গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও আইনসভার ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত রায়ে পাক পঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতা দখল করতে পারেনি তাঁর দল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার ক্ষমতাসীন ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোটের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সভাপতি ইমরান খান। তাঁর নিশানায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরিবার এবং প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি।
ইমরান টুইটারে লিখেছেন, ‘মাত্র ৩ মাসের মধ্যে জারদারি-শরিফের মাফিয়ারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য, ৩০ বছর ধরে তাঁরা দেশকে লুট করে জমানো সম্পদ রক্ষা করা। আমার প্রশ্ন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির কত দিন ধরে এমন কাজ বরদাস্ত করবে।’
শুক্রবার পাক পঞ্জাব প্রদেশের আইনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটও পেয়েছিলেন পিটিআই-এর প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ ইলাহি। কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন পিএমএল(এন)-পিপিপি জোটের প্রার্থী তথা শাহবাজ-পুত্র হামজা শরিফ।
In just over 3 mths the Zardari - Sharifs' mafia has brought the country to its knees politically & economically;
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) July 23, 2022
simply to save their illegally accumulated wealth amassed over 30 yrs of plundering Pakistan. My question is:how long will State institutions continue to allow this?
৩৭১ সদস্যে পঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় শুক্রবার ভোটাভুটিতে পিএমএল(এন) প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফের ভাইপো হামজা পেয়েছিলেন ১৭৯টি ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইলাহি ১৮৬টি। কিন্তু আইনসভার ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ)-এর ১০ সদস্যের ভোট নাকচ করে দেন। ফলে ৩ ভোটে জয়ী হন হামজা। মাজারির দাবি, প্রাক্তন সেনাশাসক পারভেজ মুশারফ প্রতিষ্ঠিত দল পিএমএল(কিউ)-এর ১০ অ্যাসেম্বলি সদস্যের সকলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে পিপিপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তাই তাঁদের ভোট বাতিল করা হয়েছে।
যদিও ইমরানের অভিযোগ, পাক সংবিধান অনুযায়ী পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্তে ‘বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ’ গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে আইন মানেননি ডেপুটি স্পিকার। এই পরিস্থিতিতে পিটিআই সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দিয়ে শনিবার তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা আদালতে ডেপুটি স্পিকারের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তকে আইনগত ভাবে চ্যালেঞ্জ জানাব।’’
পাক পঞ্জাব প্রদেশের আইনসভার ২০টি আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ১৫টিতেই জয় পেয়েছিল ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সেখানে পাকিস্তান এবং পাক পঞ্জাবের শাসকদল ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)’ বা পিএমএল(এন) জেতে মাত্র চারটিতে! একটিতে জেতেন নির্দল প্রার্থী।
এর ফলে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশে ইমরানের দলের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছিল। হামজা পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলেও প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডেকে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের নির্দেশ দেয় লাহৌর হাই কোর্ট।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পিএমএল(এন)-এর সহযোগী দল পিপির-র নেতা জারদারি বৈঠক করেন পিএমএল(কিউ) সভাপতি চৌধুরী সুজাত হুসেনের সঙ্গে। তার পরেই সুজাত পঞ্জাব আইনসভার দলীয় সদস্যদের হামজাকে ভোট দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেন। কিন্তু পিএমএল(কিউ)-র পঞ্জাব পরিষদীয় দলের নেতা সাজিদ আহমেদ খান-সহ ১০ সদস্যের সকলেই বৈঠক করে ইলাহিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন।
পাক পঞ্জাবের আইনসভার ওই ২০টি আসন ছিল ইমরানের পিটিআইয়ের দখলে। কিন্তু গত মার্চে পাক পার্লামেন্টের পাশাপাশি পঞ্জাব আইনসভাতেও ইমরানের দলে ভাঙন ধরেছিল। বিদ্রোহীরা শরিফদের সঙ্গে হাত মেলানোয় মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারাতে হয় পিটিআই নেতা উসমান বুঝদরকে। কুর্সিতে বসেন হামজা। কিন্তু এর পর ইমরানের আবেদন মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশন দলত্যাগী সদস্যদের বরখাস্ত করে উপনির্বাচন ঘোষণা করে।
পঞ্জাবের উপনির্বাচনের এ বার মাটি কামড়ে প্রচার চালিয়েছিলেন ইমরান। দলত্যাগীদের অনেককেই প্রার্থী করেছিল পিএমএল (এন)। তাঁদের ‘গদ্দার’ বলে তুলে ধরেছিলেন তিনি। ভোটের ফল বলছে, সেই অভিযোগ মানুষ বিশ্বাস করেছে। পাশাপাশি, গত তিন মাসে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব নিয়েও শাহবাজ ও হামজা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই উপনির্বাচনে। বিশেষত, প্রবল আর্থিক সঙ্কটের আবহে শাহবাজ যে ভাবে জ্বালানিতে ভর্তুকি ছাঁটাই করেছেন, তাতে রোষ বেড়েছে দেশ জুড়ে। উপনির্বাচনে তার প্রভাব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ‘আউট’ হলেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক।
পিটিআইয়ের অন্দরে বিদ্রোহ, বিরোধী দলগুলির নজিরবিহীন জোট এবং পাক সুপ্রিম কোর্টের ধারাবাহিক ভর্ৎসনায় বিদ্ধ ইমরান গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। দেশ জোড়া তুমুল অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে সে সময় তাঁর জনসমর্থনও তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু পঞ্জাব প্রদেশের সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচন ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্রিকেটের মতোই রাজনীতির ‘পিচেও’ প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে ‘ক্যাপ্টেন’-এর। রাজনীতির মারপ্যাঁচে পঞ্জাবের কুর্সি হাতছাড়া হলেও ভবিষ্যতে পাক জনতার দরবারে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy