নিমিশা প্রিয়া। — ফাইল চিত্র।
সোমবারই ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সিলমোহর দিয়েছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি। সাত বছর পর সাজা হতে চলেছে ইয়েমেন অভিবাসী কেরলের মেয়ের। এক মাসের মধ্যেই সাজা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সে দেশের আদালত। ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রকও। কিন্তু কে এই নিমিশা? কোন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পেতে চলেছেন তিনি?
কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা পেশায় নার্স। স্বামী টমি থমাস এবং মেয়েকে নিয়ে ইয়েমেনে থাকতেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন নিমিশা। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে যান। স্বপ্ন ছিল নিজের ক্লিনিক খোলা। ওই বছরই ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। মাহদি তাঁকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ, আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার ছিল নিমিশার। সেই মতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ। নিমিশার টাকাপয়সা কেড়ে নেন ওই যুবক। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, মাহদি তাঁকে মাদকসেবনেও বাধ্য করেন। বিরোধ বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেন মাহদি, যাতে কোনও ভাবেই নিমিশা ইয়েমেন ছাড়তে না-পারেন। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন মাহদি, ফলে নিমিশার প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়া জটিল হয়ে পড়ে। অভিযোগ, একাধিক বার পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোনও লাভ হয়নি। মাসখানেক জেলে থাকার পরেই ছাড়া পেয়ে যান মাহদি। জেল থেকে বেরিয়ে নিমিশার জীবন আরও দুর্বিষহ করে তোলেন তিনি।
বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এর পর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স। ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের জেলেই বন্দি রয়েছেন ভারতের যুবতী। মাহদিকে হত্যার দায়ে ২০১৮ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত। মৃত্যুদণ্ড পান নিমিশা। এই সাত বছরে পরিবারের তরফে ৩৬ বছর বয়সি নিমিশাকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। শেষ চেষ্টা হিসাবে ‘দিয়া’ (নিহতের পরিবারের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক) দিয়ে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী। সে জন্য চলতি বছরেই জমিবাড়ি বেচে ইয়েমেনে চলে এসেছেন প্রৌঢ়া। কিন্তু কিছুতেই চিঁড়ে ভেজেনি। গত বছর নিমিশার সাজা মকুবের শেষ আবেদনও খারিজ হয়ে গিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে। এ বার প্রেসিডেন্টের সম্মতিতে মৃত্যুদণ্ডে সিলমোহর পড়ল তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy