নিরাপদ: আশ্রয়ের সন্ধানে প্যালেস্টাইনি শরণার্থীরা। গাজ়া ভূখণ্ডের রাফায়। ছবি: পিটিআই।
‘সমস্ত নজর এখন রাফার দিকে’— সমাজমাধ্যমে ইজ়রায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বার্তাটি। স্টেটাস, পোস্টে বহু মানুষ ভাগ করে নিচ্ছেন সেই বার্তা।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাজ়া ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি রিচার্ড রিক পিপারকর্ন প্রথম বলেন, “সারা বিশ্বের নজর রয়েছে আসন্ন রাফা হামলার দিকে।” তখন থেকেই নেতানিয়াহু রাফা হামলার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, সেই উক্তিই সম্ভবত এই পোস্টারের অনুপ্রেরণা। ইজ়রায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবশ্য ইজ়রায়েলি হানা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত। তাঁর কথায়, পুরো ২০২৪ পর্যন্তই রাফা ও গাজ়ায় হামলা চালাবে ইজ়রায়েল।
৬ মে থেকে রাফায় প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। গত রবিবার হামলার মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে নিজের দেশের পার্লামেন্টের কাছে কার্যত সুর নরম করে ক্ষমা চাইতে হয়েছে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে। সোমবার শর্তসাপেক্ষে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও দিয়েছে ইজ়রায়েল। এখন অপেক্ষা শুধু হামাসের উত্তরের। কাতারের সঙ্গে মিলে আমেরিকার সঙ্গে গাজ়া চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করতে চাইছে মিশর।
রবিবারের হামলায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪৫ জন মানুষের। স্তম্ভিত বিশ্বের মানুষ। তার পরেও হামলা অবশ্য অব্যাহত রাফায়। ঘাঁটি গেড়েছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক। বুধবারই রাফার পশ্চিমে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে ২১ জনের। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন কিশোরী ও মহিলা। এলাকাটিকে ‘নিরাপদ’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনীই। তারা এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
যদিও আমেরিকা মনে করছে, রাফায় এখনও পুরোদস্তুর অভিযান শুরু করেনি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনা। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কার্বির কথায়, ‘‘আমরা রাফায় বড়সড় সর্বাত্মক অভিযানের পক্ষপাতী নই। সেটা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। ইজ়রায়েল প্রচুর বাহিনী নিয়ে রাফার একাধিক নিশানায় আঘাত হানতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এমন কিছু দেখিনি এখনও।’’
শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান নিকি হেলি ইজ়রায়েলের উত্তর সীমান্তে সফরে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের উপরে লিখে এসেছেন, ‘ফিনিশ দেম (ওদের শেষ করে দাও)’! সমাজমাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশিত হতেই শুরু হয়েছে প্রবল সমালোচনা। হেলি অবশ্য চুপ! সোমবার ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে বৈঠকও করেন হেলি। গাজ়ায় পৌঁছনোর পথে জাহাজ বিকল হওয়ায় আপাতত গাজ়ায় ত্রাণ পরিষেবা বন্ধ রেখেছে আমেরিকা। প্যালেস্টাইনের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলির দাবি, আমেরিকা আসলে গণহত্যার পক্ষেই প্রকারান্তরে সওয়াল করে চলেছে। পাশাপাশি, আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে ইজ়রায়েল-বিরোধী বিক্ষোভের নিন্দা করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে বিক্ষোভকারীদের নির্বাসন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
রাফায় অবশ্য মৃত্যুর কোনও শেষ নেই। বুধবারও ইজ়রায়েলি আকাশ হানা ও বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ১৫ জন প্যালেস্টাইনির। প্রাণ হাতে করে খান ইউনিসে আশ্রয় নিতে রওনা দিয়েছেন অনেকে। গাজ়া ও মিশরের মাঝের ফিলাডেলফি করিডরের অন্তত ৭৫ শতাংশ এখন ইজ়রায়েলি বাহিনীর দখলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, রাফা-সহ গাজ়া এখন চূড়ান্ত খাদ্যাভাবে ধুঁকছে। প্যালেস্টাইনের সমর্থক মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি, নেতানিয়াহু গাজ়ার মানুষদের না খেতে দিয়ে কার্যত খুন করছেন। গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নীরবতা নিয়ে সরব হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও। সম্প্রতি প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। প্যালেস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মুস্তাফার সঙ্গে বুধবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজ় দেখা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy