ইছামতি নদী— ফাইল চিত্র।
ইছামতী নদী সংস্কার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে নিশানা করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, আংরাইল থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত বিস্তৃত ইছামতীর অংশটি সংস্কারের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যাবে।
দিন কয়েক আগে গজেন্দ্র বিজেপি-র ‘ঘর ঘর সম্পর্ক কর্মসূচি’তে হাবড়ায় এসে বলেছিলেন, ‘‘ইছামতী নদী সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়টি আমি পুরোপুরি জানি না। তবে নদী রাজ্যের বিষয়। যদি রাজ্য এই নদী সংস্কারের জন্য আবেদন জানায়, তাহলে সেই কাজে কেন্দ্র হাত দেবে। যেমন ভাবে গঙ্গা শুদ্ধিকরণ করা হয়েছে, তেমন ভাবেই ইছামতি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া যাবে।’’
গজেন্দ্রর এই মন্তব্যকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার করে তুলেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইছামতী রক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে অজ্ঞ গজেন্দ্রকে বুধবার ‘ক্লাস টু পাশ’ বলে কটাক্ষ করেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের মানচিত্রের ইছামতী নদী রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়ে ভারতবর্ষের আটটি বিধানসভা ঘুরে সেটি আবার বাংলাদেশ মিশে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী তো জানেনই না, ইছামতী একটি জাতীয় নদী। এই সব টু-থ্রি পাশ নেতাদের বিজেপি কেন্দ্রে মন্ত্রী বানিয়েছে। ২০২১-এ আমরা এই দলটাকে ইছামতীর জলে ভাসিয়ে দেব।’’
ইছামতী নদীর নামে ২০০০ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গ চলে আসে। সেই বন্যার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর প্রচেষ্টায় নদীর কিছুটা অংশ ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় সেই প্রচেষ্টা কার্যত জলে গিয়েছে বলে মনে করেন নদী বিশেষজ্ঞদের একাংশ। দিনের পর দিন পলি পড়ে নদীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
মাথাভাঙ্গা নদী নদিয়া জেলার মাজদিয়ার কাছে পাবাখালিতে দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় ইছামতীর উৎপত্তি। ভারতে ১৯.৫ কিলোমিটার তীর্যকভাবে অতিক্রম করে, ইছামতী মুবারকপুরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি বাংলাদেশে ৩৬.৫ কিলোমিটার ঘুরে ফের ভারতে প্রবেশ করে নদীয়ার দুত্তাফুলিয়া দিয়ে। নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমারেখা তৈরি করে। যা আংরাইল থেকে কালাঞ্চি এবং পুনরায় গোয়ালপাড়া থেকে কালিন্দী-রায়মঙ্গল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি ১৯৯৭ সালে থেকে এই ইছামতী বাঁচাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায় জানান, পাবাখালি থেকে দত্তপুলিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ নদীপথ সংস্কারের প্রয়োজন। এই অংশের মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। ফলে তা আন্তর্জাতিক বিষয়। তাই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই দীর্ঘ নদীপথ সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থও প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এখনও কোনও ফল পাইনি।’’
কবি বিভাস রায়চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মাজদিয়া থেকে মসলন্দপুর পর্যন্ত নদীর দু’পাশে প্রচুর মানুষ বসবাস করেন। তাঁদেরও নদীর কষ্ট অনুভব করতে হবে। নদীর জন্য ভালোবাসার আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে কেন্দ্র-রাজ্য কোনদিনই সংস্কারের পথে হাঁটবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy