ভিডিয়ো মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।
সীমান্তে আগ্রাসন থেকে বেহাল অর্থনীতি—সব কিছু নিয়েই মোদী সরকার যখন প্রবল চাপে, আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন (ভিডিয়ো মাধ্যমে) সামান্য অক্সিজেন এনে দিল সাউথ ব্লকে। এই বৈঠকের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘ দিনের। কিন্ত এমন এক সময়ে আজ দু’দেশের যৌথ বিবৃতি এবং ‘কৌশলগত ফ্রেমওয়ার্ক পথনির্দেশিকা-২০২৫’ প্রকাশ করা হল, যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। অসামরিক পরমাণু ক্ষেত্রে সহযোগিতা থেকে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, সমুদ্রপথে সমন্বয় থেকে নিরাপত্তা ক্ষেত্র, কোভিড মোকাবিলা থেকে পরিবেশ— দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রায় সমস্ত দিকই আজ উঠে এসেছে যৌথ ঘোষণা পত্রে।
তবে গত তেরো বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে যাওয়ার পরও ইইউ-র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির বিষয়টি আজও অধরাই থেকে গেল। সম্মেলনের পর বিদেশমন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) বিকাশ স্বরূপ বলেন, “দু’পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ চুক্তি কবে চূড়ান্ত হবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দু’ পক্ষই একমত যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।“
আজ সম্মেলনে ইইউ-য়ের তরফে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন। সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘হাতে কলমে কর্মসূচি নেওয়া’ এবং ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা শেষ করার’ ডাক দিয়ে বলেছেন, “এখন গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই সঙ্কটে। গণতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সময় এসেছে।’’ পাশাপাশি কোনও দেশের নাম না করে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জানিয়েছেন, ‘‘আইন মান্য করে চলা বিশ্ব ব্যবস্থা, আজ চ্যালেঞ্জের সামনে।’’ তাঁর কথায় ‘‘মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের পথে এ বার চলতে হবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে।’’
সম্মেলনের পর বিকাশ স্বরূপ এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, আলোচনায় অবশ্যই চিন উঠে এসেছে। সাধারণভাবে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি সম্মেলনে জানান মোদী। বর্তমানে চিনের সঙ্গে তৈরি হওয়া সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রকের কর্তার বক্তব্য, পাকিস্তানের সরকারি মদতপ্রাপ্ত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং বিষয়টি উঠে এসেছে যৌথ বিবৃতিতেও।
ভারত-ইইউ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দু’তরফই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, শান্তি, পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধিতা এবং অস্ত্রত্যাগ, সব রকমের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রশ্নে একমত হয়েছে। ভারত এবং ইইউ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়াবে’। এর পরই সমুদ্র নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তুলে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সমুদ্রপথে নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা শুরু করার প্রশ্নে একমত হয়েছেন দু’দেশের নেতারা। স্থির হয়েছে বাড়ানো হবে নৌ সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান। ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা এবং সুস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে দু’পক্ষই।’
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আজকের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও, অতিমারি কবলিত বিশ্বের বেহাল অর্থনীতির বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে আজকের সম্মেলনে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিড ১৯-এর কারণে ধসে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ভারত এবং ইইউ পুরো ক্ষমতার প্রয়োগ করবে যাতে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান করা যায়’। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়াতে মন্ত্রী স্তরে খুব শীঘ্রই ‘শীর্ষ পর্যায়ের সংলাপ’ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তা। আজকের সম্মেলনের পর যে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দু’তরফের অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা গড়ে তুলতে ভারত-ইইউ ‘অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি এগ্রিমেন্ট’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy