Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
boxing

Iraq Woman: মুঠোর জোরেই খুলতে চাইছেন বজ্র আঁটুনি, পারবেন কি বুশরা, ওলা, হাজেররা

ইরাকের মতো কট্টর মুসলমান সমাজে এমন আশা করতে শুধু সাহস নয়, অনেকটা দুঃসাহসও লাগে। তবে ইরাকের আধুনিকতাপন্থীরা আশাবাদী এই দুঃসাহস বাড়বে।

বুশরার মতো অনেকেই সম্ভবত তোড়-ফোড়ের পথেই হাঁটছেন ইদানীং। কারণ, ইরাকে আচমকাই বেড়ে গিয়েছে মেয়েদের বক্সিং শেখার প্রবণতা।

বুশরার মতো অনেকেই সম্ভবত তোড়-ফোড়ের পথেই হাঁটছেন ইদানীং। কারণ, ইরাকে আচমকাই বেড়ে গিয়েছে মেয়েদের বক্সিং শেখার প্রবণতা। ছবি সংগৃহীত

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৪৪
Share: Save:

লোহা কাটতে লোহাই প্রয়োজন। ৩৫ বছরের বুশরা আল হাজার এই সত্য বুঝেছেন। তাঁর বাড়ি ইরাকে। তিনি দু’সন্তানের মা। তাঁদের সমাজের রীতি মানলে, এখন বাড়িতে বসে সন্তানদের মানুষ করার কথা বুশরার। কিংবা উচ্চশিক্ষিত হলে, চাকরি করার কথা কোনও স্কুল বা কলেজে। কিন্তু সে সবের ধার না-ধারা, বছর পঁয়ত্রিশের বুশরা হয়তো এই মুহূর্তে কোনও বক্সিং রিংয়ে ঝাঁপাচ্ছেন। চোখের সমান্তরাল ‘পজিশনে’ রাখা মুঠো পাকানো গ্লাভস দুটো মাঝে মধ্যেই ছিটকে যাচ্ছে উল্টো দিকের ‘সঙ্গী’র মুখ লক্ষ্য করে। মুঠো দুটোর লক্ষ্য আসলে বুশরার ‘সঙ্গী’ নয়, সমাজ। যে সমাজকে জন্ম থেকেই পুরুষদের প্রাধান্য দিতে দেখেছেন বুশরা। মেয়েদের সাফল্যকে বরাবর বাঁকা চোখে মাপতে দেখেছেন। বুশরার মুঠো সেই ভাবনাকেই ভাঙতে চায়।

ইরাকের মতো কট্টর মুসলমান সমাজে এমন আশা করতে শুধু সাহস নয়, অনেকটা দুঃসাহসও লাগে। তবে ইরাকের আধুনিকতাপন্থীরা আশাবাদী, সেই দুঃসাহস বাড়বে। সংক্রমণের মতোই ছড়িয়ে পড়বে। এত দিন ধরে চোখ রাঙিয়ে দমিয়ে রাখা দেশের মেয়েরা ‘মুহ তোড়’ জবাব দেবে। তার জন্য যদি সত্যিই কিছু ‘তোড়-ফোড়’ করতে হয় ‘সে-ও ভি অচ্ছা’। বুশরার মতো অনেকেই সম্ভবত সেই তোড়-ফোড়ের পথেই হাঁটছেন ইদানীং। কারণ, ইরাকে আচমকাই বেড়ে গিয়েছে মেয়েদের বক্সিং শেখার প্রবণতা।

সাফল্যের পথে বরাবরই কাঁটা বিছানো হয়েছে। বুশরাও ব্যতিক্রম নন।

সাফল্যের পথে বরাবরই কাঁটা বিছানো হয়েছে। বুশরাও ব্যতিক্রম নন।

ইরাকের মতো দেশে মেয়েদের বক্সিং অ্যাকাডেমি ব্যাপারটা খুব একটা চোখ সওয়া নয়। রাস্তাঘাটে বোধহয় তেমন দৃশ্য দেখলে অস্বস্তি বোধ করে ইরাকের পুরুষতান্ত্রিক চোখ। বুশরা অবশ্য প্রশিক্ষণ সংস্থার পরোয়াও করেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আমার বাড়িতেই বক্সিং অভ্যাস করার সব ব্যবস্থা করে নিয়েছি। সেখানেই ট্রেনিং করি। ক্যারাটেও শিখি।’’

বাগদাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আরও রক্ষণশীল শহর নাজাফের বাসিন্দা বুশরা। এই ডিসেম্বরে বাগদাদের ৭০ কেজির বক্সিং টুর্নামেন্টে সোনার মেডেলও জিতেছেন তিনি। নিজে বক্সিং অভ্যাস করেন। বক্সিংয়ের প্রশিক্ষণও দেন। আবার নাজাফেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলোর শিক্ষিকা বুশরা। দুই সন্তানের মায়ের সোজাসাপটা বক্তব্য, ‘‘সমাজ আমাকে নিয়ে যা-ই ভাবুক আমার পরিবার পাশে আছে।’’ তাঁরা বুশরার সাফল্যে খুশিও। তবে সাফল্যের পথে বরাবরই কাঁটা বিছানো হয়েছে। বুশরাও ব্যতিক্রম নন। পুরনো স্মৃতি মনে করে মধ্য তিরিশের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের বক্সিং শেখাতে শুরু করেছিলাম, গোটা শহরের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আর এখন শুধু নাজাফেই মেয়েদের জন্য একের পর এক বক্সিং অ্যাকাডেমি খুলছে।’’

১৬ বছরের বক্সার ওলা মুস্তাফার মতে, ‘‘পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। মেয়েরা যদি আরও বেশি করে বক্সিংয়ের মতো খেলায় অংশ নিতে শুরু করে, তবে সমাজ বাধ্য হয়েই মেনে নেবে।’’

১৬ বছরের বক্সার ওলা মুস্তাফার মতে, ‘‘পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। মেয়েরা যদি আরও বেশি করে বক্সিংয়ের মতো খেলায় অংশ নিতে শুরু করে, তবে সমাজ বাধ্য হয়েই মেনে নেবে।’’

ইরাকের মেয়েদের মধ্যে যে বক্সিং শেখার প্রবণতা বাড়ছে, সে কথা মেনে নিচ্ছেন সে দেশের বক্সার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আলি তাকিফ। আলি ব্যাপারটাকে ‘সাম্প্রতিক বিস্ময়’ বলে ব্যখ্যা করলেও, এ নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। আলি বলেন, ‘‘দেশের মেয়েদের মধ্যে যে এই খেলার আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে, সেটা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বক্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতে প্রথাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম লেখাতে চাইছেন। চাহিদার জোগান দিতে নেই নেই করে ইরাকে এখন ২০ টা মেয়েদের বক্সিং ক্লাব তৈরি হয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বরে মেয়েদের বক্সিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন অন্তত ১০০ জন প্রতিযোগী।’’

হাজের গাজি। ১৩ বছরের এই কিশোরী বক্সারও বাগদাদের টুর্নামেন্টে একটি মেডেল জিতেছে।

হাজের গাজি। ১৩ বছরের এই কিশোরী বক্সারও বাগদাদের টুর্নামেন্টে একটি মেডেল জিতেছে।

কিন্তু এত রকম খেলা থাকতে হঠাৎ বক্সিং কেন? তার অবশ্য কোনও ব্যখ্যা নেই আলির কাছে। তবে ইরাকের মহিলাদের খেলাধুলোয় আগ্রহ নতুন নয়। সত্তর কিংবা আশির দশকে ইরাকে মেয়েরা নিয়ম করে আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে অংশ নিত। বাস্কেটবল, ভলিবল এবং সাইকেলিংয়ে মেয়েদের টুর্নামেন্ট হত। পরে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়। রক্ষণশীল রীতি রেওয়াজ নতুন করে বলবৎ করা হয় ইরাকে। পুরষতন্ত্রের চোখ রাঙানিতে আরও আড়ালে চলে যায় মেয়েরা। তবে ১৬ বছরের বক্সার ওলা মুস্তাফার মতে, ‘‘পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে থাকি এটা যেমন ঠিক। তেমনই এটাও ঠিক, মেয়েরা যদি আরও বেশি করে বক্সিংয়ের মতো খেলায় অংশ নিতে শুরু করে, তবে একটা সময়ে এটা স্বাভাবিক বলে মনে হবে। সমাজ বাধ্য হয়েই মেনে নেবে।’’

তবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে যে এখনও বেশ দেরি তার প্রমাণ হাজের গাজি। ১৩ বছরের এই কিশোরী বক্সারও বাগদাদের টুর্নামেন্টে একটি মেডেল জিতেছে। হাজেরের বাড়িতেও সবাই বক্সার। তার বাবা, দাদা, ভাই, দিদি প্রত্যেকেই। তবু কোচ যখন দৌড়তে বলেন, তখন হাজেরকে নিয়ে শহরের বাইরে যান তার বাবা। যাতে মেয়েকে দৌড়তে দেখে পড়শিরা কুমন্তব্য না করেন। কুনজরে না দেখেন মেয়ের বক্সিং প্রশিক্ষণকে।

অন্য বিষয়গুলি:

boxing Iraq Gender Bias Patriarchy woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy