Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Israel-Hamas Conflict

‘পালাচ্ছেন’ ওঁরা, আল-শিফায় পড়ে রইল দুধের শিশুরা

প্যালেস্টাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, আইডিএফ-ই হাসপাতাল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। লাউড স্পিকারে ঘোষণা করা হয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে চলে যেতে হবে।

An image of a child

দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে জখম এক প্যালেস্টাইনি শিশুকে ভোলানোর চেষ্টায় তার পরিজন। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৪
Share: Save:

চার দিকে ধ্বংসের ছবি। ধুলো-ধোঁয়ায় দিনের বেলাতেও বেশি দূর দেখা যায় না। রাস্তা দিয়ে চলছে ট্যাঙ্ক। তার পাশ দিয়ে এগোচ্ছেন দলকে দল লোক। সারা শরীর জুড়ে ক্লান্তি, রুক্ষ চুল, ধূসর পোশাক, কোলেকাঁখে বাচ্চা, পিঠে ব্যাগ, হাতে কাপড়ের পুঁটুলিতে ফেলে আসা সংসারের শেষ চিহ্নটুকু। মাঝেমধ্যেই গুলির আওয়াজ। সে দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেন না কেউ। এত দিনে মৃত্যু বড়ই চেনা গিয়েছে।

গাজ়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা থেকে ‘পালাচ্ছেন’ দলকে দল লোক। এক ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)-র তরফে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ডিরেক্টর সেখানে আটকে থাকা সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। প্যালেস্টাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, আইডিএফ-ই হাসপাতাল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। লাউড স্পিকারে ঘোষণা করা হয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে চলে যেতে হবে।

তিনিও এক ‘শিন্ডলার’। তালিকা মিলিয়ে দেখছেন, হাসপাতালে কে রইল, আর কে রইল না। অস্কার শিন্ডলার অবশ্য হিটলারের সেনার নজর এড়িয়ে বহু ইহুদিকে বাঁচাতে পেরেছিলেন। মহম্মদ আবু সালমিয়া জানেন না, তাঁর ভবিতব্য। আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর মহম্মদ আবু সালমিয়া দু’দিন আগেই বলেছিলেন, ‘‘রোগীদের ফেলে কোথাও যাব না। মরতে হলে সবাই একসঙ্গে মরব।’’ আজ একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইজ়রায়েলি বাহিনী সালমিয়াকে ডেকে নির্দেশ দিয়েছে, হাসপাতাল ফাঁকা করে দিতে হবে। রোগী, জখম ব্যক্তি, হাসপাতালের কর্মী ও যাঁরা নিরাশ্রয় হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েছিলেন, সকলকে বার করে দিতে হবে। এবং এই গোটা প্রক্রিয়ার তদারকির দায়িত্ব নিতে হবে সালমিয়াকেই। এত দিন এই বিভাগ থেকে ওই বিভাগ ছুটে ছুটে রোগী দেখে গিয়েছেন। এ বার তাঁর কাঁধেই ‘উদ্ধারকাজের’ ভার।

এই খবর প্রকাশ্যে আসার ৯০ মিনিটের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, তারা কোনও নির্দেশ দেয়নি। যে সব রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারবেন না, তাঁদের দেখাশোনা করার জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্য-কর্মীরা চাইলে থেকে যেতে পারেন। আইডিএফের বক্তব্য, হাসপাতালের ডিরেক্টর সালমিয়া তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। যাঁরা যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের চলে যেতে বলা হয়েছে। আইডিএফ আরও জানিয়েছে, একটি নিরাপদ রাস্তা দিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু তাঁদের কোথায় পাঠানো হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। শোনা যাচ্ছে, আইডিএফের নির্দেশ, পায়ে হেঁটে সমুদ্রের দিকে যেতে হবে সকলকে।

একটি ব্রিটিংশ সংবাদ সংস্থা মারফত জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। দক্ষিণ গাজ়া স্ট্রিপের কোনও অজ্ঞাত স্থানে তাঁদের পাঠানো হচ্ছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজ়ার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ১২০ জন গুরুতর জখম রোগী ও বেশ কিছু অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশু হাসপাতালে রয়েছে। তাদের নিয়ে আসা যায়নি। সম্প্রতি বিদ্যুতের অভাবে, ইনকিউবেটরের ভিতরে মারা যায় একটি সদ্যোজাত শিশু। তার পর ইনকিউবেটরে থাকা সব শিশুকে বার করে রাখা হয়। ডিরেক্টর সালমিয়া জানিয়েছিলেন, অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুগুলিকে বাঁচানোর জন্য ফয়েলে জড়িয়ে গরম জলের পাশে রাখা হচ্ছে। এখন তাদের কী হবে, কেউ জানে না। সালমিয়া কি হাসপাতালে থেকে গেলেন, তা-ও জানা নেই কারও!

তবে কোথায়ই বা পালাবেন মানুষ। গাজ়া স্ট্রিপের কোনও জায়গাই নিরাপদ নেই। এত দিন উত্তর ও মধ্য গাজ়া স্ট্রিপ থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল। ফলে গত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিস অঞ্চলের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ খান ইউনিসে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখন সেখানেও এলাকা ফাঁকা করে দিতে বলা হচ্ছে। শোনা গিয়েছে, আজ বিকেল চারটের মধ্যে সকলকে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। আজ সকালে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় খান ইউনিসে ২৬ জন প্যালেস্টাইনি প্রাণ হারিয়েছেন।

ও দিকে, গাজ়ায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জোড়া হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রপুঞ্জ পরিচালিত আল-ফাকৌরা স্কুলে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, জাবালিয়ায় অন্য একটি হামলায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইডিএফ-এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার বলেছেন, ‘‘আপনাদের মতো আমরাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখছি। নিশ্চিত করে কিছু জানি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই রকম অশান্ত পরিস্থিতিতে সামরিক অভিযান খুব কঠিন। সন্ত্রাসবাদীরা সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে যে কোনও জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। আর সেগুলো সাধারণ মানুষকে বর্ম করে হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদে করছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy