ফাইল চিত্র।
কতটা পথ পেরোলে সন্তানদের সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন— এই চিন্তায় ঘুম উড়েছিল মধ্যবয়সি ইউক্রেনীয় দম্পতির। এক দিকে প্রিয় শহর মারিয়ুপোল রুশ হামলায় প্রতিদিন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছে। আর নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টের বাঙ্কারে বসে ইয়েভগেন টিশচেঙ্কো এবং তাঁর স্ত্রী টেটিয়ানা ভেবে চলেছেন, কী করে এই মৃত্যুপুরী থেকে জীবন্ত বেরিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনও দূর প্রান্তে চলে যাওয়া যায়।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজেদের বাঙ্কারে বন্দি করেছিলেন ইয়েভগেনরা। শুধু খাবার আনতে বাইরে বেরোতেন। মারিয়ুপোলের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখাটা এই দু’মাসে প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল ওই দম্পতির। কিন্তু গত রবিবার ভেবে ফেলেন মারিয়ুপোলে আর থাকা যাবে না। দূরে পশ্চিমের কোনও শহরে চলে যেতে হবে গোটা পরিবারকে। কিন্তু যাওয়ার উপায় কী? একমাত্র রাস্তা হল হাঁটা। ১২ থেকে ৬ বছরের চার সন্তানকে সে ভাবেই বোঝান টেটিয়ানা। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা এটাকে অ্যাডভেঞ্চার মনে করেছিল। তাই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাঙ্কার থেকে প্রথম বার বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মৃতদেহের স্তূপ দেখে ওরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।’’ সেই সঙ্গেই টেটিয়ানা যোগ করলেন, ‘‘খিদেয় মরার থেকে বোমায় মরে যাওয়া ঢের ভাল। মারিয়ুপোলে এখন আর খাবারটুকুও মিলছে না। তাই ওই শহর আমাদের ছাড়তেই হত।’’
রবিবার সকাল হতে না হতেই গোটা সংসারটাকে পিঠে বেঁধে বেরিয়ে পড়েন ছ’জন মিলে। একটা ভাঙাচোরা ট্রলি জোগাড় করেছিলেন ইয়েভগেন। তাতে মালপত্রগুলো রাখা হয়। একদম ছোট মেয়েকে বসিয়েছিলেন ট্রাইসাইকেলে। গোটা রাস্তা ট্রলি ঠেলেছেন ইয়েভগেন। আর সাইকেল ঠেলেছেন তাঁর স্ত্রী। টানা পাঁচ দিন চার রাত হেঁটে ১২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে পরিবারটি। মাঝপথে কোনও বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন রাতটুকু। সেখানে প্রতিটি পরিবার তাঁদের ভাল খাবার খাইয়েছে বলে জানান ইয়েভগেন। গত কাল জ়াপোরিঝিয়া শহরে পৌঁছয় ইয়েভগেন ও তাঁর পরিবার।
১২৫ কিলোমিটার হাঁটার পরে এক আনাজ বিক্রেতা নিজের ট্রেলারে পরিবারটিকে জ়াপোরিঝিয়ায় পৌঁছে দেন। সেখান থেকে ভিড় ট্রেনে গাদাগাদি করে লিভিভে। তবে লিভিভে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন না ওঁরা। ইয়েভগেনদের গন্তব্য ইভানো-ফ্রাঙ্কিভিস্ক শহর। বছর সাইত্রিশের ইয়েভগেন জানালেন সেখানে পৌঁছে প্রথম কাজ হবে একটা চাকরি জোগাড় করা। তাঁর স্ত্রী আপাতত ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করবেন। তাদের কোনও ভাল স্কুলে ভর্তি করার ইচ্ছে আছে ওই দম্পতির।
রুশ বাহিনী পথ আটকায়নি? ইয়েভগেন জানালেন অসংখ্য রুশ চেক পয়েন্ট পেরোতে হয়েছে তাঁদের। তবে রুশ সেনা তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতাই করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সবারই প্রশ্ন ছিল একটাই। মারিয়ুপোল থেকে আসছ? তোমরা রাশিয়ার কোনও শহরে চলে যাও। ইউক্রেনে আর থাকা কেন?’’ তবে ইয়েভগেন জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে প্রাণের শহর ছেড়েছেন, কিন্তু দেশ ছাড়বেন না। তাঁদের চার সন্তান মানুষ হবে ইউক্রেনের মাটিতে। সেই স্বপ্নই এখন দেখছেন টিশচেঙ্কো দম্পতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy