পুজোর ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছেন লং ড্রাইভে। সঙ্গে প্রিয়জন। কলকাতা ছেড়ে গাড়ি তখন বেশ খানিকটা দূরে। কালো পিচ ঢালা রাস্তার দু’ধারে সবুজ ধান খেত। গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে হাল্কা সুরেলা গান বাজছে। আপনিও গুনগুন করছেন সেই সুরে। হঠাৎ তাল কাটল। দুম করে একটা আওয়াজের সঙ্গে হাল্কা কেঁপে উঠলো আপনার গাড়ি। টায়ার পাংচার।
গাড়ি চালাতে ভালবাসেন অনেকেই। কিন্তু ঠিক মতো পরিচর্যা না করলে বা সহজ কিছু টিপস না জানলে পথেঘাটে বিপদ আসতেই পারে। তাই গাড়ি কেনার সঙ্গে সঙ্গে জেনে নেওয়া যাক কিছু সহজ টিপস।
চাকার এয়ার প্রেসার বজায় রাখা খুব জরুরি। সঠিক প্রেসার বজায় রেখে গাড়ি চালালে চাকা যেমন অনেক দিন ভাল থাকে, তেমনই মাইলেজও দেয় বেশি, বাড়িয়ে দেয় পুরো গাড়ির কর্মক্ষমতাও। কিন্তু প্রেসার মেনটেন না করলে টায়ারের যেমন ক্ষতি হতে পারে, তেমনই কড়া নাড়ে বিপদের আশঙ্কাও। দেখে নেওয়া যাক সহজ কিছু উপায় যার মাধ্যমে আপনার গাড়ির চাকা যেমন থাকবে ত্রুটি মুক্ত, গাড়িও চলবে বিরামহীন।
আরও পড়ুন: ভারতে প্রথম বার কিয়া মোটরস, নিয়ে এল মিড-এসইউভি
নিয়মিত পরীক্ষা করুন চাকার প্রেসার
গাড়ির গায়ে একটা ছোট আঁচড় লাগলে মন খুঁতখুঁত করে। এসি না চললে সারিয়ে নেন সঙ্গে সঙ্গেই। মিউজিক সিস্টেমে গন্ডগোল আপনার না-পসন্দ। কিন্তু যার ভরসায় আপনার গাড়ি এগিয়ে চলেছে, সেই চাকার দিকেই নজর দিতে ভুলে যান। আসলে সবার বোঝা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চাকা থেকে যায় উপেক্ষিতই। এক বার চাকায় হাওয়া দেওয়ার পর ভুলে যাই সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস।
কিন্তু এটা করা অনুচিত। প্রত্যেক দিন প্রতি মুহূর্তে চাকার প্রেসার কমে। খুব ধীরে, কিন্তু কমে। সাধারণত শীতকালে টায়ার থেকে এক মাসে এক থেকে দু’ কিলোপাস্কালস হাওয়া বেরিয়ে যায়, গরম কালে যা আরও বাড়ে। আর গাড়ি চলার সময় তো হাওয়া কমেই রাস্তার সঙ্গে ঘর্ষণে। তাই চাকার প্রেসার বজায় রাখার সব চেয়ে সহজ উপায় হল প্রতি বার গাড়ির তেল ভরার সময় হাওয়া ভরে নিন চাকায়। সেখানেই নিয়মিত পরীক্ষা হয়ে যাবে আপনার গাড়ির চাকা।
জানেন কি, ঋতুর বদলের সঙ্গে পাল্টে যায় চাকার প্রেসার লেভেল। তাই ঋতু বদলের সময় চাকার প্রেসার পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন প্রতি ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রার পরিবর্তনে প্রায় সাত কিলোপাস্কালস এয়ার প্রেসারের পরিবর্তন হয়। আরও একটা জিনিস মনে রাখা জরুরি। অতিরিক্ত চাকা অর্থাৎ স্টেপনিতে সব সময় বেশি প্রেসারে হাওয়া ভরে রাখা উচিত। কারণ হঠাৎ দরকার পড়া স্টেপনি যেমন আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে, তেমনই কম প্রেসারের স্টেপনি আপনার বিপদ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ পাংচার হওয়া চাকা পাল্টে যদি দেখেন নতুন চাকায় হাওয়া কম তা আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে পড়বে আপনার।
খেয়াল রাখুন গাড়ির চাকার ছিদ্রতে
কিছু কিছু বিষ হয় যা খুব ধীরে ধীরে শেষ করে দেয় মানুষের জীবন। গাড়ির চাকার জন্য তেমনই হচ্ছে খুব ছোট ছোট কিছু ছিদ্র যা চাকার হাওয়া বার করে দিতে থাকে অনেক দিন সময় নিয়ে। হয়তো ছোট কোনও পেরেক বা কাচের টুকরো পথে চলার সময় আপনার চাকায় করে দিয়েছে খুব ক্ষুদ্র কোনও ছিদ্র, যা দিয়ে বিপদ কী ভাবে ঢুকছে, বুঝতে সময় চলে যায় বহু দিন। তাই এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখা জরুরি। গাড়ি চলার সময় হঠাৎ হওয়া কোনও কম্পনের দিকে নজর রাখা জরুরি, শোনা দরকার হাওয়া বেরনোর শব্দের দিকেও। খুব ক্ষীণ হলেও সেই শব্দ শোনা সম্ভব। এ রকম কিছু মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে চাকা পরীক্ষা করা উচিত। চাকা যদি প্রচণ্ড গরম হয়ে থাকে বা ধারের দিকে ঢেউ খেলে থাকে বুঝতে হবে নিশ্চয়ই চাকায় কোনও ছিদ্র হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্টেপনি ব্যবহার করুন। ক্ষতিগ্রস্ত চাকা সারাতে দিয়ে দিন।
আরও পড়ুন: সিডানের বাজারে ফেরত আসছে হন্ডা সিভিকের টেনথ্ ভার্সন
আপনার গাড়ির চাকার সঠিক এয়ার প্রেসারের সন্ধান দেবে আপনার গাড়ির কোম্পানির ম্যানুয়াল। আর সঠিক এয়ার প্রেসার জানা প্রচণ্ড জরুরি। তা না জানলে অতিরিক্ত সম্ভাবনা থাকে চাকায় অতিরিক্ত এয়ার প্রেসার তৈরি করে ফেলার। সব সময় সঠিক এয়ার প্রেসার গজ ব্যবহার করুন হাওয়া ভরার সময়।
ব্যস আর কী, এই নিয়ম মেনে নিশ্চিন্তে বেড়িয়ে পড়ুন গাড়ি নিয়ে আর উপভোগ করুন পুজোর ছুটি।