মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত দিল্লি গেলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের তলব মতো সোমবার, ৩১ মে সকাল ১০টায় নয়াদিল্লির নর্থ ব্লকে কর্মিবর্গ মন্ত্রকে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন না। রাজ্য তাঁকে ছাড়পত্র না দেওয়াতেই আলাপনের দিল্লি যাওয়া হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে, মুখ্যসচিব পদে আলাপনবাবুর কাজের মেয়াদ ৩ মাস বাড়ানোর যে ছাড়পত্র দিল্লি প্রথমে দিয়েছে, সেই অনুযায়ী তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবেই কাজ চালিয়ে যাবেন। প্রসঙ্গত, মুখ্যসচিব হিসেবে কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধি না হলে সোমবারই আলাপনবাবুর অবসর নেওয়ার কথা ছিল।
শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা বৈঠকে হাজির থাকার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও মুখ্যসচিব আলাপনের। কিন্তু মোদীর সঙ্গে দেখা করলেও দু’জনের কেউই বৈঠকে যোগ দেননি। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসে চিঠি। সেখানে সোমবার সকাল ১০টায় আলাপনকে দিল্লিতে নর্থ ব্লকের কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ বিভাগে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্দেশকে ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই এ রকম নির্দেশ দেওয়া কতটা ‘আইনি’ সে প্রশ্নও তুলেছেন প্রাক্তন আমলাদের একটা বড় অংশ। রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, “হঠাৎ মুখ্যসচিবকে সরে যেতে হবে, এটা কে ঠিক করল? এই প্রশ্ন উঠছে কেন? তা ছাড়া রাজ্যের সঙ্গে কেউ কি কোনও আলোচনা করেছিল? রাজ্য কি সম্মতি দিয়েছে?” দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের এক কর্তাও বলেন, “কেন্দ্র যে নির্দেশ পাঠিয়েছে, তা একতরফা।” আইন মন্ত্রকের ওই কর্তার ব্যাখ্যা, “ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস’-এর ৬(১) বিধি বলছে, একজন অফিসার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতিতে কেন্দ্রে নিযুক্ত হতে পারেন। কেন্দ্র-রাজ্যের মতের ফারাক হলে কেন্দ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, আলাপনের কাজের মেয়াদ ৩ মাস বাড়ানো নিয়ে ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে। সেটা শুধু মুখ্যসচিব পদের জন্য। কিন্তু এখন আলাপনকে কেন্দ্রে নিয়োগ করার ব্যাপারে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, সম্মতিও নেওয়া হয়নি। ফলে নির্দেশটি একতরফা।”
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিহিংসামূলক’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তোপ দেগেছে মোদী-শাহের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের সরকারকে। কংগ্রেসের তরফেও বিবৃতি দিয়ে এই নির্দেশের সমালোচনা করা হয়েছে। এই নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ধ্বংস করার চেষ্টা বলে মনে করেন এআইসিসি-র শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, ৩১ মে অবসর গ্রহণের কথা ছিল আলাপনের। কিন্তু এর পরও তাঁকে মুখ্যসচিব পদে রেখে দেওয়ার জন্যে কেন্দ্রকে প্রস্তাব পাঠায় রাজ্য। কেন্দ্র তাতে সম্মতিও দেয়। গত বছর অক্টোবর মাসে মুখ্যসচিব পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। শেষ ৮ মাস ধরে এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ১৯৮৭ সালের ব্যাচের এই আইএএস অফিসার। বর্তমানে কোভিড এবং ইয়াস সংক্রান্ত একাধিক টাস্কফোর্সের মাথায় রয়েছেন তিনি। কোভিড মোকাবিলায় তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। শনিবারের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানান, কেন্দ্রকে আলাপনের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করা করা হয়েছে। যদিও সোমবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রের নির্দেশনামা বদলের কোনও খবর নেই।
রাজ্য সরকার যদি কোনও সচিব স্তরের আধিকারিককে ছাড়তে না চায়, তবে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানানোই রেওয়াজ। সচিব পর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়োগের বিষয়টি যে কেন্দ্রীয় সরকারি বিভাগ দেখভাল করে তার নাম ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং বা ডিপিওটি। রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি দেখার দায়িত্বে রয়েছে প্রশাসনিক কর্মিবর্গ দফতর। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের এই প্রশাসনিক কর্মিবর্গ বিভাগের পক্ষ থেকেই চিঠি দিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং-কে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। ঠিক কী কারণে মুখ্যসচিবকে ছাড়া হবে না, তাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা থাকছে বলেও জানা গিয়েছে।
আলাপন যোগ না দেওয়ায় দিল্লি কী পদক্ষেপ করে সে দিকে নজর থাকবে সকলেরই। মোদী-মমতা টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত আলাপনের ভবিষ্যত্ কী দাঁড়ায়, তা নিয়েই সোমবার চর্চা থাকবে তুঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy