Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
US Presidential Election 2024

ভোটে নাক গলাচ্ছে ব্রিটেন, তির ট্রাম্পের

বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প এবং তাঁর প্রচার দলের সদস্যেরা ওয়াশিংটনে আমেরিকার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেখানে সরকারি ভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘অবৈধ বিদেশি সহায়তার’ অভিযোগ জানানো হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৪৬
Share: Save:

আর মাত্র সপ্তাহ দু’য়েক। আগামী মাসের গোড়াতেই নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে আমেরিকা। কিন্তু এর মধ্যেই বন্ধু দেশ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তথা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তাঁর অভিযোগ, ব্রিটেনের বর্তমান শাসক দল লেবার পার্টি আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। ট্রাম্পের দাবি, লেবার পার্টির কর্মী-সমর্থকেরা ব্রিটেন থেকে আমেরিকায় গিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। যদিও অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মার।

বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প এবং তাঁর প্রচার দলের সদস্যেরা ওয়াশিংটনে আমেরিকার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেখানে সরকারি ভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘অবৈধ বিদেশি সহায়তার’ অভিযোগ জানানো হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে সে দেশের জাতীয় স্বার্থ-বিরোধী কাজ করছেন ব্রিটেনের শাসক দলের সমর্থকেরা। এ নিয়ে তদন্তের দাবিও করেছেন ট্রাম্প।

বিতর্কের সূত্রপাত লিঙ্কডইন নামে সমাজমাধ্যমের একটি প্ল্যাটফর্মের পোস্ট নিয়ে। লেবার পার্টির ‘হেড অব অপারেশনস’ সোফিয়া পটেল কিছু দিন আগে একটা পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি লেখেন, ভোটের আগে বর্তমান এবং প্রাক্তন মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ জন লেবার কর্মী-সমর্থক আমেরিকায় যাচ্ছেন। আরও অন্তত দশ জন লেবার সমর্থক বা কর্মী ব্রিটেন থেকে নর্থ ক্যারোলাইনায় যেতে পারেন। যাঁরা যেতে ইচ্ছুক তাঁরা যেন তাঁর সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করেন বলে পোস্টে লিখেছিলেন সোফিয়া। ওই পোস্টের উদাহরণ সামনে এনেই ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, হ্যারিসের হয়ে প্রচার চালাতেই লেবার পার্টির ওই সমর্থকেরা আমেরিকায় যাচ্ছেন।

দলীয় সমর্থকদের আমেরিকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তথা লেবার পার্টির নেতা কিয়র স্টার্মার। কিন্তু সেই সঙ্গেই আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। স্টার্মারের বক্তব্য, আমেরিকার নির্বাচনী রীতি মেনেই প্রতি বার ভোটের সময়ে তাঁদের দলের কিছু স্বেচ্ছাসেবক আমেরিকায় যান। লিফলেট বিলি, দরজায় দরজায় গিয়ে ভোটারদের সচেতন করাই তাঁদের কাজ। এর বিনিময়ে কোনও দলের তরফ থেকে বিপুল অর্থ বা কোনও উপহার তাঁরা পান না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতেই এই কাজ করে থাকেন লেবার সমর্থকেরা। নিজেদের খরচেই আমেরিকা সফর করেন তাঁরা। তাঁদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে দল করে দেয়। এর বেশি কিছুই নয়। ব্রিটেনের পরিবেশমন্ত্রী স্টিভ রিড-ও এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়েছেন, লেবার পার্টির কোনও কর্মী বা সমর্থকের এই আমেরিকা সফরের খরচ সরকার বা দল জোগায় না। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানে যান।

ট্রাম্পের প্রচার দলের অবশ্য বক্তব্য, মুখে স্বেচ্ছাসেবকদের কথা বললেও লেবার পার্টির উচ্চপদস্থ নেতারা ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে গিয়ে কমলার প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ মরগ্যান ম্যাকসুইনি এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের যোগাযোগ সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ম্যাথু ডয়েলের নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছে ট্রাম্পের প্রচার দল। ব্রিটিশ সরকার অবশ্য জানিয়েছে, এঁরা শিকাগোর ওই কনভেনশনে নিজেদের খরচে স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাঁদের সফর-খরচ বহন করেনি।

ব্রিটেনের বেশ কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, প্রচারের শেষ সময়ে বাজিমাত করতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনছেন ট্রাম্প। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন লেবার পার্টিকে ‘অতি বাম’ আখ্যা দিয়ে বহু বার আক্রমণ শানিয়েছেন। আমেরিকান নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে লেবার পার্টির স্বেচ্ছাসেবকেরা যা করছেন, তা নিয়েও অভিযোগ এনেছেন তিনি।

স্টার্মার অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথাই বলছেন। ভোটে জিতে ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে দু’দেশের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে না বলেই মত তাঁর। গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দেখা হয়েছিল তাঁর। স্টার্মারের কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে গঠনমূলক বিষয় নিয়ে খুবই সদর্থক আলোচনা হয়েছিল। আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব তাঁর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলা, যাঁকে আমেরিকার মানুষ খুব শীঘ্রই নির্বাচিত করতে চলেছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE