গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
গৌতম আদানির মালিকানাধীন শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্বতন শেখ হাসিনা সরকারের বিদ্যুৎচুক্তি নতুন বাংলাদেশ সরকারের আতশকাচের তলায়। এই পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিল না-হলে আদানিদের থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ চাইবে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ এবং শক্তি দফতরের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজ়ুল কবীরকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সে দেশের সংবাদপত্র ‘দ্য ডেলি স্টার’।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশে এক ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.০২ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) নিত। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অবশ্য বিদ্যুতের মাসুল কিছুটা কমিয়ে ইউনিট পিছু ১২ টাকা করা হয়। তার পরেও অবশ্য ভারতের অন্য বেসরকারি সংস্থার তুলনায় আদানির ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম ২৭ শতাংশ বেশি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তুলনায় এই মাসুল ৬৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে এক ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে গড়়ে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা খরচ করতে হয়। খুচরো বাজারে বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দামের থেকেও কম দামে আদানিদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চাইছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ দফতরের উপদেষ্টা জানিয়েছেন, চড়া দামে কেনা বিদ্যুৎ সস্তায় দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কিন্তু কেবল আদানি নয়, সব বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে বিদ্যুৎ কিনতে চাইছে ঢাকা।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের মধ্যে আদানিরা মাত্র এক-দশমাংশের জোগান দেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর নাম না-করেই মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাকে আমরা ব্ল্যাকমেল করতে দেব না।” যদিও বাংলাদেশের এই চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর তরফে এখনও মুখ খোলা হয়নি।
২০১৭ সালে শেখ হাসিনার আমলে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তিতে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ায় গত সপ্তাহে বাংলাদেশের হাই কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। এর পাশাপাশি ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আদানি-সহ ছ’টি সংস্থার সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তিও খতিয়ে দেখছে।
কেবল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্যই ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় ১২৩৪ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছিল আদানি গোষ্ঠী। গত অগস্টে হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার পরেই আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সম্প্রতি কেন্দ্র বিদ্যুৎ রফতানির বিধি বদলে জানায়, গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ ৮০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, দেশে ডলার সঙ্কট সত্ত্বেও তারা আদানি গোষ্ঠীকে ১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। বাকি টাকাও মেটানো হবে বলে আশ্বস্ত করে ঢাকা।
‘ঘুষকাণ্ডে’ নাম জড়ানোয় সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন গৌতম আদানি। এই শিল্পপতি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ছ’জনের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার আদালত সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে আদানিকে। অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের মোট ২২৩৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন আদানিরা। ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ আমেরিকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে তারা আমেরিকার আইন মেনে চলতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে তারা ঘুষের টাকা আমেরিকার বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ, যা পুরোপুরি বেআইনি। ফলে মামলার মুখে পড়েছে তারা। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠেনি বলে দাবি করেছে শিল্পগোষ্ঠীটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy