অচিন চক্রবর্তীর ‘রাখো রাখো রে জীবনে’ (সপ্তক ক্রোড়পত্র, ২২-১) যে-বিভ্রম সৃষ্টি করেছে, তা সূক্ষ্ম ভাবে সেই আদি-অকৃত্রিম বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা। সুরে, তালে, লয়ে, স্বরলিপির মান বজায় রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেই এক শ্রেণির সমালোচক তার মধ্যে একঘেয়েমি খুঁজে পান। আর প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, রবীন্দ্রনাথ এ ভাবে গাইতে বলেননি কোথাও। এঁরাই আবার যথার্থ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান শুনে আহা-উহু করেন। ‘সায়গল থেকে আশা ভোঁসলে’ প্রমুখ শিল্পীদের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কিছু বললেই ক্ষিপ্ত হন। ভাবটা এমন, কথা উল্টোপাল্টা হলেও যদি যথার্থ ভাব দিয়ে, দরদ দিয়ে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া হয়, ক্ষতি কী?
শান্তিদেব ঘোষ তাঁর ‘সুরধর্মী কবিতা ও গান’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের উক্তি দিয়েছেন। ‘‘গান লিখি, তাতে সুর বসিয়ে গান গাই এটুকুই আমার আশু দরকার। আমার আর কবিত্বের দিন নেই। পূর্বেই বলেছি, ফুল চিরদিন ফোটে না— যদি ফুটত তো ফুটতই, তাগিদের কোন দরকার হত না। এখন যা গান লিখি তা ভাল কি মন্দ ভাববার সময় নেই। যদি বল তবে ছাপাই কেন তার কারণ হচ্ছে, ওগুলি আমার একান্তই অন্তরের কথা, অতএব কারও না কারও অন্তরের প্রয়োজন মিটতে পারে— ও গান যার গাওয়ার দরকার সে একদিন গেয়ে ফেলে দিলেও ক্ষতি নেই, কেননা আমার যা দরকার তা হয়েছে। যিনি গোপনে অপূর্ব প্রয়াসের পূর্ণতা সাধনা করে দেন তাঁরই পাদপীঠের তলায় এগুলি যদি বিছিয়ে দিতে পারি, এ জন্মের মতো তা হলেই আমার বকশিশ মিলে গেল।’’
এখানেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের সফলতা। তাঁর কম বেশি আড়াই হাজার গানের মধ্যে যে কোনও একটি গান ধরে, পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কেউ পরিবেশন করতে পারেন। যিনি অকবি, গানের কথার ধার ধারেন না, তাঁর কাছে ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে...’ এবং ‘জীবনে কি পাব না...’-র খুব একটা ফারাক নেই। শুদ্ধবাদীদের এক হাত নেওয়ার জন্য তো কত কিছু হল। হালের এক শ্রীরায় যখন তাঁর ‘কাব্যের হাত ধরে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের পিণ্ডি চটকাচ্ছেন, তখন বোধ হয়, ‘বাপিরা আগ্রহ নিয়ে’ শোনে, আর ‘অনিল কাকারা’ নাক-মুখ-চোখ বাঁকান?
তরুণ মজুমদার রবীন্দ্রসঙ্গীতকে যে ভাবে বাণিজ্যের স্তরে, আমজনতার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তা শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে শোধ করার নয়। ‘দাদার কীর্তি’ মুক্তি পাওয়ার পর ‘চরণ ধরিতে’ যে হারে পাড়ার ফাংশন থেকে বিভিন্ন কণ্ঠী-কণ্ঠদের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে পাবলিক খেল, তাতে মনে হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ যেন প্রথম গানটা লিখলেন। মনে আছে, এক জন মফস্সলের বুক-স্টল মালিক বলেছিলেন, ‘‘ভাই, চল্লিশ নম্বর স্বরবিতান সাপ্লাই করতে করতে বড়লোক হয়ে গেলাম।’’ কিন্তু, তাই বলে রবীন্দ্রভারতীর ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রসঙ্গীতে ‘সুর ও বাণীর আশ্চর্য মেলবন্ধন’ নিয়ে দিস্তে দিস্তে মুখস্থ করলে দোষটা কোথায়? জানার জন্য যদি মুখস্থ করতেই হয়, সেটা হেয় করবার বিষয়? যাঁরা যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছেন, তাঁরা সবাই কি শুধু স্বরলিপি পাঠ করেন? বিশ্বভারতীর কপিরাইট চলে যাওয়ার অর্থ কি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে যথেচ্ছাচার করা?
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী
কলকাতা-১২৫
মুফতি
‘লজ্জাজনক’ (২৩-১) শীর্ষক সম্পাদকীয় বিষয়ে এই চিঠি। মুফতি মহম্মদ সইদ, নেহরুর সময় থেকেই কংগ্রেসের হয়ে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার সদস্য ছিলেন। রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রবীণতম নেতা হিসেবে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আশা পোষণ করেন। কিন্তু, রাজীব সেটা চাইতেন না। রাজীব সরকার ১৯৮৬ সালে বাবরি মসজিদ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, জম্মু ও কাশ্মীর প্রধানত শান্ত থাকলেও, একমাত্র মুফতির এলাকা অনন্তনাগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। অভিযোগের তির মুফতির দিকে যায় যে, তিনি প্ররোচনা দিয়েছিলেন। অনেক মন্দির এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বাসস্থান ভেঙে ফেলা হয়। সেই প্রথম পণ্ডিতেরা আক্রান্ত হন। এই ঘটনা সংঘটিত করার উদ্দেশ্য ছিল রাজীব গাঁধীর হাতে মুখ্যমন্ত্রী জি এম শাহকে (যাঁর উপর রাজীব সন্তুষ্ট ছিলেন না) পদচ্যুত করার ‘অজুহাত’ তুলে দেওয়া। রাজীব জি এম শাহকে বরখাস্ত করলেও, মুফতিকে রাজ্যসভার সদস্য করে দিল্লিতে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য করেন।
১৯৮৬ সালের শেষাশেষি রাজীব ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে চুক্তি করেন এবং তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসান। ১৯৮৭ সালে নির্বাচন ঘোষণা হলে, মুফতিকে কাশ্মীরে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু, মুফতি জনসভায় নিজের পকেট থেকে কলম বার করে এবং দোয়াতের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘আপনারা তো সবাই জানেন কাকে ভোট দেবেন।’’ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী বিরুদ্ধ জোট ‘মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট’-এর নির্বাচনী প্রতীক ছিল দোয়াত-কলম। সভায় অংশগ্রহণকারী কংগ্রেসের নাজমা হেপতুল্লা মুফতির আচরণে বিস্মিত হন।
১৯৮৭ সালের নির্বাচনের পর মুফতি কংগ্রেস দল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৯৯ সালে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে পিডিপি-বিজেপি জোট জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতায় আসে। নির্বাচনী ‘ভিশন ডকুমেন্ট’-এ বিজেপি বলেছিল বিধানসভাতে তিনটি আসন পণ্ডিতদের জন্য ছেড়ে দেবে। দেয়নি। জোটের প্রতিশ্রুতি মতো মন্ত্রিসভায় পণ্ডিতদের কোনও আসন দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনার পরে, মুখ্যমন্ত্রী মুফতি বাস্তুচ্যুত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য স্বয়ং-সম্পূর্ণ উপনগরী গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু, এর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বিরোধী দল সরব হলে, মুফতি বলেন, পণ্ডিতদের জন্য পৃথক ‘হোমল্যান্ড’ নিয়ে রাজ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পণ্ডিতেরা ফিরে আসুন তা তিনি চান, কিন্তু আলাদা উপনগরী সম্ভব নয়। আর বিজেপি স্বয়ং-সম্পূর্ণ উপনগরীর ব্যাপারে অনড় থাকে। বিজেপি এবং পিডিপি’র মধ্যে বিবাদের জেরেই পণ্ডিতদের আর ফিরে আসা হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন নিয়ে বিধানসভায় যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন বিরোধী ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা।
মুফতি কাশ্মীর-রাজনীতিতে দ্বিচারিতা করে গিয়েছেন। আগেও তিন বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সুতরাং, তাঁর কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের পক্ষে মতপ্রকাশ শুধুমাত্র জোট-সরকারের প্রতি দায়পালন ছিল কি না এবং পণ্ডিতদের প্রতি নিবন্ধে উদ্ধৃত তাঁর বক্তব্য কতটা আন্তরিক ছিল, তা পরিষ্কার নয়।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
চিতচোর
সুবোধ ঘোষকে নিয়ে ‘তিনি এলেন, দিলেন, জয় করলেন’ (পত্রিকা, ২৫-১) নিবন্ধে লেখা হয়েছে ‘‘এর মধ্যে ‘সেদিন চৈত্রমাস’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘চিতচোর’।’’
সুবোধ ঘোষের মূল গল্পটির নাম ‘চিত্তচকোর’। ১৯৭৬ সালে বাসু চট্টোপাধ্যায় হিন্দিতে এই কাহিনি অবলম্বনে ছবি করেন ‘চিতচোর’। এর পর ১৯৯৭ সালে একই কাহিনি অবলম্বনে প্রভাত রায় তৈরি করেন ছবি ‘সেদিন চৈত্রমাস’।
ভাস্কর বসু
রাজরাজেশ্বরীনগর, বেঙ্গালুরু
দস্যু মোহন
‘দ্বিতীয় পুরুষ’ ছবির সমালোচনার ‘কী হইতে কী হইয়া গেল’ (আনন্দ প্লাস, ২৪-১) শিরোনাম বিষয়ে বলি, এটি স্বপনকুমারের গোয়েন্দা কাহিনি প্রসঙ্গে নয়, শশধর দত্ত রচিত দস্যু মোহন-এর কাহিনি প্রসঙ্গে বলা হয়। গল্পগুলির যুক্তিহীনতাকে ব্যঙ্গ করে অনেকে এটি বলেন। যদিও উক্তিটির রচয়িতা শশধর দত্ত স্বয়ং। তিনিই বেশ কিছু গল্পে উক্তিটি করেছেন।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।