সরকারি দফতর ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়াল থেকে ইতিমধ্যেই নামানো হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এ বার দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কনোট পরিবর্তন করে টাকার নতুন নোট ছাড়ছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার, যাতে শেখ মুজিবের ছবি বাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে ‘ধর্মীয় স্থাপনা এবং জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিটি’। আপাতত চার ধরনের নোট বাজারে ছাড়ার কথা জানানো হয়েছে। এগুলি ২০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের বলেছেন, “নতুন নকশায় সরকারের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে নতুন টাকা।”
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংগঠনের ঘরে শেখ মুজিবের ছবি থাকায় এক দল লোক সেখানে ঢুকে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের মারধর করছে, এমন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। আক্রমণকারীদের উদ্দেশে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন করছেন, “বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্ভব হত?” আক্রমণকারী অবশ্য জবাব দেয় বৃদ্ধকে আরও দু’ঘা দিয়ে। ক্যামেরার সামনে এক আক্রমণকারী তাদের কাজকে যুক্তিসিদ্ধ করতে বলে, “কিসের মুক্তিযুদ্ধ? এরা সব স্বৈরাচারী সরকারের ধুনি জ্বালিয়ে রাখতে চায়। গোটা দেশে মুজিবের ছবি সরানো হচ্ছে,
এরা কেন ছবি টাঙিয়ে বসে থাকবে?”
ইউনূস সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা মাহফুজ় আলম তাঁর ফেসবুক পোস্টে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, শেখ মুজিবকে তাঁরা আদর্শ বলে মানেন না। মানেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে। ইউনূসের প্রিয়তম এই ছাত্রনেতা লিখেছেন, মুজিবকে দেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আগের ‘স্বৈরাচারী সরকার’। অনেক নেতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু ‘স্বৈরাচারী সরকার’ সবাইয়ের অবদান নস্যাৎ করে শুধু মুজিবকে তুলে ধরেছে, যা ইতিহাস বিকৃতি।
চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পরে এ পর্যন্ত কেউ আদালতে ওকালতনামা দাখিল করেনি। কিন্তু এই জোটের নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে সপ্তাহখানেক ধরে অভিযোগ আসছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক প্রান্ত দাসের বাড়িতে কাল সন্ধ্যায় হামলা চালিয়ে তাঁর মাকে কুপিয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। প্রান্ত জানিয়েছেন, এক বন্ধুর সঙ্গে তিনি সন্ধ্যায় বেরিয়ে যান। সেই সময়েই হামলা করা হয়। জোটের পক্ষে থেকে এই হত্যার নিন্দা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে উত্তপ্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরেনামে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশের ১৪৫ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বিবৃতিতে লেখা, ‘আমরা এমন এক সঙ্কটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উস্কানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনওই এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি আমরা।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, সাঈদ ফেরদৌস, হারুন-অর-রশীদ, স্বাধীন সেন, গীতি আরা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সামিনা লুৎফা, আশরাফ কায়সার, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রীতম দাশ, সারোয়ার তুষার, সালমান সিদ্দিকী, মেঘমল্লার বসু, মানজুর-আল-মতিন, সায়ান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মোশরেফা মিশু, সীমা দত্ত, আলতাফ পারভেজ, কল্লোল মোস্তফা, কামার আহমাদ সাইমন প্রমুখ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)