প্রশিক্ষণ ছাড়াই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেই সব অভিযোগকে ছাপিয়ে গিয়েছে আর জি কর হাসপাতালের পড়ুয়া-চিকিৎসক খুনে যুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের দৃষ্টান্ত। তার পরেই রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও করেছিলেন পদস্থ কর্তারা। ভবানী ভবন থেকে প্রস্তাবও গিয়েছিল নবান্নে। প্রশাসনের খবর, তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রস্তাবে এখনও সায় দেয়নি নবান্ন। তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়নি। এই প্রশিক্ষণ শুরু নিয়ে আপাতত অন্ধকারে রাজ্য পুলিশের কর্তারা।
তবে কলকাতা পুলিশে নভেম্বর মাস থেকেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। লালবাজারের খবর, কলকাতা পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রতি ব্যাচে ১৬০ জন করে সিভিক ভলান্টিয়ারকে তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এক হাজারের বেশি সিভিক ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশ প্রায় সাড়ে সাত হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন। তাঁরা বিভিন্ন থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি জেলায় পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেট এলাকায় পুলিশ কমিশনারের অধীনে সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ হবে। কারণ, সব সিভিক ভলান্টিয়ারকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন। ভবানী ভবনের খবর, প্রশিক্ষণের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের আইনের প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হবে। থানা এবং রাস্তায় নাগরিকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত, তাও প্রশিক্ষণে শেখানো হবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। শারীরিক সক্ষমতা বাড়়ানোর কসরত শেখানোর পাশাপাশি বাহিনীর উপযোগী নিয়মশৃঙ্খলার পাঠ দেওয়ার কথাও প্রশিক্ষণের প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
পুলিশের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, অতীতেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল এবং তা নিয়ে মামলাও হয়। সেই মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের পদ্ধতি এবং পুলিশের সঙ্গে কারা সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অন্য একটি মামলায় পুলিশ বাহিনীতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা যাবে না। উল্লেখ্য, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের সরকারি নীতিতেও পুলিশের মূল কাজে (আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, তদন্ত ইত্যাদি) তাঁদের যুক্ত না থাকার কথাই বলা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)