ফাইল চিত্র।
তিনটি বিমান এসেছিল আফগানিস্তানের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। তারা পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছে আফগান গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথি বোঝাই করে। এই খবর চাউর হতেই তালিবান প্রশাসনের উপরে পাকিস্তানের খবরদারি নিয়ে চর্চা আরও জোরদার হয়েছে। তবে নয়া সরকারের সূচনার অনুষ্ঠান এ দিন করেনি তালিবান। মনে করা হচ্ছে, ৯/১১-র কুড়ি বছর পূর্তির দিনে ওই অনুষ্ঠান না করার জন্য একাধিক রাষ্ট্রের চাপ ছিল তাদের উপরে।
আজ বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে একটি চ্যানেল দাবি করে, পাকিস্তানের তিনটি সি-১৭ বিমান গত বৃহস্পতিবার ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কাবুলে নেমেছিল। ফের মাটি ছাড়ার আগে সেগুলিতে তুলে দেওয়া হয় আফগান গোয়েন্দা সংস্থা এনডিএস-এর প্রচুর গোপন নথি এবং হার্ড ডিস্ক। আফগানিস্তানে পাক রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমেদ গোটা বিষয়টি সমন্বয় করেন বলে সূত্রের দাবি। সূত্রটি আরও বলছে, আশরফ গনি সরকার কাবুলের এত দ্রুত পতন আঁচ করতে পারেনি বলেই ওই সমস্ত নথিপত্র একেবারে টাটকা। আবার সেগুলি ঠিক তালিবানের হাতেও আসেনি। কারণ যে সরকারি কর্মীরা ওই সমস্ত নথি সামলাতেন, পালাবদলের পরে তাঁরা অনেকেই আর কাজে ফেরেনি। কিন্তু এ বার পাকিস্তানের হাতে সে সব নথিপত্র যাওয়ার খবরে আশঙ্কা তীব্র হয়েছে যে, এ বার সেগুলি ব্যবহার করে ভূ-রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারে আইএসআই।
বস্তুত, পাক গুপ্তচর সংস্থাটি তা করছেও। তাদের মধ্যস্থতাতেই তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আজ ইসলামাবাদে চিন, রাশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজ়বেকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে বৈঠক করেন আইএসআই প্রধান ফৈজ় হামিদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক অতীতে এমন চালিকাশক্তির ভূমিকায় আইএসআইকে দেখা যায়নি। তবে এ দিন ইন্টারনেটে একটি অডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কোনও এক তালিব নেতাকে বলতে শোনা যায়, পাকিস্তানের জন্যই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁদের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। পাক হস্তক্ষেপে হক্কানি নেটওয়ার্ক ও কোয়েটা সুরার নেতারা তালিবান সরকারের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ করা ওই গলাটি নয়া আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ফাজেলের বলে অনেকের ধারণা। তবে তা নিশ্চিত করা যায়নি। অডিয়োটিও পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তালিবানের নতুন সরকারের উদ্যাপন অনুষ্ঠান আপাতত বাতিল করার বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চিন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, কাতার এবং পাকিস্তানের কাছে তালিবানের আমন্ত্রণ পৌঁছেছিল। কোনও দেশই তা প্রত্যাখ্যান করেনি। কিন্তু তালিবান আমেরিকাকে খোঁচা দিয়ে ৯/১১-তে ওই অনুষ্ঠান করবে বলে সূত্র মারফত জানানোর পরেই জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন স্তরে আপত্তি ওঠে। ওই তারিখে যাতে অনুষ্ঠানটি না হয়, সে জন্য আমেরিকা এবং নেটো-ভুক্ত দেশগুলি নেপথ্যে কাতারকে চাপ দিতে শুরু করে। ইতিমধ্যে রাশিয়াও কাতারকে জানিয়ে দেয়, ওই তারিখে অনুষ্ঠানটি হলে তাদের পক্ষে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সূত্রের মতে, বিশ্বের কাছে তাদের নয়া সরকারের জন্য স্বীকৃতি অর্জনের দায় রয়েছে তালিবানেরও। ফলে তারা অনুষ্ঠান বাতিল করে। তালিবান সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি কমিশনের সদস্য এনামুল্লা সামাঙ্গানি টুইটারে লেখেন, ‘‘নতুন আফগান সরকারের সূচনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। বিভ্রান্তি এড়াতে ইসলামিক আমিরশাহির নেতৃত্ব মন্ত্রিসভার একাংশ ঘোষণা করেছেন, যা কাজও শুরু করে দিয়েছে।’’
এ দিন কাবুলের রাস্তায় দেখা গিয়েছে বোরখায় আপাদমস্তক ঢাকা প্রায় তিনশো মহিলার মিছিল। তাঁদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল, ‘তালিবানের ব্যবহার ও মনোভাবে আমরা সন্তুষ্ট’। ওই মিছিলকে পাহারা দিয়েছেন সশস্ত্র তালিবান যোদ্ধারা। আর একটি ছবিতে দেখা যায়, কাবুলের শাহিদ রব্বানি এডুকেশন ইউনিভার্সিটির দর্শকাসনে বসে রয়েছেন বোরখা পরা মেয়েরা। শোনা যায়, সেখানে মেয়েরা বক্তৃতাও দিয়েছেন এবং দেশ ছেড়ে পালানো মেয়েদের সমালোচনা করেছেন। যদিও মেয়েদের এই জমায়েত স্বতঃস্ফূর্ত কি না, তা নিয়ে কারও কারও সন্দেহও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy