নেমত সাদাত। ছবি: রয়টার্স
তাঁর উপন্যাসের প্রেম ও যুদ্ধের আখ্যানই এখন জলজ্যান্ত বাস্তব তাঁর আপন দেশের রোজনামচায়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত সমপ্রেমীদের নিয়ে ‘দ্য কার্পেট উইভার’ উপন্যাসের লেখক নেমত সাদাত বলছিলেন, “আমার উপন্যাসের মতোই আফগানিস্তানে জলালাবাদ হয়ে পাকমুলুকে ঢুকে কিংবা অন্য প্রান্তে বিভিন্ন স্থল সীমান্ত ছুঁয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে আশ্রয় খোঁজার হিড়িক পড়েছে আফগান এলজিবিটিকিউ সমাজের বিপন্নদের মধ্যে! আকাশপথে তো আর এখন যাওয়ার উপায় নেই। যা করার মাটিতেই সারতে হবে। তবে কে কোথায় কী ভাবে পালাচ্ছে, এ সব খুঁটিনাটি বলা যাবে না।”
শনিবার এ দেশের সন্ধ্যায় আমেরিকার সান দিয়েগো থেকে নেটমাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আফগানিস্তানে যৌন সংখ্যালঘু তথা সমকামী, রূপান্তরকামীদের বড় ভরসা এই যুবক। তাঁর হিসেবে, গত ১৫ অগস্ট কাবুলের পতনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২৫ জন সমকামীকে আফগানিস্তান থেকে বার করে এনেছেন তিনি। চল্লিশোর্ধ্ব এই যুবা বার বারই টুইটারে হতাশা প্রকাশ করেছেন, নাৎসিদের ঢঙে তালিবান সমকামীদের সমূলে নিকেশ করবে! তাঁর বক্তব্য, “আজকের আফগান পরিস্থিতি বিশ্বের সব থেকে ভয়ানক মানবাধিকার সঙ্কট। কিন্তু এই দেওয়ালে পিঠ ঠেকা পরিস্থিতিই অনেককে নানা ভাবে মূলস্রোতের সঙ্গেও মিলিয়ে দিচ্ছে। সমকামীদের বিষয়ে খানিক ছুতমার্গ ছিল, এমন অনেকেই আমার সঙ্গে দেশ থেকে বেরোনোর বিষয়ে যোগাযোগ করছেন। মহিলা বিমানচালকদের মতো নানা পেশার মানুষই রয়েছেন তাঁদের মধ্যে।” নেমত জানাচ্ছিলেন, আরও হাজারের বেশি আফগান মুলুক ছাড়ার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাঁদের জন্য কয়েক শো বিসমকামী ব্যক্তিও আছেন।
বাবার বিদেশ দফতরে চাকরি বলে ছোট থেকে আফগানিস্তানের বাইরে অনেকটা সময় কেটেছে সাদাতের। ২০১২ নাগাদ কাবুলে ‘ইনস্টিটিউট অব আমেরিকায়’ শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। ২০১৪ সালেই তিনি নিজেকে সমকামী ও ধর্মহীন ব্যক্তি বলে প্রকাশ্যে পরিচয় দেন। তাতে অনেকের বিষনজরে পড়েন। তবু আফগানিস্তানের অন্দরে যৌন সংখ্যালঘু এবং মেয়েদের একটা স্বাধীন স্বর ডানা মেলতে দেখেছেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ার সমকামী-রূপান্তরকামীদের একটি মঞ্চ ‘সায়ানের’ আহ্বায়ক বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনলাইন আলাপচারিতায় নেমত আপশোস করছিলেন, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এই স্বাধীন স্বরগুলিই সব থেকে বিপন্ন।
শুধু রাজনৈতিক যুদ্ধ নয় একটা মতাদর্শগত বৈচিত্র্যের মাথা তোলার লড়াইও জারি ছিল, যা বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। “নানা পেশায় থাকা সমকামী, রূপান্তরকামীরা কোটর থেকে বেরোচ্ছিলেন কয়েক বছরে। তাঁদের ফোনের জিপিএস বন্ধ রাখতে বলেছি। নইলে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মদতে ওদের ধরপাকড় চলবে।” এই মুহূর্তে আমেরিকা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস — নানা দেশে আফগান শরণার্থীদের উদ্ধারে দরবার করছেন নেমত। তিনি বলছিলেন, “কাবুল পতনের পরে ভারতের ভূমিকাও শুরুতে সদর্থক ছিল। ধর্ম নির্বিশেষে অনেকে দিল্লিতে নেমেও ভিসা পেয়েছেন। কিন্তু পরে পিছপা হয়েছে ভারত। এখনও আফগানেরা অনেকেই ভারতকেই সব থেকে কাছের বন্ধু দেশ হিসেবে দেখে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে উঠে আশা করব, এই বিপদে দিল্লি আমাদের পাশে থাকবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy