—প্রতীকী চিত্র।
আলু ও টোম্যাটোর দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় অক্টোবরে দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে নিরামিষ ও আমিষ থালি তৈরির খরচ খানিকটা কমেছিল। কিছুটা সুরাহা হয়েছিল ১৪.২ কেজির রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা কমার ফলেও। কিন্তু নভেম্বরে পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দুই থালির খরচ ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল এমআইঅ্যান্ডবি রিসার্চের রিপোর্টে উঠে এল এমনই তথ্য।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চাল, ডাল, মাছ-মাংস, আনাজ, মশলা, ভোজ্য তেল, রান্নার গ্যাস-সহ বিভিন্ন কাঁচামালের দামের ভিত্তিতে খাবারের থালির খরচের হিসাব কষা হয়। বস্তুত, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির ‘বাজেট’-এর হেরফেরও হয় এই সমস্ত খাদ্যপণ্যের দামের নিরিখে। তাদের পকেটে টান পড়া অর্থনীতির পক্ষে ভাল খবর নয়। তাঁদের আরও বক্তব্য, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা উৎসবের মরসুমের বিক্রিবাটার উপরে অনেকাংশেই নির্ভর করে অর্থনীতি। বহু ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীর সারা বছরের রোজগারও। খাবারদাবারের দাম বাড়ায় যদি মধ্যবিত্তকে অন্যান্য শখের খরচে কাটছাঁট করতে হয়, তা হলে ওই সমস্ত ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ঘটনাচক্রে বুধবারই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। তার আগে এমন রিপোর্ট কিছুটা অস্বস্তির।
ক্রিসিলের দাবি, উৎসবের মরসুমে অন্যান্য জিনিসের মতো খাদ্যপণ্য ও আনাজের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু অনিয়মিত বর্ষার ফলে খরিফ মরসুমের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে সরবরাহ। মূলত তার জেরেই অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম যথাক্রমে ৫৮% এবং ৩৫% মাথা তুলেছে। তার প্রভাব পড়েছে খাবারের খরচেও। গত মাসে বাড়িতে নিরামিষ এবং আমিষ থালি রান্নার খরচ যথাক্রমে ১০% ও ৫% বেড়েছে। মূল্যায়ন সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, নভেম্বরে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম আগের মাসের তুলনায় ১%-৩% কমেছিল। আনাজ থালির প্রায় ৫০% খরচ হয় এই খাতে। ফলে নিরামিষের চেয়ে আমিষ থালির খরচ কিছুটা হলেও কম বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, নিরামিষ রান্নার খরচ বেড়েছে আগের বছরের চেয়েও। ২০২২ সালের অক্টোবরের তুলনায় গত মাসে পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম যথাক্রমে ৯৩% এবং ১৫% বৃদ্ধির ফলে থালির খরচ বেড়েছে প্রায় ৯%। বছরের নিরিখে ডালের দাম প্রায় ২১% বেড়েছে। তারপ্রভাব পড়েছে রান্নায়। কারণ, নিরামিষ রান্নায় ডালের অনুপাত প্রায় ৯%।
আনাজপাতির দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার গত কয়েক মাস ধরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একটা সময়ে টোম্যাটোর মতো অত্যাবশ্যক আনাজের কেজি ২০০ টাকা পার করেছিল। বেগুন পৌঁছেছিল ১০০ টাকার কাছে। মাঝে কিছুটা কমলেও ফের সেগুলি বাড়তে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অক্টোবরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.৮৭ শতাংশে নামলেও আনাজের দাম উল্লেখযোগ্য রকম কমেছিল এমন নয়। সংখ্যার নিরিখে এই পরিসংখ্যানকে যেমনই দেখাক না কেন, সাধারণ মানুষের জীবনে যে পুরোপুরি সুরাহা হয়নি, তা জানে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। মূল্যবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নামলেও, সে কারণে এখনও তাকে নিয়ন্ত্রণ রাখাকেই পাখির চোখ হিসেবে দেখতে চাইছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
দামে উদ্বেগ
· অক্টোবরে নিরামিষ-আমিষ থালি রান্নার খরচ কমেছিল। কিন্তু নভেম্বরে তা ফের চড়ল যথাক্রমে ১০% ও ৫%।
· পেঁয়াজের দাম অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ৫৮% বেড়েছে। টোম্যাটো বেড়েছে ৩৫%। তার প্রভাব পড়েছে খাবার তৈরির খরচে।
· ব্রয়লার মাংসের দাম কমায় আমিষ থালির খরচ বেড়েছে নিরামিষের তুলনায় কম।
· উৎসবের মরসুমের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু খরিফ মরসুমে অনিয়মিত বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষ। বিঘ্নিত হয়েছে সরবরাহ। তার জেরে আনাজের দাম বেড়েছে।
· নভেম্বরে নিরামিষ থালির খরচ বেড়েছে (৯%) আগের বছরের থেকেও। প্রধান কারণ পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম বৃদ্ধি।