পিএফের পুরো সুদ শেষ পর্যন্ত মিলবে তো? উঠছে প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত।
কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) গত অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) সুদ ৮.৫০ শতাংশই থাকছে বলে বুধবার অছি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে হার ঠিক হয়েছিল পরিষদের গত মার্চের বৈঠকে। তবে কার্যকর করা যায়নি অর্থ মন্ত্রকের অনুমোদন না-মেলায়। যদিও সেই এপ্রিল থেকে সুদের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকা পিএফের কোটি কোটি সদস্য এ বার সোজাসুজি ৮.৫০% সুদ পেয়ে যাবেন ভাবলে ভুল হবে। কারণ, সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন ৮.১৫% পাবেন তাঁরা। ডিসেম্বরে বাকি ০.৩৫%।
কর্মী প্রতিনিধিরা বলছেন, সুদ ৮.৫০% থেকে না-কমিয়ে দু’ভাগে দেওয়ার বিষয়টি বর্তমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সরাসরি সুদের একাংশকে শেয়ার বাজারের উপর নির্ভরশীল করে দেওয়া মানা অসম্ভব। কারণ, অছি পরিষদের চেয়ারম্যান ও বৈঠকের সভাপতি শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার বলেছেন, ৮.১৫% দেওয়া হবে পিএফ তহবিলের ঋণপত্রে লগ্নির আয় থেকে। কিন্তু ০.৩৫% শেয়ার বাজারে ইটিএফে তহবিলের যে অংশ খাটে, তার রিটার্ন থেকে। ফলে প্রশ্ন থাকছেই, তা হলে পুরো সুদ শেষ পর্যন্ত মিলবে তো? একে পিএফ সদস্যদের প্রতি অবিচার বলেও তোপ দেগেছেন কর্মী ইউনিয়নগুলি।
এআইইউটিইউসির সভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, “সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প পিএফ। আমরা প্রথম থেকেই তার টাকায় শেয়ার বাজারে ফাটকা খেলার বিরোধিতা করছি। এখন শেয়ারে লাভ-ক্ষতির উপরে এর সুদকে নির্ভরশীল করে দেওয়া হল। এই অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “যদি চূড়ান্ত অনিশ্চিত শেয়ার বাজারে ডিসেম্বরে ইটিএফ থেকে পিএফ লোকসান করে, তা হলেও ওই ০.৩৫% সুদ পাবেন কি সকলে?”
দু’দফায় সুদ
• ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে গ্রাহকদের ৮.৫% হারে সুদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ইপিএফের অছি পরিষদ।
• প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রকের সম্মতির অপেক্ষায়।
• আপাতত ৮.১৫% সুদ জমা পড়বে ছ’কোটি গ্রাহকের তহবিলে।
• বুধবার ইপিএফও-র অছি পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
• ডিসেম্বরে বাকি ০.৩৫% সুদ দেওয়া হতে পারে।
সমস্যা কোথায়
• ৮.৫% সুদ মেটানোর ক্ষেত্রে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণের জন্য এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের বিনিয়োগ ভাঙানোর কথা ভেবেছিল ইপিএফও।
• কিন্তু লকডাউনের সময়ে বাজার পড়ায় তা করা যায়নি।
• বুধবারের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে সুদ মেটানোর বিষয়টি না-থাকলেও, কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়ন প্রশ্ন তোলে, গ্রাহকদের সুদ মেটাতে এত দেরি হচ্ছে কেন।
• তার পরেই গ্রাহকদের প্রাপ্য সুদের একাংশ মেটানোর প্রস্তাব করা হয়।
আশঙ্কা
• সাধারণত অর্থবর্ষের শেষেই গ্রাহকদের সুদ মিটিয়ে দেয় ইপিএফও। এ বার পাঁচ মাস কাটলেও তা জমা পড়েনি।
• কেন্দ্রের ডিএ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রায় দেড় বছর ধরে স্থগিত। আশঙ্কা, কম আয়ের অজুহাতে এ বার পিএফের সুদও ছাঁটা হবে না তো!
• ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রশ্ন, এই সুযোগে ইপিএফের সুদকে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের রিটার্নের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না তো?
অছি পরিষদের শ্রমিক প্রতিনিধি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, “জানতে চেয়েছিলাম ২০১৯-২০ সালে পিএফ তহবিল লগ্নি করে কত আয় হয়েছে। কারণ, সুদ তার নিরিখেই ঠিক হয়। কিন্তু ওই তথ্য জানানো হয়নি।’’
গঙ্গোয়ার বলেন, বর্তমান আর্থিক অবস্থায় অসুবিধা হলেও ২০১৯-২০ সালের জন্য ৮.৫০% সুদই দেওয়া হবে, কিন্তু দু’ভাগে। তবে শেষ ভাগটির অনিশ্চয়তা নিয়ে কেন্দ্রের মুখে কুলুপ।
পিএফের ডিপোজ়িট লিঙ্কড ইনশিওরেন্স প্রকল্পে যে টাকা সদস্যেরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে তাঁর পরিবার পায়, তার অঙ্ক এ দিন ৬ লক্ষ থেকে বেড়ে ৭ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।