Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dinhata

অস্ত্র ঘোরে হাতে হাতে, বলছেন বাসিন্দারাই

২০১৮ সালের সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দিনহাটা কার্যত বোমা-বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছিল। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গ্রামে-গঞ্জে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত শম্ভু দাসের মা শোভা দাস। রবিবার দিনহাটার টিয়াদহ গ্রামে। (ইনসেটে) শম্ভু দাস। নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত শম্ভু দাসের মা শোভা দাস। রবিবার দিনহাটার টিয়াদহ গ্রামে। (ইনসেটে) শম্ভু দাস। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ০৯:০০
Share: Save:

পাকা রাস্তা থেকে গলি ঢুকেছে গ্রামের ভিতরে। বালি-পাথরের সে রাস্তা পাকা করার কাজ হচ্ছে জোরকদমে। কাজ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামের মানুষ। এক বৃদ্ধ বসে রয়েছেন সেখানে, বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। ভোটের খবর জিজ্ঞেস করতে উঠে দাঁড়ালেন। এ দিক-ও দিক তাকিয়ে বললেন, “আপনি কি চান না, এই বুড়ো বয়সে একটু ভাল থাকি?’’ তার পরে একটু থেমে বললেন, ‘‘এখন কিছু না বলাই ভাল। চুপ থাকতে হবে।” তেমন নির্দেশ কে দিয়েছে? জবাব না দিয়ে দ্রুত সরে গেলেন বৃদ্ধ।

কোচবিহারের দিনহাটায় বুড়িরহাটের বাসন্তীরহাট গ্রাম। যে গ্রামে এক সময় ‘শেষ কথা’ বলত তৃণমূল। সেখানে এখন তৃণমূলেরই বিদায়ী প্রধান ভরত বর্মণ যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। বাড়ির দাওয়ায় বসে ভরত বললেন, “ভয় পাই না। লড়াই হবে। মনে রাখবেন, দাদারও দাদা রয়েছে।”

মনোনয়ন-পর্বে গোড়ায় শুকারুরকুঠিতে চার রাউন্ড গুলি ছোড়ার ঘটনায় পুলিশ এক জনকে ধরেছে। তৃণমূলের ভিতরের ‘দ্বন্দ্বে’ ওই গুলি চলেছে বলে খবর। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিজেপি কর্মীদের চারটি গাড়ি ভাঙচুর, কয়েক জনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সে রাতেই ভেটাগুড়ির সিঙ্গিজানিতে এক বিজেপি প্রার্থীর বাড়ি ও দোকান তাক করে গুলি ছোড়া হয়েছে। অভিযোগ, মোটরবাইকে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে এসে কয়েক জন হুমকি দিয়েছে, “মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নে, না হলে আবার আসব।” উত্তাপের মাত্রা চড়ছিল। এর মধ্যে শনিবার গভীর রাতে খুন হয়ে গেলেন বিজেপি কর্মী শম্ভু দাস (২৭)। দিনহাটার টিয়াদহের বাসিন্দা শম্ভু এই ভোটে তাঁর বৌদি বিশাখার প্রার্থিপদের প্রস্তাবকও ছিলেন।

নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে, দিনহাটার পুঁটিমারিতে খুন হন বিজেপি নেতা প্রশান্ত রায় বসুনিয়া। দিনহাটার লোকজনের আশঙ্কা, যত ভোট এগিয়ে আসবে ততই গোলমাল বাড়তে পারে। তাঁরা পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটের কথা উল্লেখ করছেন সুযোগ পেলেই।

২০১৮ সালের সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দিনহাটা কার্যত বোমা-বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছিল। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গ্রামে-গঞ্জে। তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ছিলেন যুব তৃণমূলের নেতা।

নিশীথ এখন বিজেপিতে। এলাকাবাসী কয়েক জনের কথায়, “রাতের অন্ধকারে প্রচুর বোমা পড়ছে। আওয়াজ পাচ্ছি। ঘর থেকে বেরোচ্ছি না।” দিনহাটা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। ওই মহকুমায় দু’টি বিধানসভা রয়েছে। একটি দিনহাটা, অন্যটি সিতাই। বিরোধীরা অভিযোগ করে থাকেন, দুই বিধানসভাই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর। সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে শালমারা, চৌধুরীহাট, শুকারুরুকুঠি, গীতালদহ, সিতাইয়ের জনপদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, ওই এলাকাগুলিতে হাতে হাতে অস্ত্র ঘোরে। চৌধুরীহাট বাজারে নাম না প্রকাশের শর্তে এক যুবক বলেন, “সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু বুঝবেন না। আসলে চাপা সন্ত্রাস। তাই মুখ ফসকেও কেউ কিছু বলবে না।”

‘সন্ত্রাসের’ কথা অবশ্য মানতে নারাজ দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। তিনি বলে, “কোথায় সন্ত্রাস! সব মিথ্যে অভিযোগ। দুই-এক জায়গায় বিজেপি অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।” তবে শুধু সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মাঠ ছাড়তে রাজি নয় বিজেপি। নিশীথের কথায়, “ফাঁকা মাঠে অনেকেই নিজেদের ‘শের’ ভাবে। মানুষ যদি যথাযথ ভাবে গণতান্ত্রিক মতামত প্রকাশ করতে পারেন, তা হলে দেখিয়ে দেব, কোচবিহারের মানুষ কাদের চান।”

অন্য বিষয়গুলি:

Dinhata BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy