রান্নাঘরে থাকা গোটা মশলা দিয়ে, শুকিয়ে যাওয়া শাকপাতা দিয়েই বাড়িতে শুরু করুন হার্বসের চাষ
ভারতের অন্য বড় শহরগুলির মতো কলকাতার দূষণ মাত্রাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। শহরের রাস্তায় ক্রমাগত বেড়ে চলা গাড়ি-ঘোড়া, কলকারখানার নির্যাস রয়েছে যার মূলে। এ ছাড়াও রয়েছে আর একটিভিলেন। প্লাস্টিক। তবে প্লাস্টিককে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে বিদায় করতে পারাটা বোধহয় ততটা সহজ নয়। দুধের প্যাকেট, তেলের শিশি, ঘিয়ের কৌটো কিংবা পানীয় জল এই সবই বাড়িতে আনি প্লাস্টিকের পাত্রে। তাই ব্যবহারের পর সেই প্লাস্টিকগুলি ময়লা ফেলার গাড়িতে না ফেলে এগুলো অনায়াসেই পুনর্ব্যবহার করলে কেমন হয়? বাড়িতে বাতিল করা প্লাস্টিকের পাত্রগুলি সহজেই বাগান করার কাজে লাগাতে পারি। এতে বাড়ির রূপচর্চাও হল, আর সামান্য হলেও শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও কিছুটা ভূমিকা নেওয়া যাবে।
ধরুন, নেট ঘেঁটে বার করলেন পাস্তার এক দুর্দান্ত রেসিপি। ভাবলেন, ডিনারে চমকে দেবেন আপনার খুদেটিকে। ফ্রিজ খুলেই দেখলেন বেসিল তো নেই! আবার ছুটতে হবে বাজারে। খাবার পাতে কাঁচালঙ্কা চাই? রান্নাঘরের জানলায় থাকা টব থেকে তুলে নিতে পারলে কী ভালই না হত!
বাতিল বোতলের অর্ধেক কেটে, নীচে জল বেরনোর জন্য ছোট্ট ছিদ্র করে রাখুন। যদি সার না পায়, তবে গাছের বাড়বাড়ন্ত থমকে থাকে। কোনও রাসায়ানিক সার নয়, চা পাতা আর সব্জির খোসা একসঙ্গে মিক্সিতে একবার ব্লেন্ড করে নিয়ে কৌটোতে বারান্দায় কিংবা ছাদেরোদে রেখে দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় জৈব সার। রান্নাঘরেথাকা গোটা মশলা, শুকিয়ে যাওয়া শাকপাতা দিয়ে বাড়িতে শুরু করুন হার্বসের চাষ।
বাড়িতে বাতিল করা প্লাস্টিকের পাত্রগুলি সহজেই বাগান করার কাজে লাগাতে পারেন
মৌরি: মৌরি পাতা আমরা সচারচার খাই না। কিন্তু কাশ্মীরী স্টাইলে রান্না মাংসতে মৌরিপাতা ছড়িয়ে দিলে স্বাদে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বাতিল প্লাস্টিকের বোতলেসার-যুক্ত মাটি নিয়ে, তাতে সামান্য কটা মৌরির দানা ছড়িয়ে দিলেই কয়েক দিনের মধ্যে কচি পাতা মাথা উঁচু করে উঠে পড়বে।
মেথি শাক: পাঁচফোড়নের কৌটো থেকে মেথি নিয়ে একই পদ্ধতিতে চাষ করুন। ডাল বা ঝোল নামানোর পর মেথি পাতা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলে এর সুগন্ধ খাওয়ার ইচ্ছে বাড়িয়ে দেবে।
পুদিনা পাতা: যে কোনও কাবাবই পুদিনা পাতার চাটনি না হলে ঠিক জমে না। আর তা যদি হয় নিজের হাতে বানানো বাগানের তা হলে তো কথাই মেই। পুদিনা পাতা বাজার থেকে কিনে এনে শেকড়-সহ গোড়া কাঁচি দিয়ে কেটে রাখুন। এর পর এগুলো এক বেলা জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। সন্ধেবেলা পুঁতে দিন। প্রথম দিকে খুব বেশি রোদে না রেখে, বোতলগুলি ছায়ায় রাখুন। গাছ বেড়ে উঠবে।
ধনেপাতা: সর্ষে পাবদা, পার্শের ঝালবা পাতলা মুসুর ডাল রান্নার পর উপরে সামান্য ধনে পাতা কুচি ছড়িয়ে না দিলে রান্না অসম্পূর্ণ থাকে। মশলার কৌটোয় থাকা গোটা ধনে নিজের হাতে বানানো বাতিল বোতলের টবে ছড়িয়ে উপরে সামান্য ঝুরো মাটি দিয়ে অল্প জলের ছড়া দিয়ে রেখে দিন। কয়েক দিনের মধ্যেই ফিনফিনে পাতলা ধনে শাক জন্মাবে। বেশি জল দেবেন না। পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। গাছ বড় হলে প্রয়োজন মতো বড় পাতা কাঁচি দিয়ে কেটে নিন। অনেক দিন গাছ আপনার হার্বসের জোগানদার হবে। আর যৎসামান্য অক্সিজেনও পাবেন ফ্রি।
কারিপাতা: বাড়িতে দক্ষিণী খাবার বানাতে হলে কারি পাতা চাই-ই-চাই। কারি পাতার গাছে থাকা ছোট ফল বন্ধুদের বাড়ি থেকেই তুলে আনতে পারেন। এর পর টবের মাটিতে পুঁতে দিন। টাটকা কারিপাতা পেতে অসুবিধে হবে না। তবে নিয়মিত অল্প জল দেওয়া রোদে দেওয়া ও বেশি রোদ থেকে বাঁচিয়ে ছায়ায় রাখা এটুকু করলেই চলবে।
গন্ধরাজ লেবু: পাতলা ডাল কিংবা মাছের ঝোলের সঙ্গে এক টুকরো গন্ধরাজ লেবু না হলে বাঙালির চলে না!ঘোল হোক অথবা গন্ধরাজ চিকেন বা ফিশ— নিজের বাগানের পাতা দিয়ে তৈরি করুন সহজেই। আর সঙ্গে ফ্রি অক্সিজেন আর দূষণ মুক্তি তো আছেই। লেবুর দানা পুঁতে দিন বোতলের মাটিতে। একই ভাবে পাতি লেবুর গাছও তৈরি করে ফেলতে পারেন বাড়িতেই।
এই চড়া দামের বাজারে এই সামান্য উপায় মেনে চললেই রান্নায় আর আপস করার দরকার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy