Advertisement
E-Paper

রাজ্যপালের কাছে বড় দাবি বিজেপির, কড়া কেন্দ্রও, বোস কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে কী কী হতে পারে রাজ্যে

রাজ্যের সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনা নিয়ে রাজভবনে দরবার করে বিজেপি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে মঙ্গলবার। কিন্তু কী বলছে সংবিধানের নিয়ম? কোন পদক্ষেপে কী কী হতে পারে বাংলায়?

Why BJP wants article 355 in West Bengal

এ বার আর ৩৫৬ নয়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে ৩৫৫ অনুচ্ছেদ জারির আর্জি জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। — ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ২০:২৭
Share
Save

বাংলায় অনেকবারই ৩৫৬ অনুচ্ছেদ (যা জনপ্রিয় ধারণায় ‘৩৫৬ ধারা’ বলে প্রচলিত) জারির দাবি তুলেছে রাজ্য বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অতীতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে গিয়েছেন। এমন আবেদনও করা হয়েছে যে, ৩৫৬ অনুচ্ছেদ না হলেও নিদেনপক্ষে যেন সংবিধানের ৩৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করা হয় বাংলায়। কিন্তু এ বার আর ৩৫৬ নয়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে ৩৫৫ অনুচ্ছেদ জারির আর্জি জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। গোটা রাজ্যে নয়, সম্প্রতি অশান্ত হাওড়া জেলার শিবপুর থানা এবং হুগলি জেলার রিষড়া থানা এলাকায়। সংবিধান অনুযায়ী যে তা সম্ভব, মঙ্গলবার তা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।

হাওড়ায় অশান্তির পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেছিলেন রাজ্যপালকে। শাহ কথা বলেন সুকান্তের সঙ্গেও। তবে রিষড়ায় অশান্তি ছড়াতেই বিজেপি একের পর এক চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রকে। এর পরে শাহের মন্ত্রক রিপোর্ট চেয়ে নবান্নের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে। তার আগেই রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গের সফর কাটছাঁট করে মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে রিষড়ায় যান। এর পর রাজভবনে যায় সুকান্তের নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল। সেই দল একটি স্মারকলিপিও দিয়েছে রাজ্যপালকে।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের দু’টি এলাকাকে ‘উপদ্রুত’ অঞ্চল বলে মনে করছে তারা। সেই দুই এলাকায় সংবিধানের ৩৫৫ অনুচ্ছেদ জারির জন্য কেন্দ্রকে যাতে রাজ্যপাল চিঠি পাঠান, সেই দাবিই জোরালো ভাবে পেশ করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সুকান্তরা এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু শুভেন্দু সরব হয়েছেন। তিনি রাজ্যপালের দিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘সাংবিধানিক প্রধান তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট না চেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিল্লিকে জানান। শিবপুর থানা, রিষড়া থানা এলাকায় ৩৫৫ ধারার আওতায় ‘উপদ্রুত’ ঘোষণা করা হোক। আগামী দেড় মাসের জন্য ওই থানাগুলিকে আধা সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রাজ্যপাল এই প্রস্তাব দিন। তা হলে বুঝব, উনি কিছু করে দেখাতে চাইছেন।’’

বিজেপি বরাবরই এমন দাবি করে যে, ‘নীতিগত’ ভাবে তারা কোনও রাজ্যে ৩৫৬ অনুচ্ছেদ জারি করার পক্ষপাতী নয়। গণতান্ত্রিক সরকার ভেঙে দেওয়ার কোনও নজির বিজেপি এখনও পর্যন্ত দেখায়ওনি। কিন্তু ৩৫৫ অনুচ্ছেদ জারি করার দাবিও কি মানবে নরেন্দ্র মোদী সরকার? এমন প্রশ্ন রয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরেও। প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর দাবির জবাবও দিয়েছেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার এবিপি আনন্দকে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা তো একটা দাবি। বিরোধী দলনেতার এই ধরনের দাবি করার অধিকার আছে। বিরোধীদের কাজই হল বিরোধিতা করা। তাই বিরোধী দলনেতা কিছু দাবি করছেন, এটা গণতন্ত্রে খুব স্বাভাবিক। রাজ্যপাল হিসাবে আমি সংবিধানের পথেই হাঁটব।’’

ভারতের সংবিধানের অষ্টাদশ ভাগে কোনও রাজ্যে ৩৫৬ বা ৩৫৫ জারি সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। এই অংশে দেশে বা দেশের কোনও প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধান। ৩৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্য সরকার সংবিধানসম্মত ভাবে সরকার না চালালে সেই মন্ত্রিসভাকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যেতে পারে৷ সেখানে ৩৫৫ অনুচ্ছেদ বলছে, বাইরের আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে রাজ্য সরকারগুলিকে রক্ষা করতে কেন্দ্র বাধ্য এবং সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য চালাতে রাজ্য সরকারের যা যা সাহায্য প্রয়োজন, তা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার দায়বদ্ধ।

অর্থাৎ ৩৫৬ হল কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অস্ত্র’, যা প্রয়োগ করে কোনও প্রাদেশিক সরকারকে ফেলে দেওয়া যায়৷ আর ৩৫৫ অনুচ্ছেদ হল ‘ঢাল’, যা রাজ্য সরকারকে অরাজক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে৷ অন্তত ব্যাখ্যা তেমনই।

কিন্তু গোটা রাজ্যকে ৩৫৫-র আওতায় না এনে কি তা ‘বাছাই’ কোনও এলাকায় প্রয়োগ করা যায়? জানতে চাওয়া হলে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সাম্প্রতিক অতীতে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে এমনটা করার সংস্থান যে সংবিধানে রয়েছে, তা-ও জানান তিনি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ‘‘রাজ্যের কোথাও আদৌ সেই পরিস্থিতি রয়েছে কি না বলতে পারব না। তবে এটা করা যায়। সবটাই নির্ভর করছে রাজ্যপাল কেমন রিপোর্ট দিচ্ছেন তার উপরে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত হয় না। তবে ওই অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনও বিশেষ অংশে ৩৫৫ জারি করা যায়। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যের সরকারকে ভেঙে না দিয়ে প্রশাসন যাতে সংবিধান মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে কিছু কিছু নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।’’ কোনও এলাকায় ৩৫৫ জারি হলে কি সেখানকার পুলিশের হাতে কোনও ক্ষমতা থাকে? অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ‘‘৩৫৫ জারি হলে পুলিশের উপরে কিছু কিছু নির্দেশ আসবে। সেটা কতটা মানা হচ্ছে, তা রাজ্যপাল দেখবেন।’’

Article 355 BJP CV Ananda Bose Governor of west bengal Sukanta Majumdar Mamata Banerjee Amit Shah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।