সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বাপ্পি লাহিড়ী।
১৬ ফেব্রুয়ারি: বাপ্পি লাহিড়ী নির্বাচনে জিততে পারেননি শুনে অবাক হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছটফটে ছাত্র আরেফিন পার্থ। প্রথমে খবরটা পেয়ে সে বিশ্বাসই করেনি। পরে যখন জেনেছে সেটা সঠিক, তখন তার মনে হয়েছিল— ‘এর চেয়ে বাংলাদেশের কোনও কেন্দ্রে দাঁড়ালে হয়তো পাস করে যেতেন বাপ্পিদা’।
আরেফিনরা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। পশ্চিমা সুরের মাদকতায় তাদের হাতেখড়ি যে সব গানে, তার অনেকগুলিরই জনক সোনার অলঙ্কারে শরীর মোড়া ‘হ্যাপ্পি বাপ্পি’। একাত্তরের ঝোড়ো দিনগুলিতে বাপ্পিও শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দু’টি গানে সুর বেঁধেছিলেন, তার একটি নিজে গেয়েওছিলেন— এই তথ্য জেনে এই প্রজন্ম হয়তো আরও একটু বেশি ভালবাসা দিয়েছে বাপ্পিকে, কিন্তু তাঁদের অন্তরে ভারতের এই গায়ক আজও ‘ডিস্কো কিং’, পদ্মাপাড়ের অহঙ্কার রুনা লায়লাকে নিয়ে যিনি সুরের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। রুনা যাঁকে নিজের দাদা বলে পরিচয় দেন। রুনা লায়লার
দাদা তো বাংলাদেশের সব সঙ্গীতপ্রেমীর দাদা— ‘বাঙালি এলভিস প্রিসলি’, বাপ্পিদা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের উপরে আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘হাজার বছর পরে আবার এসেছি ফিরে’ গানটি সুর করেছিলেন বাপ্পি। সেই গানের কথা শ্যামল গুপ্তের, যিনি ছিলেন সদ্যপ্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী। লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে সীমান্ত পার থেকে মন-খারাপের খবর আসা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য। ক’টা দিন পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুসংবাদ যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে তাঁদের। উত্তম-সুচিত্রা জুটির সেই সব সিনেমার গানের ইন্দ্রধনু যে দুই বাংলার বাঙালিকেই উদ্বেল করে তুলেছিল। সিনেমার গান, আধুনিক গান, সে তো স্বর্ণযুগ। মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক-সম্পাদক আবেদ খানের কথায়, “আবেগ না-থাকলে তো বাঙালি যুবকেরা হানাদার পাকিস্তান বাহিনীকে মেরে তাড়াতে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ত না! সেই আবেগে হেমন্ত-সন্ধ্যার সেই সব স্বর্ণযুগের গান ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়। বাঙালি মেয়েরা সন্ধ্যার গান তুলত রেডিয়ো শুনে শুনে। ছেলেরা দু’কলি হেমন্তের গান গেয়ে নিজেকে উত্তমকুমার ভাবতো!”
এ তো গেল পরোক্ষ অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও। পারিশ্রমিক না-নিয়ে জলসা করেছেন শরণার্থীদের সহায়তায়। পাকিস্তানি চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে যে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ গড়ে উঠেছিল, একেবারে সূচনা লগ্ন থেকে তার পাশে ছিলেন সন্ধ্যা। পরে এই বেতারকেন্দ্র যখন হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের কোকিল, তখনও সঙ্গে ছিলেন সন্ধ্যা। একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পরে গঠিত হল বাংলাদেশ, বাহাত্তরে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিব। সন্ধ্যা গাইলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের
স্বাধীন বাংলায়’। সন্ধ্যার প্রয়াণ তাই বুকে বড় বেশি বাজে সব বাঙালির, বাপ্পির চলে যাওয়াও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy