোক কুমার সরকারের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালির যে প্রথম সফল পর্বত অভিযান হয়েছিল, গৌরকিশোর ঘোষ ছিলেন সেই দলের অন্যতম সদস্য। কয়েক জন ছাপোষা চাকরিজীবী মানুষ পেরেছিলেন দুর্গম নন্দাঘুণ্টির শিখরে পৌঁছতে। নন্দকান্ত নন্দাঘুণ্টি বইতে সেই অভিযানের বিবরণ তিনি লিখে রেখেছেন। আজকের সময়ে যখন নানান অজুহাতে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, তখন গৌরকিশোর ঘোষের মতো ঋজু মানুষের অভাব বাঙালি বড় বেশি অনুভব করছে।
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
বিভ্রান্তিকর
‘মোনালের রূপকথা’ (পত্রিকা, ২৫-৬) শীর্ষক ভ্রমণকাহিনিতে সন্দীপ সরকার লিখেছেন “...হিমাচলের কোনও এক কোণে ছোট্ট ঘরে শুয়ে আছি। মাথার পিছনে হিমালয়। এই ভোররাতে আমরা হাঁটা শুরু করব তুঙ্গনাথ থেকে চন্দ্রশিলা পিক এর উদ্দেশে।” এর পরে উনি লিখেছেন “হিমাচলের এই পাইনের জঙ্গলে আসার পিছনে উদ্দেশ্য দুটো। তুঙ্গনাথ আর চন্দ্রশিলার জলছবির দৃশ্য...।” তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশিলা দুটোই উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের অন্তর্গত। সারি গ্রাম, দেওরিয়াতাল-সহ যে ভ্রমণপথের বর্ণনা উনি দিয়েছেন, সেটিও উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ে। সেখানে উনি হিমাচল কোথায় পেলেন, বুঝলাম না। এই রকম বর্ণনা বিভ্রান্তিকর।
গৌতম চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৭
প্রবীণদের জন্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০২ সালে প্রবীণ নির্যাতনের সংজ্ঞায় জানিয়েছে “আস্থাশীল সম্পর্কিত মানুষের এক বা উপর্যুপরি অনভিপ্রেত ক্রিয়াকলাপ যা বয়স্ক মানুষের অনিষ্ট ও সন্তাপের কারণ, তাই প্রবীণ নির্যাতন হিসেবে গণ্য।” ২০০৬ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর দ্য প্রিভেনশন অব এল্ডার অ্যাবিউজ়’ ১৫ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব প্রবীণ নির্যাতন সচেতনতা দিবস’ ঘোষণা করে। হু জানাচ্ছে, এখনও বিশ্বে প্রতি ছয় জনে এক জন প্রবীণ নির্যাতিত হন। বহু দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে নির্যাতিতের সংখ্যা বাড়বে।
এই বছর ১৪ জুন, প্রবীণ নির্যাতন সচেতনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রায় গোটা দেশের প্রবীণ ও তাঁদের পরিচর্যাকারীদের নিয়ে সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল এক অসরকারি সংস্থা, দিল্লিতে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের সচিব। বক্তৃতায় তিনি সংস্থাটিকে প্রবীণ কল্যাণে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন এবং প্রবীণদের নিয়ে আর একটি নীতি সরকারি ভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে বলে জানান। সমীক্ষায় যে কয়েকটি বিষয়ে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রবীণদের পরনির্ভরতা অন্যতম। ৭০ শতাংশ প্রবীণ দৈনন্দিন ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবার ও পেনশনের মুখাপেক্ষী, এবং প্রবীণারা ১৮.৪ শতাংশ বাদে বাকিরা হয় সম্পূর্ণ, নয় আংশিক ভাবে পরনির্ভরশীল। এই প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে অথবা সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ডিজিটাল পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য বিমায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে, শুধু আইনের রক্ষাকবচ দিয়ে দায় সারা যায় না। সচেতনতা প্রসার ও কঠোরতম আইনের পাশাপাশি সামাজিক আন্তরিকতা ও আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দিকেও সরকারি উদ্যোগ করতে হবে।
অতীশ ঘোষ, মুখ্য প্রচারক, সিনিয়র সিটিজ়েন ফোরাম, হুগলি