Advertisement
E-Paper

Underage Marriage: এখনও চিন্তা বাল্যবিবাহ, জোর নিবিড় প্রকল্প-প্রচারে

নাবালিকাদের সহায়তার জন্য রয়েছে ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘রূপশ্রী’-র মত প্রকল্প। কিন্তু তবুও বেড়ে চলেছে বাল্যবিবাহ। চিন্তিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে বাল্যবিবাহ।

প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে বাল্যবিবাহ। প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৫:৪৫
Share
Save

স্কুলছুট, বাল্যবিবাহ রুখতে ন’বছর আগে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। পরে দুঃস্থ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েতে সহায়তার জন্য চালু হয়েছিল ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প। সেই দুই প্রকল্প চালুর এত দিন পরেও বেশ কয়েকটি জেলায় বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকাদের গর্ভধারণের প্রবণতার ঊর্ধ্বমুখী হারে (বিস্তারিত সারণি পৃঃ ৫) উদ্বিগ্ন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এই ছবি দ্রুত বদলাতে আগামী দিনে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের নিবিড় প্রচারে বাড়তি জোর দেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে নবান্ন।

তবে শীর্ষ প্রশাসনিক মহল একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে দুই বছরের (২০১৫-১৬ এবং ২০১৯-২০) মধ্যে তুলনা করে এই উদ্বেগ, সেই সময়ের মধ্যে সার্বিক ভাবে রাজ্যে নাবালিকাদের গর্ভধারণের প্রবণতা কিন্তু কমেছে। কারণ, তা বেশ খানিকটা কমেছে বহু জেলায়। একই কারণে রাজ্যে সার্বিক ভাবে বাড়েনি বাল্য বিবাহের হারও।

তবে যে-হেতু বেশ কয়েকটি জেলায় বাল্যবিবাহ, নাবালিকাদের গর্ভধারণ, মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর সমস্যা দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে, তাই এই সব সমস্যা ঠেকাতে প্রতি জেলার জন্য পৃথক আদেশনামা প্রকাশ করেছে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে জেলাশাসকদের নেতৃত্বে দল গড়ে নজরদারি চালানোর। কন্যাশ্রী-রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের নিবিড় প্রচারে পৃথক ভাবে জোর দিতেও বলা হয়েছে সব জেলাশাসককে।

নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এনএফএইচএস-এর রিপোর্ট এসেছে ২০২০ সাল নাগাদ। অর্থাৎ, তার মূল্যায়নের সময় ধরা যেতে পারে আরও তিন-চার বছর আগে। তবুও আমরা রিপোর্টের তথ্যকে অস্বীকার করছি না। এটা ঠিক, আগের তুলনায় এখন মেয়েরা অনেক সচেতন। নাবালিকারাই বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। তবুও হয়ত কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে। বিশেষ করে কোভিড কালে। আমরা জেলাভিত্তিক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে আরও কার্যকর এবং নিবিড় ভাবে প্রয়োগ করছি এই সমস্যা ঠেকাতে। জোরদার প্রচার চলছে নাবালিকাদের গর্ভধারণের ঝুঁকিরও।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের নিজস্ব সমীক্ষার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে-র (এনএফএইচএস-৫) সাম্প্রতিক রিপোর্টে জেলাভিত্তিক বাল্যবিবাহের যে-ছবি উঠে এসেছে, তাতেই চিন্তিত প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল। রিপোর্ট বলছে, আগের (২০১৫-১৬) তুলনায় পূর্ব মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহ বেড়েছে সর্বাধিক, ১৩.৬%। পূর্ব বর্ধমান (৯.২%), হুগলি (৮.৯%), বাঁকুড়া (৬.৭%)-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় তা ঊর্ধ্বমুখী। খাস কলকাতায় এই প্রবণতা বেড়েছে ৩.৩%!

এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “এ রাজ্যে ১৮ বছরের আগেই ৪১%-৫৯% মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় অন্তত ১২টি জেলায়। আটটি জেলায় এই হার ২১%-৪০%। মাত্র দু’টি জেলায় তা ২০ শতাংশের নীচে।”

সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর পরামর্শ-নির্দেশিকা পাঠিয়ে জেলাশাসকদের জানিয়েছে, গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময়ে নানা ধরনের জটিলতায় প্রসূতি-মৃত্যুর সমস্যা থেকে গিয়েছে। জেলাশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে বলা হয়েছে, প্রতিটি মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর তথ্য জোগাড় করে যথাযথ অনুসন্ধান চালাতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণমানের সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত নজরদারি এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নও।

এরই সূত্র ধরে নাবালিকাদের গর্ভধারণের সমস্যার উপরেও বাড়তি জোর দিয়েছে দফতর। সাত দফা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঠেকাতে উদ্যোগী হতে হবে জেলা প্রশাসনগুলিকে। রীতিমতো কমিটি গড়ে নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় সচেতনতার প্রচার চালাতে হবে। বাড়াতে হবে কন্যাশ্রী-রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের প্রচারও। এক জেলা-কর্তা বলেন, “কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে আরও অনেকটা সময় প্রয়োজন। তবে সব চেয়ে বেশি জরুরি প্রকল্পগুলির সুবিধা ঠিক ভাবে ঠিক হাতে পৌঁছচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।”

সরকারি তথ্য বলছে, ন’বছরে পা দেওয়া কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা গিয়েছে ১৩-১৯ বছরের ৭৫ লক্ষ কিশোরীকে। ২০২১-২২ সালে প্রায় ২২.৭৯ লক্ষ উপভোক্তাকে বার্ষিক ১০০০ টাকা এবং প্রায় ৫.২৫ লক্ষকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এই সময়েই রূপশ্রী প্রকল্পে ২.১১ লক্ষ বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ের
জন্য এককালীন অনুদান দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা করে। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ যথাক্রমে ১৮৫৮.৬৪ কোটি এবং ৭৫০ কোটি টাকা।

তবে এক কর্তার বক্তব্য, ২০১৯ সালের শেষ পর্বে ২৪ বছরের যে-সব মেয়েকে সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছিল, দেখা গিয়েছে, তাঁদের অনেকের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগেই। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে কমবেশি ছ’বছর আগে, ২০১৩ সালের আশেপাশে। কন্যাশ্রী চালু হয় ২০১৩ সালে। ফলে সমাজ বা এই সমস্যার উপরে ওই প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ তখন ছিল না। গত আট বছরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এই প্রকল্প চালানোর সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এনএফএইচএসের পরবর্তী রিপোর্টে পরিস্থিতি বদলের স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাবে। মন্ত্রীরও দাবি, ‘‘সরকারি তরফে যাবতীয় পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং ফলোআপ করা হবে। আশা করা যায়, এর ইতিবাচক প্রতিফলন পরের রিপোর্টে থাকবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Kanyashree Rupashree Mamata Banerjee Child Marriage Underage marriage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।