দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বুধবারই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষণে যেমন উঠে এসেছে আমেরিকার বিভিন্ন বিষয়, তেমনই জায়গা পেয়েছে বিদেশনীতিও। পূর্বসূরি জো বাইডেনের সরকারের সমালোচনাও শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের কণ্ঠে। তাঁর ভাষণ জুড়ে ছিল কখনও অন্য দেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, আবার কখনও শোনা গিয়েছে ধন্যবাদজ্ঞাপনও। উঠে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গও!
ট্রাম্পের ভাষণের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল আমেরিকার শুল্কনীতি! তিনি বুধবার স্পষ্ট জানান, পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর নীতি থেকে বাদ পড়ছে না ভারত। পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। সেই মঞ্চে ট্রাম্প বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে অন্য দেশগুলি আমাদের উপর শুল্ক চাপিয়ে আসছে, এ বার আমাদের পালা।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমরা আগামী ২ এপ্রিল থেকে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করব।’’ ট্রাম্প তাঁর ভাষণে আলাদা করে ভারতের কথা বলেছেন। ‘‘ভারত আমাদের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনওই ছিল না।’’
ভারত ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের কথা নিজের ভাষণে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন, ব্রাজিল এবং আরও অসংখ্য দেশ আমাদের উপর যত বেশি শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তত শুল্ক আরোপ করব।’’ কানাডা, মেক্সিকোর কথা ভাষণে আলাদা করে উল্লেখ না করলেও, সেই দেশগুলিও যে ট্রাম্পের তালিকায় রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন প্রায় সকলেই। ইতিমধ্যেই কানাডা থেকে আসা পণ্যের উপর আমেরিকায় ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, মেক্সিকোর উপর একই পরিমাণ শুল্ক আরোপের কথা বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শুল্কনীতি ছাড়াও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের ভাষণে জায়গা পেয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গও। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির থেকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ চিঠি’ পেয়েছেন। ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি জ়েলেনস্কি, চিঠিতে সেই কথাই উল্লেখ করেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর চিঠি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে পড়ে শোনান ট্রাম্প। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘চিঠিতে জ়েলেনস্কি লিখেছেন, স্থায়ী শান্তি ফেরাতে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার টেবিলে বসার জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন। আমাদের থেকে বেশি শান্তি আর কেউ চান না। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বেও কাজ করতে প্রস্তুত আমি এবং আমার দল।’’ পাশাপাশি, রাশিয়া যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তা-ও জানান ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্প বলেন, ‘‘নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পেলে খনিজ বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছেন জ়েলেনস্কি।’’ ট্রাম্প-জ়েলেনস্কির বাদানুবাদের পর আমেরিকার সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ বণ্টন চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। জ়েলেনস্কি সেই চুক্তি নিয়ে নিজের মত জানালেন ট্রাম্পকে। তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। তাঁর দাবি, ইউক্রেন যে কোনও সময় এবং সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভাষণে জায়গা পেয়েছে পাকিস্তানও। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়ে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের এক জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান।’’ সেই কারণেই ইসলামাবাদকে ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প। একই সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য পূর্বসূরি বাইডেনের সমালোচনাও করেন তিনি।