হনুমানজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার পথচলতি যানবাহন দাঁড় করিয়ে গেরুয়া পতাকা টাঙানো-সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকলেন বিজেপি নেতৃত্ব। রামনবমীর মতো হনুমানজয়ন্তী পালন নিয়ে প্রচার না থাকলেও, এ দিন উদ্যাপন দেখা গিয়েছে নানা প্রান্তে। আর তাতে অনেক জায়গাতেই বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদেরও। রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সম্প্রতি সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে একটি ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিবাদের সময়ে মৌলালিতে বাস থেকে গেরুয়া পতাকা খুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তার প্রতিবাদ হিসেবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার হনুমানজয়ন্তীর দিন বাড়ি-বাড়ি গেরুয়া পতাকা টাঙানোর ডাক দিয়েছিলেন। সেই মতো এ দিন নিউটাউনে নিজের বাড়িতে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের পরে সোদপুরে হনুমান মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছেন সুকান্ত। সেখানে ও পরে ধর্মতলায় যানবাহন দাঁড় করিয়ে তাতে গেরুয়া পতাকা টাঙিয়েছেন সুকান্ত, বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষেরা। ধর্মতলায় গেরুয়া পতাকা বিতরণও করেছেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, “রাজনৈতিক দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে ধর্ম, সংস্কৃতির জন্য কাজ করুন।” উত্তর কলকাতা এবং হাওড়ায় দু’টি শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। রাজ্য প্রশাসনকে নিশানা করে তিনি বলেছেন, “এখানে জয় শ্রীরাম, ভারতমাতার ধ্বনি দিতেও হাই কোর্টে যেতে হয়। সনাতন হিন্দুদের এক থাকতে হবে। গেরুয়া পতাকা সবার উপরে থাকবে।”
এই প্রেক্ষিতে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূলও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বিজেপির থেকে হিন্দুত্ব শিখতে হবে না। বাংলায় অজস্র পুজো হয়। সুকান্ত মজুমদারের বরং সারা দিন বাংলায় কথা না বলে, আজ হুপ-হাপ করা উচিত! যাঁরা বজরংবলীর পুজো করেন, তাঁরা অবশ্যই তা করবেন। এটিকে রাজনৈতিক বিষয়ে টেনে আনার অর্থ নেই।”
মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তেই বিভিন্ন সংগঠন দিনটি পালন করেছে। নদিয়ার রানাঘাটে হনুমানজয়ন্তীর শোভাযাত্রায় ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। শোভাযাত্রার জেরে দীর্ঘক্ষণ কার্যত অবরুদ্ধ হয়েছিল শহরের একাংশ। দিনটি পালনে পথে নেমেছিলেন বিজেপির বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার প্রমুখ। স্বপন-সহ কয়েক জনের হাতে অস্ত্রও ছিল বলে অভিযোগ। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তৃণমূলও। বর্ধমান শহরে তৃণমূলের এক পুরপ্রতিনিধির উদ্যোগে ৫০ ফুটের হনুমান মূর্তি তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বর্ধমান ২ ব্লকে যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক। হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় অস্ত্র হাতে শোভাযাত্রা হয়েছে। হাজির ছিলেন সপ্তগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত। কোচবিহার স্টেশন মোড় থেকে সংহতি যাত্রার ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। পুন্ডিবাড়িতে শোভাযাত্রায় যোগদানকারীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন সংখ্যালঘুরা। বীরভূমের সিউড়ি, দুবরাজপুরে বিজেপি ও তৃণমূল নেতাদের একই শোভাযাত্রায় পাশাপাশি হাঁটতে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যেই পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে হনুমানজয়ন্তীর শোভাযাত্রায় গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত এক পুলিশকর্মীর ছবি ঘিরে বিতর্ক বেধেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)