Srikanto Acharya's Puja Release

এ রাজ্যের বাঙালিরা একটু ঘেঁটে যাওয়া, চচ্চড়ি টাইপ: শ্রীকান্ত আচার্য

কেন এ কথা বললেন তিনি? মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে গানের শ্রোতা নিয়ে খোলামেলা কথায় শ্রীকান্ত আচার্ষ। সামনে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২৩
Share:

এ বারের মতো দুর্গাপুজো শেষ। তবু, আপনি গানের মানুষ বলে একটা প্রশ্ন খুব মনে উঠে আসছে!

Advertisement

আরে, বলুন না!

ধরা যাক, আপনি পুরনো জমানায় ফিরে গিয়েছেন। শারদ অর্ঘ্য বেরোচ্ছে। আপনি পুজোর গান বাঁধছেন বা লিখছেন। কেমন হবে সেই গান?

Advertisement

যদি সত্তরের দশকে ফিরে যাই, কারণ পুরনো গানের স্মৃতি তো আমার কাছে সত্তরের দশক থেকেই, তা হলে মনে পড়বে একটি গান.... ‘‘ক' ফোটা চোখের জল/ ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে/পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝরালে/ কী করে এখানে তুমি আসবে’’। মান্নাদার গান! কালজয়ী। এই রকম একখানি গান লিখে, সুর দিতে পারলে ধন্য হতাম।

আপনি মান্না দে'কে কি ‘দাদা’ বলে ডাকতেন?

হ্যাঁ। উনি আমার পিতৃসম। তবু দাদা বলেই ডাকতাম। দু’-এক বারই ওঁর কাছে গিয়ে প্রণাম ও গল্প করতে পেরেছি। গানবাজনা নিয়েই গল্প। গানে ডুবে থাকতেন তো! আমার মনে আছে, দুর্গাপুরে একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমি গান করলাম। তার পর ইন্দ্রাণী সেন। তার পর মান্নাদা। এবং সব শেষে ছিলেন হৈমন্তী শুক্ল। আমি আর মান্নাদা একই হোটেলে পাশাপাশি ঘরে ছিলাম। এবং সে দিন রাত্রি সাড়ে আটটার সময় ওঁর মঞ্চে ওঠার কথা। কিন্তু উনি বিকেল চারটে থেকে রেওয়াজ শুরু করলেন। সেই প্রথম দেখলাম, একটি অনুষ্ঠানে গান করতে যাবার আগে একজন শিল্পী নিজেকে কী রকম একনিষ্ঠ ভাবে প্রস্তুত করছেন। আমি পরে বুঝেছিলাম কেন এঁরা শ্রেষ্ঠ।

গানের কথা উঠলেই আপনি পুরনো দিনের গানে ফিরে যান। লোকে যদি বলে আপনি পুরনো গান বেশি কচলান, কী প্রতিক্রিয়া হবে?

নিঃসন্দেহে আমার ভাল লাগবে না। কেন ভাল লাগবে না তারও যুক্তি আছে। পুরনো গান লোকে শুনছে তো! কোন লাইনের এ পাশে গেলে, নতুন গান? আর কোন লাইনের ও পাশে গেলে পুরনো গান? এই ‘ডিমার্কেশন’ কে জানে? আমি যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছি, তখন কী গান গাইছি? সে গান তো একশো বছর আগে লেখা।

শিল্পীরা তো খুবই রোম্যান্টিক হন। তাঁদের জীবনে প্রেম থাকে। প্রেমিকা থাকে। আপনার?

গানের চেয়ে বড় প্রেমিকা এখনও খুঁজে পেলাম না।

শিল্পী মাত্রই একটু অন্য রকম। তাঁদের নিষিদ্ধ জীবনেও যাতায়াত থাকে। এমন মানুষদের আপনি কেমন চোখে দেখেন?

আমি তাঁদের কেমন চোখে দেখার কে? থাকতেই পারে কারও এমন জীবন। এটা তো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও কিছু বলার নেই।

দারুণ ভাবে স্নেহভাজন ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। তিনি আজ নেই। কিছু বলবেন...

সন্ধ্যাদি যে মাপের মানুষ তাঁকে বর্ণনা করা সহজ নয়। ছোটবেলা থেকে যাঁদের গান-বাজনা শুনতে শুনতে বড় হলাম, একটু একটু করে বুঝতে শিখলাম, এঁরা তো কী স্তরের মানুষ! আমি কস্মিনকালে কোনও দিন কল্পনাই করিনি যে আমার বাড়িতে সন্ধ্যাদির ফোন আসবে এবং আমার গান তাঁর ভাল লেগেছে বলে ফোন করে জানাবেন। কিন্তু ঘটেছিল ঘটনাটা। তার পর তো সম্পর্ক আরও এগোল...

কবীর সুমনের প্রতি আপনার খুব ভাল লাগা। কিন্তু সম্প্রতি উনি বেশ আপত্তিকর কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আপনার কী মনে হয়?

আমি এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। সুমনদার গানবাজনার দিকটায় বরাবর মনোযোগ ছিল, মনোনিবেশ ছিল। এখনও সেটাই আছে। অন্য ক্ষেত্রে কী বলছেন, করছেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই। গানের জগতে ওঁর অবদান থেকে আমরা কী জানতে, শিখতে পেরেছি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের শ্রোতাদের আপনি অনেক বেশি মননশীল ও আবেগপ্রবণ মনে করেন। তাই না?

দেখুন, গান গাওয়ার ক্ষেত্রে যে আবেগ থাকে, গান শোনার ক্ষেত্রেও সেই আবেগ জড়িয়ে থাকে। আমি বাংলাদেশে গান গাইতে গিয়ে সেই আবেগ দেখি। বাংলাদেশের মানুষ সারা পৃথিবীতে বাস করেন। ওঁরাও গান শোনার ব্যাপারে একই রকম আবেগপ্রবণ। এবং সেই আবেগটা কখনও কখনও এত প্রবল যে, আমাকে তা বাড়তি প্রেরণা দেয়। উৎসাহিত করে। আমার ভাল লাগে।

তা হলে এপার বাংলার শ্রোতারা কি সেভাবে শ্রবণে প্রস্তুত নন?

এ রাজ্যের বাঙালিরা একটু ঘেঁটে যাওয়া। শ্রোতাদের একটা বড় অংশের রুচির কোনও স্পষ্ট অভিমুখ নেই। চচ্চড়ি টাইপের। তাঁরা কী চান নিজেরাই ভাল করে জানেন না।

বুঝলাম। একটা কথা বলুন তো, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদ করে গাওয়া হোক সেটা আপনি মন থেকে গ্রহণ করতে পারেন না। ঠিক?

প্রথম কথা হ‌ল, রবীন্দ্রনাথ যে বাংলা ভাষায় গানটি লিখেছিলেন সেই ভাষার একটা নিজস্ব আবেদন আছে তো! দ্বিতীয় ব্যাপারটি হল, গানের ভেতর সেই ভাষার ভাবের একটা মুন্সিয়ানার জায়গা থাকে। সেটি শুধু গান গাওয়ার ক্ষেত্রে নয়। শোনার ক্ষেত্রেও। একটি গান একটি ভাষায় কানে যে অনুরণন তৈরি করে, সেটা অনুবাদ গানে হয় না। যেমন 'আকাশ ভরা সূর্য তারা' এই শব্দবন্ধের যে ভাষাগত অনুরণন আছে, এটা বাংলায় শুনতে যতটা ভাল লাগছে, ইংরেজিতে ওই গানের কথা অনুবাদ করলে এই ‘রেজোনেন্স’টা তৈরি হবে কিনা সন্দেহ আছে!

কী আশ্চর্য! কেবল বাংলায় গাইলে সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝবে কী করে?

ওঁদের বোঝার সুবিধের দায় আমি নেব কেন? ওঁদের যদি রবীন্দ্রসঙ্গীত বুঝতে হয় বাংলা ভাষাটা শিখে শুনুন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের রস আস্বাদন করুন। শেক্সপিয়রের লেখার বাংলা অনুবাদ পড়লে শুধু গল্পটা জানা যাবে, শেক্সপিয়রকে জানা যাবে না। তাঁকে জানতে হলে ইংরেজি ভাষাটা শিখতে হবে তো। আমার বলার জায়গা সেটাই।

সাক্ষাৎকার: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement