ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। —ফাইল চিত্র।
মাত্র ক’দিন আগেই নতুন করে কয়েক কোটি ডলারের সাহায্য পাঠিয়েছে আমেরিকা। তার পরেও দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে সুবিধা করতে ব্যর্থ ইউক্রেন। শনিবার আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলির থেকে পাওয়া একাধিক অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার উপর বড় মাপের হামলা চালিয়েছিল তারা। লক্ষ্য ছিল, রুশ তৈল শোধনাগারগুলি। মস্কোর দাবি, ইউক্রেনের সেই হামলা তারা প্রতিহত করেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনকে ‘শিক্ষা’ দিতে সে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে বড় মাপের পাল্টা হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেন মেনে নিয়েছে, রুশ হামলায় তাদের অন্তত চারটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ব্যাপক ক্ষতিহয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে দেশের বেশ কিছু জায়গায়। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও মেনে নিয়েছেন সেই ক্ষয়ক্ষতির কথা। শনিবারের এই হামলাটি এ যাবৎ ইউক্রেনের ওপর হওয়া রুশ হামলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মাপের বলেই মনে করা হচ্ছে।
শনিবার প্রথমে ইউক্রেনের তরফে দাবি করা হয়, দক্ষিণ রাশিয়ায় একাধিক লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে ৬০টিরও বেশি ড্রোন নিয়ে হামলা চালিয়েছে তারা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটি তাদের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা বলেও দাবি করে কিভ। রাশিয়ার দু’টি তেল শোধনাগার এবং একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে তাদের পাঠানো ড্রোনগুলি আঘাত করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। উচ্ছ্বসিত আমেরিকা এবং তাদের মিত্র দেশগুলি এই হামলাকে বড় সাফল্য বলে দাবি করতেও শুরু করে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই মস্কোর তরফে জানানো হয়, তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইউক্রেনের বেশির ভাগ ড্রোনকেই তারা নামাতে সক্ষম হয়েছে।
এর পরেই পাল্টা আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে ইউক্রেনের একের পর এক লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে মস্কো। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলিকে আঘাত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। রুশ পাল্টা হামলার পরেই ইউক্রেনের তরফে দাবি করা হয়, রাশিয়ার ছোড়া ৩৪টি ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২১টি ড্রোনকে প্রতিহত করতে পেরেছে তারা। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে জ়েলেনস্কিও দাবি করেন, ‘‘৩৪টি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র! আমরা তাদের কয়েকটিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি।’’ কিন্তু তার পরেই ইউক্রেন প্রশাসন এবং জ়েলেনস্কি স্বীকার করে নেন, রুশ হামলায় তাদের বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে। একাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
রুশ হামলার পরেই ফের পশ্চিমের সাহায্য চেয়ে আর্জি জানাতে শুরু করেন জ়েলেনস্কি। দেশের দুর্বল বায়ু সেনার কথা উল্লেখ করে তিনি ফের আমেরিকার ও তাদের মিত্র দেশগুলির কাছ থেকে অস্ত্র ও আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন।
আমেরিকার তরফে দিন কয়েক আগেই বিপুল আর্থিক সাহায্য পেয়েছে ইউক্রেন। তার পরেই রুশ হামলা এবং ফের জ়েলেনস্কির সাহায্যের আর্জিতে ক্ষুব্ধ পশ্চিমের একাধিক দেশ। তাদের অভিযোগ, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, ব্রিটেনের মতো শক্তিধর দেশগুলির পাশাপাশি মূলত আমেরিকার কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি ডলারের সাহায্য ও অস্ত্র পেয়েছে ইউক্রেন। তার পরেও যুদ্ধে অগ্রগতি তো দূর, ইউক্রেনের একের পর এক এলাকা রাশিয়া দখল করে নিয়েছে কার্যত বিনা বাধায়। ওই বিপুল অর্থ এবং অস্ত্র তারা কী করেছে, সে জবাব জ়েলেনস্কির কাছে জানতে চাওয়া উচিত বলেও মত একাধিক দেশের। ইতিমধ্যেই বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে জ়েলেনস্কি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী-সামরিক কর্তাদের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় জ়েলেনস্কির এ বারের সাহায্যের আর্জিকে সে ভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ ইউরোপের নানা দেশ।
পশ্চিমের দেশগুলির ক্ষোভের আরও একটি কারণ— তাদের পাঠানো বহু ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান-সহ সামরিক সরঞ্জাম রুশ হামলায় অকেজো হওয়ার পরে সেগুলিকে রীতিমতো সমারোহ করে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজিয়ে রাখার শুরু করেছে মস্কো। রাশিয়ার উদ্দেশ্য, এগুলিকে প্রদর্শন করে আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশগুলির ‘শক্তি’কে বিদ্রুপ করা। বিষয়টি কূটনৈতিক ভাবে যথেষ্ট অসম্মানজনক বলে মানছেন পশ্চিমের একাধিক কূটনীতিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy