Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

ইস্তফা দিয়ে বোনের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা, কপ্টারে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে

আন্দোলনের মাঝে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কপ্টারে দেশ ছেড়েছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে। লাখ লাখ মানুষ হাসিনার বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন বলে খবর।

শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ১৪:৪১
Share: Save:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন। বোন রেহানাকে নিয়ে তিনি ঢাকার বাসভবন, অর্থাৎ ‘গণভবন’ ছেড়েছেন বলে খবর। তাঁকে কপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এয়ার কমোডর আব্বাস। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। দিল্লিতে যেতে পারেন হাসিনা। সেখান থেকে যেতে পারেন লন্ডনে।

বাংলাদেশে সেনার অধীনে অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠিত হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, তার আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। ৪৫ মিনিট সময় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি। তবে অন্য একাধিক সূত্রের দাবি, পুরো বিষয়টিই হয়েছে সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে। তার পরেই হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ গণমাধ্যমের একাংশের দাবি, দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগও পাননি। একটি সূত্রের দাবি, তাঁকে সেই সুযোগ নাকি দেয়নি সেনাবাহিনী। যদিও এই দাবির সরকারি সূত্রে কোনও সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। হাসিনা বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করার পর তাঁর ভাষণ শুরু হয়। বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে খবর। তার পরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠিত হবে। বছরখানেক পরে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। তবে এ সবই এখন খুবই প্রাথমিক স্তরের বক্তব্য।

কপ্টারে বাংলাদেশ ছেড়েছেন হাসিনা। একটি সূত্রের দাবি, হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে উদ্ধারের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে বিমান পাঠানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারত কোনও বিমান পাঠাতে পারে না। কারণ, তাতে আইন লঙ্ঘিত হতে পারে। ভারত থেকে জানানো হয়, হাসিনাকে আগে ভারতে পৌঁছতে হবে। তার পর সেখান থেকে তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কপ্টারে ঢাকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তাঁর নিকটবর্তী অবতরণ স্থান হতে পারে ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর। তার পর সেখান থেকে তাঁকে বিশেষ বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে খবর। কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকা থেকে কলকাতা বিমানবন্দর বা শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরা বিমানবন্দরেও নামতে পারেন হাসিনা। তবে সেগুলি ঢাকা থেকে দূরে। হাসিনার সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানন্দর ত্রিপুরার আগরতলা।

হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় থাকেন। কন্যা সাইমা ওয়াজেদ থাকেন দিল্লিতে। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে হাসিনার গন্তব্য হতে চলেছে দিল্লি।

গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি ছিল— হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। রবিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছিল। সোমবার হাসিনা পদত্যাগ করলেন।

রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে অশান্তি ঠেকাতে কার্ফু জারি করা হয়েছিল। সোমবার থেকে তিন দিন ছুটিও ঘোষণা করে সরকার। তবে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় কার্ফু উপেক্ষা করে ভিড় বাড়তে থাকে মানুষের। আন্দোলনকারীদের জমায়েতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। কিন্তু আন্দোলন দমানো যায়নি। পরে শোনা যায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেনাপ্রধান। তার পরেই হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসে। বাংলাদেশ গণমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাঝেই বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। লাখ লাখ মানুষ হাসিনার বাসভবন ‘গণভবন’-এ ঢুকে পড়েছেন।

বাংলাদেশে বিতর্কের সূত্রপাত কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আপত্তি তুলে রাস্তায় নেমেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে সে সময় নয় দফা দাবি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের নির্দেশ দেয়। তার পর আন্দোলন খানিক স্তিমিত হয়েছিল। তবে আন্দোলন থামেনি। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এক দফা দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছিল। দাবি ছিল হাসিনার পদত্যাগ। রবিবার সেই আন্দোলনে হিংসা ছড়ায়। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সোমবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন হাসিনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest Sheikh Hasina Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy