E-Paper

বাল্যবিবাহ রুখছেন তরুণী, রাষ্ট্রপুঞ্জে রোশনী শোনাবেন তাঁর লড়াইয়ের কথা

২০১৯ সালে রোশনী যোগ দেন ইউনেস্কোর ‘প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর’ পদে। তাঁর দাবি, গত পাঁচ বছরে কিসানগঞ্জ লাগোয়া বিহার-বাংলা সীমানা এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি নাবালিকার বিয়ে রুখেছেন।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৫
রোশনি পারভিন।

রোশনি পারভিন। —নিজস্ব চিত্র।

তখন তিনি নবম শ্রেণি। ইচ্ছে ছিল পড়ার। তাঁর অমতে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। বিবাহিত জীবনে নানা ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে বুঝেছিলেন, নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা কেন জরুরি। এখন তিনি বাল্য বিবাহের খবর পেলে, নাবালিকার পরিবারকে বোঝান। ভাগ করে নেন নিজের কাহিনি। নাবালিকাদের জীবনে ফেরান পড়াশোনার আলো।

আগামী ১৬ নভেম্বর সুইৎজ়ারল্যান্ডের জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইয়ং অ্যাক্টিভিস্টস সামিট’-এ যোগ দিয়ে, বিশ্ববাসীকে সে লড়াইয়ের কথাই বলবেন বিহারের কিসানগঞ্জের শিমুলবাড়ি গ্রামের রোশনী পারভিন। সমাজকর্মীদের এই শীর্ষ সম্মেলনে নারী ও শিশুকল্যাণ নিয়ে কাজ করছেন, বিশ্বের এমন পাঁচ জন মহিলা নিজেদের কথা জানাবেন। রোশনী বলবেন ‘ভারত ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বাল্য বিবাহের কুফল ও বর্তমান অবস্থা’ নিয়ে। বছর চব্বিশের রোশনীর কথায়, ‘‘জেনিভার সম্মেলনে ডাক পেয়ে নিজের উপরে আস্থা বেড়ে গিয়েছে।’’

উত্তর দিনাজপুর জেলা লাগোয়া কিসানগঞ্জে রোশনীর বাবা হায়দর আলি অটো চালান। ঘর সামলান মা। দুই ভাই পড়াশোনা করছেন। বাড়িতে অভাব রয়েছে। সে অভাবের জেরেই, রোশনি যখন নবম শ্রেণিতে পড়তেন, সেই ২০১৪ সালে পরিবার তাঁর বিয়ে দিয়ে দেয়।

বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান রোশনী। বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পড়তে চেয়েছিলেন বলে বিয়ের দু’বছরের মধ্যে রোশনীকে তালাক দেন স্বামী। এক বছরের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন মেয়ে। নিজের জেদে পড়াশোনা চালিয়ে যান। বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষায় ‘সোশাল ওয়ার্ক’ নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী।

রোশনীর কথায়, “স্বামী আমার উপরে যে ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে, তা বলার নয়। অন্যেরা যেন এমন ভুল না করে, তাই লড়াই চালাচ্ছি।’’

২০১৯ সালে রোশনী যোগ দেন ইউনেস্কোর ‘প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর’ পদে। তাঁর দাবি, গত পাঁচ বছরে কিসানগঞ্জ লাগোয়া বিহার-বাংলা সীমানা এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি নাবালিকার বিয়ে রুখেছেন। অনেককেই স্কুলে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। সে জন্য নানা কথা শুনতে হয়েছে। গায়ে মাখেননি।

রোশনীর কাজে এখন গর্বিত তাঁর বাবা। বলেন, “অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম। সে ভুল যেন আর কেউ না করেন। ভুলের জন্য আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।’’ কিসানগঞ্জের জেলাশাসক তুষার সিংলার বক্তব্য, “রোশনী আমাদের গর্ব। তাঁর কাজকে কুর্নিশ জানাই।’’

তবে রোশনীর আক্ষেপ, বিহারের কিসানগঞ্জ, কাটিহার ও পুর্ণিয়ার মতো পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরেও বাল্য বিবাহের সংখ্যা কম নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাল্য বিবাহ রোধে আইন রয়েছে। কিন্ত সে আইনকে ঠিক মতো কাজে লাগানো হচ্ছে না।’’ উত্তর দিনাজপুর ‘চাইল্ড লাইন’-এর জেলা কো-অর্ডিনেটর উত্তম দাস বলছেন, ‘‘করোনা-পর্বে বাল্য বিবাহ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। অনেকগুলোই রোখা হয়েছে। রোশনীর মতো কাউকে সঙ্গে পেলে, সেই কাজটা আরও সুবিধার হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

United Nations UNESCO Kishanganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy