চলতি বছরে চিনের পথ বন্ধ থাকায় এভারেস্টের জন্য রেকর্ড সংখ্যক (৪৭৮) অনুমতিপত্র দিয়েছে নেপাল সরকার। —ফাইল চিত্র।
মৃত ১৩। নিখোঁজ ৪।
চলতি বছরের মরসুম শেষ হওয়ার পরে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের বুকে মৃত্যুর এমনই খতিয়ান মিলছে। বর্তমানে মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী এটিই চতুর্থ বৃহত্তম (এর আগে ২০১৪, ১৯৯৬ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ১৬, ১৫ ও ১৩টি মৃত্যু)। সরকারি ভাবে নিখোঁজদের মৃত বলে ঘোষণা করলে মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়াবে ১৭— যা এভারেস্টে সর্বোচ্চ।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯২২ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এভারেস্টের সবক’টি রুটে মারা গিয়েছেন মোট ১৯৩ জন পর্বতারোহী এবং ১২৫ জন শেরপা। এ বছর মরসুমের শুরুতেই খুম্বু আইসফলের কারণে তিন শেরপার মৃত্যু হয়। এর পরে একের পর এক মৃত্যু বা নিখোঁজের খবর এসেছে উপরের ক্যাম্প থেকে। মৃতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আরোহী। এ বার অসুস্থ আরোহীদের হেলিকপ্টারে উদ্ধারও হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা।
কিন্তু কেন? এভারেস্ট ছুঁয়ে আসা বা এই অভিযানের সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই দুষছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনকে। উষ্ণায়নের জন্য গলছে হিমবাহ, ফলে গত ২৫ বছরে সর্বোচ্চ সাউথ কল হিমবাহ ১৭৭ ফুট ঘনত্ব হারিয়েছে। এর ফল ভুগছে পাহাড়ের উপরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী এবং আরোহীরাও। ২৮ বার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সামিট ছুঁয়ে রেকর্ডধারী, নেপালের কামি রিটা শেরপা বলছেন, ‘‘এ বছর এভারেস্টে অনেক বেশি ঠান্ডা ছিল। ঠিক যেন শীতকালের মতো। এত বছরে এত ঠান্ডা আগে দেখিনি। এ জন্য অনেকেরই ফ্রস্টবাইট হয়েছে।’’ নেপালের অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা ‘পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চারের’ কর্ণধার পাসাং শেরপাও জানাচ্ছেন, এ বার এভারেস্টের আবহাওয়া ছিল ‘অন্যরকম’। যার ফলে অনেকেই অতি উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় (হাই অলটিটিউড সিকনেস) এবং চোখের সমস্যায় ভুগেছেন। ফ্রস্টবাইটের শিকার হয়েছেন শেরপারাও! রুট খুলতে দিনদশেক দেরি হওয়ার কারণে ভাল আবহাওয়ার দিনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হুড়োহুড়ি বেশি হয়েছে বলেও মনে করছেন পাসাং।
চলতি বছরে চিনের পথ বন্ধ থাকায় এভারেস্টের জন্য রেকর্ড সংখ্যক (৪৭৮) অনুমতিপত্র দিয়েছে নেপাল সরকার। ফলে সামিটের পথে জনজট আরও বেড়েছে। এ বছরের এভারেস্ট-লোৎসেজয়ী মেজর চিরাগ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ১৪ মে রুট ওপেনের পরে অনেকেই ১৫ তারিখ সামিটের জন্য উপরে উঠেছিলেন। কিন্তু সে রাতে স্থানীয় ভাবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় তাঁদের ক্যাম্প ৪-এ থেকে যেতে হয়। পর দিন সামিটের পথে জনজট ছিল অবশ্যম্ভাবী। এরই ফল ভুগেছেন বহু আরোহী।
তবে আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অদক্ষ, অল্প প্রস্তুতি নিয়ে আসা আরোহী এবং অনভিজ্ঞ শেরপাদেরও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। কামি রিটার সাফ বক্তব্য, ‘‘কোনও আরোহী শেরপার পরামর্শ না শুনে অতি উচ্চতায় নিজের একগুঁয়েমির জন্য মারা গিয়েছেন। কেউ আবার কম খরচে অভিযানে সারতে গিয়ে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ শেরপাকে সঙ্গী করে খেসারত দিয়েছেন। শেরপা-অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া সামিট করতে গিয়েও বিপদে পড়েছেন কেউ কেউ। তাই যথেষ্ট উচ্চতাজনিত প্রস্তুতি এবং পাহাড়ে চলার অভিজ্ঞতা নিয়ে, শেরপার সঙ্গেই এভারেস্টের পথে পা বাড়ানো উচিত।’’
অল্প প্রস্তুতি কী ভাবে আরোহীকে বিপদে ফেলতে পারে, তা এ বারে স্বচক্ষে দেখেছেন মেজর চিরাগ। জানাচ্ছেন তাঁর দলেই থাকা ইন্দোনেশিয়ার কয়েক জন আরোহীর কথা, যাঁদের বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ১ পৌঁছতেই সময় লেগেছিল ১৭-১৮ ঘণ্টা (সাধারণত লাগে ১০-১১ ঘণ্টা)! শেষে উদ্ধার করে নামিয়ে আনতে হয় তাঁদের। তার পরেও ফের সামিটের দিকে এগিয়েছিলেন তাঁরা। ফল? এক জনের মৃত্যু। চিরাগের কথায়, ‘‘সময় কম, ফলে জনজট বেশি। তাতে দুর্বল আরোহীদের সময় বেশি লেগেছে, অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়ে বিপদ বেড়েছে।’’ এত মৃত্যু কি এড়ানো সম্ভব? চিরাগ বলছেন, ‘‘এভারেস্টের জন্য কোনও নিয়মকানুন বাধ্যতামূলক করা মুশকিল। এই সব অভিযানের উপরেই দাঁড়িয়ে নেপালের অর্থনীতি। তাই ওঁরা এমন কিছু করতে চাইবে না, যাতে পাহাড় থেকে আয় কমে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy