অবিচারের শিকার হলেও নন্দকুমারের প্রতিপত্তি ছিল। তিনি আইনি লড়াইয়ে অনেক দূর এগিয়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন সমব্যথীদের। কিন্তু সাধারণ মানুষের কপালে তো সেটুকুও জুটত না। জমিদারের বিচারে তাদের ফাঁসির হুকুম শুনিয়ে দেওয়া হত। উনিশ শতকে পেশাদারি ওকালতি শুরু হওয়ার পরেও তা ছিল অত্যন্ত মহার্ঘ। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সুবিচার অধরাই রয়ে গিয়েছিল।
পুরনো কলকাতা নিয়ে লেখায় শ্রীপান্থ বলছেন, মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসি দেখে সবাই ফিরেছিলেন গঙ্গাস্নান করে। কারণ নন্দকুমার ছিলেন ব্রাহ্মণ। ব্রহ্মহত্যা দেখার মহাপাপ ধুয়ে ফেলতে গঙ্গাস্নানই ছিল সামাজিক বিধান। তবে সাধারণ অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যে রাস্তা ছিল, সেখানে মহারাজ নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি।
১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্ট শুরু হওয়ার আগে প্রচিলত বিচারব্যবস্থায় সবার নীচে ছিল জমিদারের বিচার। তবে এখানে ‘জমিদার’ বলা হত কোনও ইংরেজ সিভিলিয়ানকেই। তাঁকে সাহায্য করার জন্য থাকতেন একজন ‘ব্ল্যাক জমিদার’। তখন এই প্রেক্ষিতে ‘ব্ল্যাক’ বিশেষণটা অপমানজনক ছিল না। বরং, প্রভাব প্রতিপত্তিশীল দেশীয় বিত্তবানকেই এই পদমর্যাদা দেওয়া হত।
সে কালের সাবেক ফ্যান্সি লেনের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একটি খাল বা সরু নদী। তার নাম ছিল ‘হেস্টিংস নদী’। আজ সেই নদীর জায়গায় বিছিয়ে আছে স্ট্র্যান্ড রোড এবং গভর্নমেন্ট প্লেস ওয়েস্টের সংযোগকারী কিরণশঙ্কর রায় রোড। এই পথের অতীতে হেস্টিংস নদীর পাশে ছিল লম্বা গাছ। সেখানেই ঝুলিয়ে রাখা হত গুরু অপরাধ থেকে শুরু করে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনায় দোষী সাব্যস্তদের।
আজ সেই উঁচু গাছেরা নেই। অদৃশ্য হেস্টিংস নদীও। ফ্যান্সি লেন শুয়ে আছে অসংখ্য মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে। এই রাজপথ থেকে দেখা যায় হাইকোর্টের চূড়া। হয়তো সেই দিকে তাকিয়ে এখনও সুবিচারের অপেক্ষায় অতীতের অসহায় মুখগুলি।তাদের কান্না চাপা পড়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতার ভাঁজে। কলকাতা আছে কলকাতাতেই।(ঋণস্বীকার: কলকাতা: শ্রীপান্থ, কলিকাতার রাজপথ সমাজে ও সংস্কৃতিতে: অজিতকুমার বসু, মিউনিসিপ্যাল ক্যালকাটা: ইটস ইনস্টিটিউট ইন দেয়ার অরিজিন অ্যান্ড গ্রোথ)(ছবি: আর্কাইভ, শাটারস্টক এবং সোশ্যাল মিডিয়া)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy