ফাইল চিত্র
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বনাম প্রতিষেধকের দুই ডোজ়ের কবচ। সেই সঙ্গে রোদ আর ভারী বৃষ্টির লুকোচুরি। কিংবা সম্ভাব্য ক্রেতাদের কেনাকাটার ইচ্ছে, অথচ নগদের টান।
এই সমস্ত টানাপড়েনের মধ্যেই গত এক-দেড় মাস ওঠানামা করছিল পুজোর বাজারের পারদ। এ বার তার চোখ শেষ কয়েকটা দিনের বিক্রিবাটার দিকে। যার মধ্যে রয়েছে পুজোর আগের শেষ সপ্তাহান্ত। মাঝে কিছু দিন আশা-আশঙ্কার দুলুনি থাকলেও শেষ দু’জোড়া শনি-রবিবারে যে ভাবে ক্রেতারা রাস্তায় নেমেছেন, তাতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৯ সালের নিরিখে গত বছর অতিমারির মধ্যে ব্যবসা ৪০-৪৫ শতাংশে তুলতেই নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। শেষ ক’দিনের স্লগ ওভারে ভাল রান এলে এ বার তা পৌঁছে যেতে পারে ৭০ শতাংশে। এর ব্যতিক্রমও যে নেই এমন নয়। কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেল, উত্তরের কিছু বাজার এখনও ভাটার টান থেকে পুরোপুরি বার হয়ে আসতে পারেনি।
সপ্তাহের কাজের দিনের দুপুরে গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে পৌঁছে দেখা গেল ফুটপাথে কার্যত পা রাখার জায়গা নেই। বিজ্ঞপ্তির পাতা ছেড়ে রাস্তায় পা রাখার সাহস দেখাচ্ছে না করোনাবিধিও। হকারের চিৎকার, ‘‘সাড়ে তিনশো, সাড়ে চারশো...।’’ সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে নিউ মার্কেটের সামনে পর্যন্ত একই ছবি। এক হকারের কথায়, ‘‘দু’বছর আগের মতো না হলেও বিক্রি খারাপ নয়।’’ নিউ মার্কেটের ভিতরে অবশ্য ছবি কিছুটা আলাদা। রাস্তার ভিড় পার করে জনসমুদ্রের ছোট একটা অংশ সেখানে পা বাড়াচ্ছে। তবুও গত বছরের দুরবস্থাকে অতিক্রম করার আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নিউ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সাহু বলছেন, ‘‘সারা বছর আমরা যা ব্যবসা করি তার ৪০% হয় পুজোর সময়ে। আগে ১৫ অগস্টের পর থেকে মোটামুটি ৬০ দিন পুজোর বাজার ধরতাম আমরা। এখন তা নেমে এসেছে ৪৫ দিনে। তবু গত বছরের থেকে ১৫%-২০% বেশি ব্যবসা হবে মনে হচ্ছে।’’
শনি-রবিবারের গড়িয়াহাটকেও দেখে মনে হচ্ছিল গোটা কলকাতা বুঝি নেমে এসেছে সেখানে। বিভিন্ন দোকান থেকে ফুটপাথ, ব্যস্ততা সর্বত্র। রাজ সিলেকশনের ডিরেক্টর দেবাশিস দে-র কথায়, ‘‘গত বছর ব্যবসা হয়নি। এ বছর মানুষের উৎসাহ রয়েছে। সেই উৎসাহের একটা অংশ অবশ্যই বিক্রিতে পরিণত হচ্ছে। এ বার পুজোর বাজারের ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থার ৭০% পার হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’’ কী ধরনের পোশাকআশাকের বিক্রি বেশি? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ক্রেতাদের ফরমালে আগ্রহ কম, ক্যাজুয়ালে বেশি। হয়তো অফিসে গিয়ে কাজ অনেকটা কমে আসার জন্যই।
উত্তর কলকাতার হাতিবাগান বাজারের পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা আলাদা। হাতিবাগান বাজার রেডিমেড কল্যাণ সমিতির সহ-সম্পাদক সুব্রত সাহা জানাচ্ছেন, একটা সময়ে মূলত উত্তর শহরতলির মানুষ এই বাজারকে জমজমাট করে রাখতেন। পুজোর আগে গোটা পরিবার নিয়ে আসতেন সারা দিনের জন্য। স্থানীয় হোটেলে খাওয়াদাওয়া সারতেন। পরিবার, আত্মীয়স্বজনের জন্য হাত ভরে বাজার করে বাড়ি ফিরতেন। সেই ভিড় এখন ফিকে হয়ে এসেছে। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘করোনা তো অবশ্যই একটা কারণ। সেই সঙ্গে লোকাল ট্রেন, টালা ব্রিজ বন্ধ থাকায় উত্তর শহরতলির সঙ্গে এই অঞ্চলের যোগাযোগ অনেকটাই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া এখন শহরতলিতেও দোকান বেড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এতটা পথ না এসে অনেকেই স্থানীয় দোকানে কেনাকাটা সারছেন। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির সময়েও ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।’’ সব মিলিয়ে পুজোর আগে শেষ কয়েকটা দিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও।
রাজ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মঞ্চ ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন্সের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলের বক্তব্য, নোটবন্দি এবং জিএসটি-র ধাক্কা কিছুটা সামাল দেওয়ার পরে অতিমারি ব্যবসায়ীদের একাংশকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সরকারের উচিত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে ঋণের পথ মসৃণ করা।