রামায়ণ গান।
‘আগেই ছিল’ (১৮-৭) শীর্ষক পত্রটি ছোটবেলার স্মৃতি উস্কে দিল। আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে রাঢ় বাংলার, বিশেষ করে বীরভূম-মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক গ্রামে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রামায়ণ গান পরিবেশিত হত। মূল গায়েন ও দোহার মিলে চার-পাঁচ জনের এই গানের দল, মূলত হারমোনিয়াম, করতাল, খোল সহযোগে রামায়ণ গান গাইত। শ্রীরামচন্দ্রের জন্ম, বিবাহ, বনবাস, সীতাহরণ পালা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, আবার লক্ষ্মণের শক্তিশেল, বিভীষণপুত্র তরণীসেন বধ, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, সীতার বনবাস— এ সব পালা ছিল অত্যন্ত করুণরসার্দ্র, যা শ্রবণে বহু শ্রোতা অশ্রুসংবরণ করতে পারতেন না।
কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ বা ‘শ্রীরাম পাঁচালী’ থেকে রামায়ণ গানের এই পালা গ্রহণ করা হত। ‘অদ্ভুত রামায়ণ’ থেকেও কয়েকটি পালা গাওয়া হত। যেমন শতস্কন্ধ রাবণ বধ। দশ নয়, সে রাবণের মাথার সংখ্যা একশো। শক্তিরূপিণী স্বয়ং সীতাদেবীর হাতে তিনি হত হন। দর্শন, তত্ত্বকথা নয়, সহজ কথা, মর্মস্পর্শী সুরই ছিল এ গানের সম্পদ।
সেই সময় রামচন্দ্রকে নিয়ে রাজনীতি ছিল না। রামজন্মভূমি আন্দোলনের আঁচও এসে পড়েনি শান্ত গ্রামবাংলার অনাড়ম্বর জীবনে। অধিকাংশ মানুষ খবরই রাখতেন না, কোথায় উত্তরপ্রদেশ, কোথায় ‘অযোধ্যা’ নগরী, কোথায় প্রবাহিত সরযূ নদী। আসলে পুত্রশোকাতুর রাজা দশরথ, নবদূর্বাদলশ্যাম শ্রীরামচন্দ্র, জনকনন্দিনী ‘জনম দুঃখিনী’ সীতাদেবী, ভরত, লক্ষ্মণের সঙ্গে সাধারণ মানুষ এতটাই একাত্ম ছিলেন, তাঁদের ভাবনার জগতে এ সব স্থানই পেত না। এ সব চরিত্র, কাহিনি বাংলার নিজস্ব নয়, উত্তর ভারত থেকে আমদানিকৃত।
কাশ্মীর ও অমর্ত্য
‘কাশ্মীর নিয়ে সরব অমর্ত্যও’ (২০-৮) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই পত্র। নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাশ্মীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। তা তিনি করতেই পারেন, সে গণতান্ত্রিক অধিকার তাঁর রয়েছে। সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে তাঁর সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করার। তিনি বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে কাশ্মীরে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’’ কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু সঠিক অর্থেই গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপি এবং তার পূর্বসূরি ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বলে আসছে, তারা ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার বিরোধী এবং ক্ষমতায় এলে এই ধারাগুলি বাতিল করবে। এ ব্যাপারে তারা কখনওই লুকোছাপা করেনি। এ সব সত্ত্বেও সমস্ত ভারতের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ— জম্মু, লাদাখ ও উপত্যকার কাশ্মীরি পণ্ডিতগণ ধারাবাহিক ভাবে দ্বিতীয় বার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বিপুল ভাবে জয়ী করেছেন এবং গত বিধানসভা নির্বাচনেও জম্মুতে বিজেপিকে জয়ী করেছেন। সুতরাং গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে নয়, গণতন্ত্রকে যথার্থ মর্যাদা দিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা যেটি সংবিধানের একটি অস্থায়ী এবং প্রক্ষিপ্ত ধারা, তা বাতিল করেছে। এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা দু’টি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, পরন্তু রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করা হয়েছিল যা ৩৬৮ ধারা অনুযায়ী অবৈধ। সুতরাং ধারা দু’টি বাতিল করার জন্য সমস্ত ভারতবাসীর সঙ্গে অমর্ত্যবাবুরও গর্ববোধ করা উচিত ভারতীয় হিসেবে।
আর যখন কয়েক লক্ষ মূল কাশ্মীরের বাসিন্দা, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের, উপত্যকার উগ্রপন্থী জঙ্গিরা বাস্তুচ্যুত করেছিল এবং তাঁদের বাধ্য করেছিল মনুষ্যেতর জীবনযাপনে, তখন কিন্তু কাউকে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে শুনিনি। আর কিছু কাশ্মীরি নেতা যাঁরা কাশ্মীরকে নিজেদের জায়গির ভেবেছিলেন তাঁদের জন্য অশ্রুপাত করে আর বিশেষ লাভ নেই।
বিনয়ভূষণ দাশ
বোরিভলি (ওয়েস্ট), মুম্বই
সমৃদ্ধ করবে
‘শিক্ষকদের আন্দোলনে কী শিখবে ছোটরা: মমতা’ (২০-৮) শীর্ষকে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই যে পার্শ্বশিক্ষকদের আন্দোলনের সাপেক্ষে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে পুরোপুরি ভাবে সমর্থন করা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ে পার্শ্বশিক্ষকদের সপ্তাহে কমপক্ষে ষোলোটি ক্লাস নিতে হয়। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে তাঁদের অতিরিক্ত আরও তিন-চারটি ক্লাস করতে হয়। যেখানে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও হয়তো সপ্তাহে সমসংখ্যক ক্লাসে যেতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রভিশনাল ক্লাসগুলির অধিকাংশই পার্শ্বশিক্ষকদের করতে হয়। আর্থিক দিক ও কৌলীন্যের দিক থেকে তাঁরা পিছিয়ে আছেন বলে বিদ্যালয়-প্রশাসন ও সহকর্মীরা তাঁদের প্রতি উন্নাসিক থাকেন। দুর্বল বলে তাঁদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করানোর মানসিকতাও কোনও কোনও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে দেখা যায়। অনেক বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আবার ভালবেসে এঁদের দিয়ে নিজের ক্লাসটি করিয়ে নিতে দেখা যায়। তা ছাড়া এক জন এমএ, এম এসসি, বি এড পাশ করে মাত্র দশ হাজার টাকা মাস-মাইনে! একই কাজ করে এক জন পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মাইনে পান। এই কথা সত্য যে পার্শ্বশিক্ষক-শিক্ষিকারা পূর্ণ সময়ের শিক্ষা দান করার স্বীকৃতি পাননি। তাই বলে যোগ্যতা তাঁদের অনেক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। প্রশাসন যদি বা তাঁদের বেতন বৃদ্ধি করতে না পারে একটু নরম সুরে আশ্বাস তো দিতে পারে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে লাভ কী!
শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমাজ গড়ার কারিগর এ কথা ঠিক। তাঁদের আচার আচরণ ছাত্র-ছাত্রীদের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকে দেখে আগামী প্রজন্ম আন্দোলনের রূপরেখা সম্পর্কে জানতে পারবে। নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ের অধিকার সকলেরই আছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য পার্শ্বশিক্ষকরা পথে নেমে অপরাধ কিছু করেননি বলে আমার মনে হয়। আর এই আন্দোলন ছাত্র-ছাত্রীদের যে সমৃদ্ধ করবে এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
তাঁরা যেন কেমন
‘পুলিশের লাঠি চলল বৃত্তিশিক্ষক আন্দোলনে’ (২২-৮) প্রকাশিত সংবাদে পড়লাম মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকেরা আন্দোলন করলে ছোটরা কী শিখবে? ছোটরা ভাববে, শিক্ষকমশাইরা বড় অভাবে আছেন কষ্টে আছেন, তাঁদের দয়ার উদ্রেক হবে মানবিকতার বোধ জাগবে। এখন তো মিড-ডে মিলের কল্যাণে টিফিনের পয়সা নেই যে বাঁচিয়ে শিক্ষকমশাইদের দান করবে, তবে বাবা মা’র ব্যবহৃত জামাকাপড় চেয়ে এনে তাঁদের ধর্না মঞ্চে দান করে অনেকে নিজস্বী তুলে দূরভাষ মারফত ছড়িয়ে দেবে। ক্যাপশন দেবে আমাদের শিক্ষকমশাইদের যাঁরা অভিভাবক তাঁরা যেন কেমন!
আশিস সরকার
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
অভিযোগ
‘গগৈয়ের হাত থেকে পুরস্কার নিলেন না কৃতী ছাত্রী’ (২০-৮) পড়ে এই চিঠি। আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর প্রতিবাদ তাঁর ব্যক্তিগত অভিপ্রায়। কিন্তু তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, আর জানেন না, কোনও অভিযোগের সত্যতা অবশ্যই প্রমাণসাপেক্ষ? কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে মানে এই নয় যে, সে সত্যিই অপরাধী। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে এই ছাত্রী যখন পেশাদারি ভাবে যুক্ত হবেন, বুঝতে পারবেন, যত অভিযোগ হয়, তার অনেকগুলিই মিথ্যা। অভিযুক্ত সত্যিই অপরাধী কি না, তা আদালতের বিচার্য বিষয়। আদালতের উপর যদি ভরসা না থাকে, আইন পড়ার মানে কী?
সমীর ভট্টাচার্য
কালীনারায়ণপুর, নদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।