প্রতীকী চিত্র
‘আসছে বছর আবার হবে’— ২০১৯ সালে সমবেত কণ্ঠে এই আকাঙ্ক্ষা ও আশ্বাস নিয়ে সমাপ্ত হয়েছিল দশমীর পু়জো। কিন্তু হংকংয়ের বাঙালিদের দু’বছর অপেক্ষা করতে হল সেই ‘আবার হবে’র জন্য। মাঝে একটি বছর অতিমারির বিধিনিষেধের গেরোয় পড়ে ‘ভার্চুয়াল পুজো’ মানে ল্যাপটপের পর্দায় কলকাতার পুজো দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। মন্দ লাগেনি, কিন্তু সকলে মিলে আনন্দোৎসব পালনের সুযোগ সেখানে কোথায়! ২০২১ সালে তাই মনে মনে সকলেই কাতর প্রার্থনা করছিলেন, এ বার অন্তত পুজোটা যেন হয়। অবশ্য হওয়াটা সহজ ছিল না।
অতিমারির তীব্র প্রভাবে জনজীবন এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। জনসমাগম সংক্রান্ত বাধানিষেধ মেনে পুজোয় যাঁরা আসবেন, তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থার সঙ্গে-সঙ্গে শারদোৎসবের নান্দনিকতা বজায় রেখে পুজোর আয়োজন করা সত্যিই এক বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুতমশাই , ঢাকি, রাঁধুনি, এঁরা কেউই আসবেন না এ বার, কারণ ভারত থেকে হংকংয়ে পায়ের ধুলো দিলেই পত্রপাঠ ২১ দিন হোটেলে কোয়রান্টিন-বাস। তবে এ সমস্যার সমাধান-সূত্র অনন্য। এক সহৃদয় সভ্য পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ করবেন, কলকাতা থেকে পুরুতমশাই শক্তিদা অনলাইনে তাঁকে ‘গাইড’ করবেন। ঢাকিরাও অনলাইনে বাজাবেন, অথবা তাদের বাজনার রেকর্ডিং চালানো হবে। এক স্থানীয় সংস্থা রয়েছে ক্যাটারিংয়ের দায়িত্বে। তবে শোনা যাচ্ছে, এক জন প্রতিষ্ঠিত বাঙালি শেফ পুজোর ক’দিন বিশেষ কিছু বাঙালি পদ বানিয়ে উপহার দেবেন আমাদের।
পুজোর দিনগুলিকে সকাল ও সন্ধ্যা এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতি পরিবার যে কোনও দু’টি স্লট অনলাইনে বুক করতে পারবেন। যে কোনও সময়ে সর্বোচ্চ ১৪০ জন প্রবেশ করতে পারবেন প্রাঙ্গণে। দিনে দু’ঘণ্টা নন-মেম্বারদের জন্য প্রাঙ্গণ খোলা হবে। শুধু টিকা নেওয়া ব্যক্তিদেরই পূজা-প্রাঙ্গণে ঢোকার অনুমতি মিলবে। বারো বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। প্রাঙ্গণে ঢোকার আগে সবাই যে যাঁর ফোনে নির্দিষ্ট একটা কিউআর কোড স্ক্যান করবেন, যা একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের গতিবিধির জানান দেবে। এই কয়েকটি শর্ত মেনে নিতে পারলেই এ বছর মায়ের মুখ সামনাসামনি দেখা যাবে।
পুজোর নির্মল আনন্দ লাভের আশায় হংকংয়ের বাঙালিরা এ-টুকু কষ্ট অবশ্য গায়ে মাখছেন না। এ বার পুজোপ্ৰাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করা গেলেও নভেম্বর মাসে বিজয়া সম্মিলনীতে সেই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। আপাতত একটাই কথা সবার মুখে— পুজো হচ্ছে!