Advertisement
E-Paper

টোকিয়োর বারোয়ারি পুজোয় ‘বারো ইয়ারি’

জাপানের টোকিয়ো শহরে ও তার আশপাশে দু’-তিনটি দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। আমি এ বার যে পুজোটি দেখতে যাব, সেটি অন্যগুলির তুলনায় নবীন, সবে কৈশোরে পা দিতে চলল।

An image of Durga Idol

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বৈশাখী দে

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:১৩
Share
Save

জাপানে শরৎকাল আর হেমন্তকালের তফাত খুব একটা আলাদা ভাবে অনুভব করার উপায় নেই। এই দেখলেন আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা, তার পরেই হঠাৎ ঝপ করে হেমন্তের শিরশিরে ঠান্ডা এসে ঘরে ঢুকে পড়বে। কিন্তু তবু ওই একটু দেখা দেওয়া সুনীল শরতের আকাশ, ট্রেনে করে যাতায়াতের পথে হঠাৎ মিঠে হাওয়ায় দোদুল্যমান কাশফুলের মতো কোনও সাদা ফুলের ঝলক, এই সবই আমার মতো জাপানে বসবাসকারী বাঙালির মনে আগমনীর আনন্দবার্তা এনে দেয়। আর শুরু হয়ে যায় সাজো সাজো রব।

তবে হ্যাঁ, এত ব্যস্ততার দেশ জাপানে আসলে কিন্তু এই সাজো সাজো রবের প্রস্তুতি শুধুমাত্র শরতের আগমনের অপেক্ষা করলে হয় না, এখানে যে-হেতু কোনও হল বুক করে পুজো করতে হয়, তাই এই হলের বুকিং করতে হয় এক বছর আগে থেকে। অর্থাৎ এক বছর আগে থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু।

জাপানের টোকিয়ো শহরে ও তার আশপাশে দু’-তিনটি দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। আমি এ বার যে পুজোটি দেখতে যাব, সেটি অন্যগুলির তুলনায় নবীন, সবে কৈশোরে পা দিতে চলল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও রাসবিহারী বসুর সূত্রে জাপানের সঙ্গে বাঙালির যে নিবিড় যোগাযোগের শুরু, সেই বহমান ধারাকেই বাঁচিয়ে রাখতে ইন্ডিয়া বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন জাপান (আইবিসিএজে)-এর জন্ম ২০১১ সালে। গুটিগুটি পায়ে চলার প্রথম দিন থেকেই এদের উদ্দেশ্য শুভ শারদীয়ার চিরকালীন ঐতিহ্য বজায় রেখেও শুধু বাঙালিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সকল শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণকে মিলিয়ে দিয়ে, বৃহত্তর ভারত, জাপান বা বিশ্বের সব জাতি ধর্মের লোকের কাছে আনন্দ উৎসবের উৎস হয়ে ওঠা। তাই এই পুজোয় অনায়াসেই দেখা যায় হিন্দু-মুসলিম, ভারতীয়-জাপানি ও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বিশ্বব্যাপী অতিমারিকে পিছনে রেখে তিন বছর বাদে এ বার আবার দুর্গাপজার পূর্ণ উদ্‌যাপন।

১২ বছরে পা দেওয়া এই সংগঠনের পুজোর এ বারের প্রধান থিম বারোয়ারি পুজোকে ‘বারো ইয়ারি’ পুজোতে রূপ দেওয়া। জাপান-সহ ১২টি দেশকে ভারতের ১২টি ইয়ার বা বন্ধু হওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এক করে নেওয়া। এই সংগঠনের পূজাবার্ষিকী ‘আগমনী’তে তাই থাকবে এই ১২টি দেশের বন্ধুদের দুর্গাপুজো উদ্‌যাপনের বৃত্তান্ত।

এই সংগঠনের সদস্যেরা এটাও ভুলে যাননি যে, দুর্গাপুজোর ভিতর দিয়ে তাঁদের সামাজিক দায়িত্বও বহন করতে হবে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে সঠিক বার্তা। তাই পুজোর আর একটি ‘থিম’ হল নারীশক্তি, মায়ের হাতে মায়ের পুজো দিয়ে বন্দনা করা হবে দেবী দুর্গাকে। এ বার পুজোর পৌরোহিত্য করবেন সংগঠনেরই এক সদস্যা। অষ্টমীর পুজোর দিন সকালে মহিলা সদস্যদের পরার জন্য ভারত থেকে আনানো হয়েছে এক নকশার এক রঙের শাড়ি।

মায়ের মূর্তিও সেই কুমোরটুলি থেকেই আনা হয়েছে। সময় বা জায়গার অভাবে মাত্র দু’দিনে পুজো হলেও হয়েছে মহা আয়োজন। অষ্টমী ও নবমী, এই দু’দিন ধরে এখানকার পুজোয় থাকবে বাঙালির দেবী আরাধনার সকল আচার-অনুষ্ঠান। যে হেতু
কোনও হলেই প্রদীপ বা আগুনের ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়নি, তাই পুজোর উদ্বোধন হবে এলইডি বাতির প্রদীপ জ্বালিয়ে। প্রতিবারের মতো এ বারেও পুজো, অঞ্জলি, ভোগ ও সদস্যদের ঘরে তৈরি মিষ্টির স্বাদ নিতে চলে আসবেন শুধু ভারতীয়রাই নন, জাপানি ও অন্য বিদেশিরাও বটে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের চণ্ডালিকা, নাচ, গান, সদস্যদেরই লেখা নাটকের সঙ্গে থাকবে জাপানিদের দ্বারা অনুষ্ঠিত ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র ও নাচ। সদস্যদের লেখা বাংলা নাটকের মধ্যে দিয়েও বাঙালি পুজোর দিকগুলি, যেমন পুজোর চাঁদা তোলা বা পুজোয় নবীনদের নতুন প্রেমের মতো মজার দিকগুলিও তুলে ধরা হবে। এ ভাবেই এই পুজো দেশ, ভাষা, সংস্কৃতির বাধা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী মিলনমেলা হয়ে উঠবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023 Tokyo Japan Bengali Culture

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}