গত কয়েক মাস যাবৎ বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করে চলেছে। —প্রতীকী ছবি।
এ বার মুখ্যমন্ত্রীর পাড়া তথা তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অন্তর্গত হাজরা মোড়ে তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশনের সভা। সেই সভায় হাজির থাকবেন রাজ্যের ছয় মন্ত্রী-সহ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। আগামী শনিবার, ৩ জুন হাজরা মোড়ে সভাটি হবে। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসবাসের এলাকাকে তাঁদের আন্দোলন, সভা, মিছিলের ‘লক্ষ্য’ হিসাবে বেছে নিয়েছেন, শাসকদলের অনুগামী কর্মচারীদের সভা তারই ‘পাল্টা’ বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যদিও প্রকাশ্যে এমন কিছু সংগঠন বা দলের তরফে বলা হচ্ছে না।
সাধারণত শাসকদলের অনুগামী সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন প্রকাশ্যে এমন সভা করে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরোধী সংগঠনগুলিকে ‘জবাব’ দেওয়ার দায় রয়েছে তাদের। গত কয়েক মাস যাবৎ বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করে চলেছে। গত ৬ মে হাজরা মোড়ে আয়োজিত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সভায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের হয়ে সওয়াল করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে মমতার সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন এই দুই নেতা। পাশাপাশি, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল করেছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। শান্তিরক্ষা-সহ কিছু শর্তে হরিশ মুখার্জি রোড ধরে সেই মিছিলের অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তাই ‘পাল্টা সভা’ করে তাদের জবাব দিতে চাইছে তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র তথা বসবাসের এলাকায় বিরোধী সংগঠনের ‘আস্ফালন’ কোনও ভাবে বরদাস্ত করতে নারাজ শাসকদল।
তবে নিজেদের এই কর্মসূচিকে ‘পাল্টা’ কর্মসূচি বলতে নারাজ তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশন। সংগঠনের নেতা প্রতাপ নায়েক তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও বিরোধী সংগঠনের পাল্টা সভা করে জবাব দিচ্ছি না। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যে এখনও সরকারের পাশে রয়েছেন, সেই বার্তা তুলে ধরতেই আমরা এই সভার আয়োজন করছি।’’ তবে তৃণমূল পরিচালিত কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা যা-ই বলুন, মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে এই সভা নিয়ে সরকারি কর্মচারী মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ, বকেয়া ডিএ-র দাবিতে গত বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে অন্য কর্মচারী ইউনিয়নগুলি আন্দোলনের কর্মসূচি নিলেও সেই কারণে কোনও কর্মসূচি নেয়নি তৃণমূল পরিচালিত সরকারি কর্মীদের সংগঠন। সরকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ছিল বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হাজরায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সভায় শুভেন্দু-মান্নান আক্রমণের সুর চড়িয়ে যাওয়ায় এবং অভিষেকের বাড়ির সামনে মিছিলের পরেই এই কর্মসূচি স্থির হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত ওই সভায় হাজির থাকবেন কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। থাকবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সভা প্রসঙ্গে কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী শনিবার বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সমর্থন যে আর রাজ্য সরকারের প্রতি নেই, সেই বাস্তব ঘটনা চাপা দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে সভা করছে তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। যে কোনও সংগঠন রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে সভা করতেই পারে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের যুক্তিসঙ্গত দাবিকে উপেক্ষা করে তা হতে পারে না। আর ওই সভা মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র কেন, যে কোনও জায়গায় হোক। তাতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে আন্দোলন করছি।’’ বামপন্থী কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির এই নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত দক্ষিণ কলকাতায় তাঁরাও পরে সভা করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy