উত্তর কলকাতার যেটা খুব বেশি ভাল লাগে তা হল টানা রিকশা।
কলকাতা বলতে প্রথমেই মাথায় আসে পুজোর ঠিক আগের ছবিটা। সব থেকে বেশি ভাল লাগে রাস্তার আলোগুলো। এগুলো আগে থাকে না। সেজন্যই বললাম পুজোর আগের কলকাতার কথা।এই লাইটিং দেখতে বেশ ভাল লাগে।
কলকাতা মানেই আমরা বুঝি সিটি অফ জয়। এই শীতকালে কলকাতার চিড়িয়াখানায় যাওয়ার মজাই আলাদা। যদিও আমি শেষ বার চিড়িয়াখানায় গিয়েছি পাঁচ বছর আগে।এছাড়া সায়েন্স সিটি, ভিক্টোরিয়া এসব তো আছেই। কিন্তু কাজের চাপের জন্য আমার কোথাও তেমন একটা যাওয়া হয় না।
উত্তর কলকাতার যেটা খুব বেশি ভাল লাগে তা হল টানা রিকশা। এক সময় আমহার্স্ট স্ট্রিট আর কলেজ স্ট্রিটে খুব যেতাম।ওই দিকে গেলেই আমি টানা রিকশায় চড়তে পছন্দ করি। কলকাতার ট্রামে চড়াটাও আমার কাছে দারুন লাগে। সময় পেলেই ট্রামে চড়ার চেষ্টা করি এখনও।
তবে মাঝে মধ্যে ফাঁকা মেট্রোতে চড়তে বেশ লাগে
সকালবেলা কলকাতার মানুষের যে ব্যস্ততা, বিশেষ করে মেট্রোতে,সেটা আমার বেশ লাগে। আগে আমি খুব ট্রেনে যাতায়াত করতাম। ২০১৫-’১৬ সাল পর্যন্তও ট্রেনে যাতায়াত করেছি। এখন আর হয় না। তবে মাঝে মধ্যে ফাঁকা মেট্রোতে চড়তে বেশ লাগে। যদিও মানুষের মধ্যে ব্যস্ততাটাও ভাল লাগে। মনে হয় কলকাতার সব মানুষ ব্যস্ত হয়ে কাজ করছে।
যেটা ভাল লাগে না, সেটা হল নির্বাচনের আগে মানুষের মধ্যে আলোচনা। ট্রেনে, বাসে সব জায়গায় আলোচনা শোনা যায়। মাঝে মধ্যে দুটো দলে ট্রেনের মধ্যেই ঝামেলা লেগে যায়। এগুলো খুব বাড়াবাড়ি মনে হয়। রাজনীতির আলোচনা চলতেই পারে। কিন্তু এটা নিয়ে হাতাহাতি, মারামারি, তর্কাতর্কি...বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাওয়াটা ঠিক নয়।
এখানকার মানুষ আসলে আবেগপ্রবণ। প্রত্যেকটা বিষয়েই এই শহরের মানুষদের আবেগ খুব বেশি। যেজন্য প্রত্যেকটা ব্যাপারেই আমরা খুব এক্সপ্রেসিভ হয়ে যাই। এটা আমার মনে হয় কলকাতা ছাড়া অন্য কোনও শহরে নেই। এটা একদিক থেকে ভালও লাগে। কিন্তু এই ইমোশনের জন্য বাজে ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে যাওয়াটাও খারাপ।ভাল মন্দ দুটো দিকই আছে এর মধ্যে।
আমি মফঃস্বলের ছেলে। বারাসতে আমার বাড়ি।শহর ভাল লাগলেও গ্রামের রাস্তা, একটু সবুজ বেশি পছন্দ। দু’রকমই পাওয়া যায় রাজারহাটের দিকে। ওই দিকটা বেশ ভাল লাগে। নিউটাউনও খুব ভাল লাগে। যাদবপুর, গড়িয়া, টালিগঞ্জ আমার একদমই ভাল লাগে না। আমি রানিকুঠিতে থাকি। সারা রাত এত গাড়ির আওয়াজ! ভাল লাগে না। এর থেকে পাখির আওয়াজ শুনতে পেলে বেশি ভাল লাগবে।
কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের সঙ্গে আমার প্রেমে পড়ার স্মৃতি মারাত্মকভাবে জড়িত
বারাসতে আমি যেখানে থাকতাম, সেখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই পাশাপাশি থাকে। ছোটবেলা থেকে আজান আর পুজোর আরতি শুনে বড় হয়েছি। এখন খুব মিস করি। দুই ধর্মের মানুষের পাশাপাশি থাকার ব্যাপারটা কলকাতায় বুঝতে পারি না। তা বলে বলছি না যে, শহরের মানুষের মধ্যে একতা নেই। কিন্তু কলকাতার তুলনায় বারাসতে এটা আমি বেশি অনুভব করি। ছোটবেলায় যাদের সঙ্গে খেলতাম তারা অনেকেই মুসলিম। কোনওদিন খেলার বন্ধুদের আলাদা বলে মনে হয়নি। কলকাতায় এ বিষয়ে যত আলোচনা হয়, বাস্তবে তত বোঝা যায় না। বারাসতে কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর যে আলাদা করে আলোচনা করার দরকার হয় না।
কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের সঙ্গে আমার প্রেমে পড়ার স্মৃতি মারাত্মকভাবে জড়িত। একটা সময় কলেজ স্ট্রিটের দিকে আমি নাচের ক্লাস করাতে যেতাম। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ প্রোগ্রামে একজনের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল। প্রেম বলতে আমিই তার প্রতি পাগল ছিলাম। তার বাড়ি ছিল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। তার বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে বাড়িটা খুঁজে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতাম। ট্রেনে করে শিয়ালদহ আসতাম। ওখান থেকে টানা রিকশা নিয়ে অকারণে ওর বাড়ির পাশে ঘুরঘুর করতাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, ওকে যদি এক ঝলক দেখতে পাই। কোনও দিন দেখতে পাইনি। কিন্তু একবার কালীপুজোর সময় ওর সামনে দিয়ে যাচ্ছি,সে বাড়ি থেকে বেরিয়েই আমাকে দেখতে পায়। তারপর আমাদের কথা হয়। ও বলে, “কেমন আছ?” আমি বলি, “ভাল। এটা তোমার বাড়ি?”ও বলে, “হ্যাঁ। এসো না, বাড়িতে এসো।”মনে তো খুব ইচ্ছে ওর বাড়িতে যাই। তাই ‘কাজ আছে’ বলেও ওদের বাড়ি গেলাম। তারপর কতবার যে ওর বাড়ি গিয়েছি। ওর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর প্রেমও করেছি। শিয়ালদহ স্টেশনে, কলকাতার রাস্তায়, টানা রিকশায় আমরা প্রেম করেছি।কিন্তু একটা সময় সম্পর্কটা আর থাকল না। ব্রেক আপ হয়ে যায়।পরে ওর বিয়েও হয়।এই প্রেম কলকাতার স্মৃতির সঙ্গেই রয়ে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার ছোটবেলায় যে কলকাতা দেখেছি সেটা অনেক বেশি ভাল মনে হয়। এ বিষয়ে খুব বেশি ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে মনে হয় মানুষের মধ্যেই পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ অনেক বেশি ব্যস্ত।মনে হয় যেন আগে মানুষের মধ্যে বেশি আন্তরিকতা ছিল। মানুষ একে অপরকে অনেক সাহায্য করত। অনেকদিক থেকে আমরা উন্নতি করেছি। রাস্তাঘাট, প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেকে আমরা কোথাও যেন আত্মকেন্দ্রীক হয়ে গিয়েছি।আমার তাই মনে হয়, শহরটাকে পরিবর্তন করার চেয়ে আমাদেরর মানসিকতার কিছু পরিবর্তন করা দরকার, একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ বাড়ানো দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy