এ শহরে শ্রীমানিদের বোলবোলার সূত্রপাত মহেন্দ্র শ্রীমানির হাত ধরে, ১৮৯৮ সালে। সেই সময়ে তাঁরা থাকতেন তারক প্রামাণিক রোডের বসতবাড়িতে। পুজোর শুরু ওই বাড়িতেই।
১৯১১ সালে শ্রীমানিরা সুকিয়া স্ট্রিটের নতুন প্রাসাদোপম বর্তমান ঠিকানায় উঠে আসেন। বাড়ির দালানে স্থানান্তরিত হয় পুজোটিও। মানে সহজ কথায়, এই ঠিকানায় পুজোর বয়স ১১২ বছর।
পরিবারের সবার সঙ্গে সমাজের সব স্তরের মানুষ যাতে পুজোর আনন্দে সামিল হতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই গড়ে তোলেন বিশাল ঠাকুরদালান। পরবর্তীকালে এই অংশটি যায় এক বংশধর গোবিন্দদুলালের অধিকারে। তবে পুজোর বহমানতায় তাতে কোনও ছেদ পড়েনি।
দশমীতে উড়ান দিত নীলকণ্ঠ পাখি। সন্ধিপুজোয় হত কামান দাগা। শুরুতে এবং শেষে। ভোগের ব্যবস্থায় মাসভর ঝাড়াইবাছাই চলত মণ মণ চালের। বাড়ির মহিলারাই ওই দালানে বসে সকাল থেকে সন্ধে সে কাজ সারতেন। পুজোয় বসত ভিয়েন। আমিষের পাট বন্ধ হত দেবীপক্ষের শুরুতেই।
বৈষ্ণব মতে পুজো। তাই পশুবলি নেই। দেবীকে দেওয়া হয় ১২-১৩ রকমের ফল। এই আড়ম্বরের অনেকটাই আজ ফিকে। তবু ওই ফলের সারি থোকা থোকা আজও ঝোলে শ্রীমানিদের বারান্দায়।
সন্ধিপুজোয় দেওয়া হয় ৪০ কেজি চালের নৈবেদ্য। যা অন্নদান হিসেবে চলে যায় রামকৃষ্ণ মিশন বা যোগোদ্যানে। জাঁক কমলেও রীতিরেওয়াজ এ বাড়িতে এখনও বেশ কড়া। বেলুড় মঠের নিয়মেই সারা হয় পুজো। প্রতিমা গড়া হয় দালানেই।
রথের দিন কাঠামো পুজোয় শুরু। মহালয়ায় চক্ষুদান। বোধনের আলাদা ঘরে প্রতিপদ থেকে চলে চণ্ডীপাঠ ও আবাহন। অষ্টমীতে হয় কুমারী আরাধনা। আট বছরের কম বয়সী ব্রাহ্মণকন্যাই এ পুজোর প্রাপক।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, চক্ষুদানের পরে বিসর্জনের আগে বেদি থেকে প্রতিমা নামানো পর্যন্ত পরিবারের কেউ মূর্তি স্পর্শ করেন না। কিছু দিন আগে পর্যন্ত সোনার বিল্বপত্রে বুক চিরে রক্ত দিয়ে কোনও দীক্ষিত পরিবার-সদস্য সংকল্প করতেন।
পুজোর দিনে এক সময়ে রোজ ৫০০ লোকের পাত পড়ত এ বাড়িতে। ভোগের ব্যবস্থায় এখন চার দিনই লুচি ও পাঁচ ভাজা। পুজোর ক'দিন দালানের হোমকুণ্ডে জ্বলে পবিত্র আগুন।
আগে ছিল না সিঁদুরখেলা। যদিও যুগের তালে বদলেছে সাবেক রীতি। আয়না দেখে বিসর্জনের পর বারবেলা কাটিয়ে প্রতিমা নামানো হয় আলপনা-শোভিত উঠোনে। বরণের সঙ্গেই মিশে যায় সিঁদুরখেলার অনুষঙ্গ।