দু’ সপ্তাহ ব্যাপী ইজ়রায়েলি সেনার অভিযান শেষে ধ্বংসস্তূপ গাজ়া সিটির আল শিফা হাসপাতাল। ছবি: রয়টার্স।
হাতেগোনা দু’একটা হাসপাতাল চালু রয়েছে গাজ়া ভূখণ্ডে। তার মধ্যে আল শিফা ছিল অন্যতম। গত দু’সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিকে দখল করে রেখেছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের দাবি ছিল, হাসপাতালে হামাসের গোপন ঘাঁটি রয়েছে। দু’সপ্তাহের ‘জঙ্গি-দমন অভিযান’ শেষে এ দিন হাসপাতাল থেকে সেনা প্রত্যাহার করল আইডিএফ। যাওয়ার আগে তারা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেল হাসপাতাল। পোড়া ভবন। ধুলোয় শুধু রক্তের ছাপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে প্যালেস্টাইনিদের দেহ।
ইজ়রায়েলি বাহিনী ও হামাসের লড়াই থেমেছে শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসেছিলেন হাসপাতালে। এসে দেখলেন, শুধুই ধ্বংস। আইডিএফ-এর দাবি, তারা বহু জঙ্গিকে হত্যা করেছে। কয়েশো সশস্ত্র জঙ্গিকে আটক করেছে হাসপাতাল চত্বর থেকে। বেশ কিছু অস্ত্র ভান্ডারও পেয়েছে তারা। তা ছাড়া, হামাসের হামলার কিছু তথ্যপ্রমাণও উদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হামাস অবশ্য ইজ়রায়েলের যাবতীয় দাবি অস্বীকার করেছে। হাসপাতালের কর্মীরাও জানিয়েছেন, কোনও সশস্ত্র জঙ্গি আল শিফায় আস্তানা গেড়ে ছিল না। গাজ়ার জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরে দু’জনকে হত্যা করেছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। তাঁদের দেহ হাতকড়া পরানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। বুলডোজ়ার দিয়ে হাসপাতালের ভাঙাচোরা পরিকাঠামো সরিয়ে আরও
মৃতদেহ মিলেছে।
হাসপাতালে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, ৪৩ বছর বয়সি সামির বাসেল। তিনি একটি ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আল শিফায় আসা ইস্তক আমার কান্না থামছে না। ভয়াবহ অবস্থা। সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল শিফা হাসপাতাল আর নেই।’’ ইজ়রায়েল এ বারেও পুরনো সুরে জানিয়েছে, তারা কোনও সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর ক্ষতি করেনি।
হামাস-পরিচালিত গাজ়ার মিডিয়া অফিস দাবি করেছে, আল শিফা হাসপাতাল চত্বরে কমপক্ষে ৪০০ প্যালেস্টাইনিকে হত্যা করেছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। নিহতদের মধ্যে এক মহিলা চিকিৎসক ও তাঁর ছেলে (তিনিও ডাক্তার) রয়েছেন। মিডিয়া অফিসটি আরও জানিয়েছে, আল শিফা হাসপাতাল আর কাজ করার অবস্থায় নেই।
হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধে গাজ়ায় নিহতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। আল শিফার ঘটনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানিয়েছেন, ‘ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই।’ ১৮ মার্চ থেকে আল শিফা হাসপাতাল আইডিএফ-এর দখলে ছিল। তার পর থেকে অন্তত ২১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে সে কথা লিখেছেন গেব্রিয়েসাস। জানিয়েছেন, একটা ছোট্ট জায়গায় শতাধিক রোগী, পরিষেবা কিছুই নেই। রোগীদেরও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় সরাতে হচ্ছে। তিনি আরও লিখেছেন, বাচ্চাদের জন্য ডায়াপার নেই, ইউরিন ব্যাগ নেই, জল নেই। ইজ়রায়েলি হামলায় যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের ক্ষত পরিষ্কার করা জন্য প্রয়োজনীয় জলটুকুও নেই। গেব্রিয়েসাস জানিয়েছেন, গাজ়ায় জলাভাব এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ১৫ জন লোকের জন্য বরাদ্দ এক বোতল জল।
গাজ়ার যখন এমন পরিস্থিতি, উত্তপ্ত ইজ়রায়েলও। গত কাল সরকার-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের দাবি, যুদ্ধ থামিয়ে অবিলম্বে হামাসের ডেরায় বন্দি ইজ়রায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আন্দোলনকারী আইনাভ মোজ়েসের শ্বশুর গাডি মোজ়েস গাজ়ায় বন্দি রয়েছেন। আইনাভ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দেখে মনে হচ্ছে, উনি কাউকে উদ্ধার করতে চান না। উনি ব্যর্থ।’’ নেতানিয়াহু হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর হার্নিয়া অস্ত্রোপচার হবে। তার আগে তিনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ওদের কষ্ট বুঝতে পারছি। বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব, সব করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy