ভারত এবং চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন অনেকটাই উন্নত। দুই দেশের মধ্যে জমে থাকা কালো মেঘ কাটছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাও শান্ত। চিন বার বার ভারতের দিকে ‘বন্ধুত্বে’র হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই আমেরিকার বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে ভারতকে পাশে চাইছে চিন। কী ভাবে দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি হচ্ছে, সেই কথা জানাতে গিয়েই চিনা রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৮৫ হাজার ভারতীয়কে ভিসা দিয়েছে শি জিনপিঙের প্রশাসন।
ওই চিনা রাষ্ট্রদূত জানান, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে অবস্থিত চিনা দূতাবাস এবং উপ-দূতাবাস চিনে যাওয়ার জন্য ৮৫ হাজারেরও বেশি ভারতীয়কে ভিসা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আরও ভারতীয় যেন চিনে ভ্রমণ করেন, তারও আহ্বান করা হয়েছে।
ভারত এবং চিনের মধ্যে ভ্রমণ সহজতর করার জন্য বেজিং ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে। কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। অতীতে চিনে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে গেলে আগে থেকে অনলাইনে সময় নিতে হত। বর্তমানে তা হয় না। সরাসরি ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করতে পারেন ভারতীয় নাগরিকেরা। এ ছাড়াও স্বল্প সময়ে চিনে ভ্রমণ করতে গেলে আবেদনকারীকে আর বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হয় না। দ্রুত ভিসা মঞ্জুর করার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।
ভারত এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা নিয়ে বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার পরই ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু সেই তালিকা থেকে বাদ চিন। উল্টে চিনা পণ্যের উপর শুল্কের হার বাড়িয়েছেন। সেই আবহে ভারতকে পাশে চায় চিন। এর আগেও চিনের একাধিক কর্তা ভারতের উদ্দেশে ‘ঐক্যের বার্তা’ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ক্ষমতার রাজনীতি এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে চিন এবং ভারতকে।
ভারত এবং চিনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে ‘হাতি’ এবং ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর কথায়, ‘‘ড্রাগন এবং হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন আর হাতিকে একসঙ্গে নাচিয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না-বলে পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে। তাতেই দুই দেশের ফয়দা। যদি এশিয়ার বৃহত্তম দুই অর্থনীতি একজোট হয়, সমগ্র বিশ্বের পক্ষেই তা লাভজনক।’’ শুধু তা-ই নয়, ভারত এবং চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালুর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সেই আবহেই ভিসা-তথ্য দিল চিন প্রশাসন।