Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

রাতারাতি পথবাসী ওঁরা

পথেই এখন জীবন ঝড়ুচরণদের। ‘ইয়াসে’র ঝাপটায় ভিটেহারা হয়ে রাস্তায় এসে উঠেছেন। ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।

রোজ পাত পড়ছে পথে। খেজুরির কাদিরাবাড় চরে।

রোজ পাত পড়ছে পথে। খেজুরির কাদিরাবাড় চরে। নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
খেজুরি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

রাস্তার উপরে কালো পলিথিনের তাঁবুর পাশে বসে কথা হচ্ছিল। সুখ-দুঃখের। হঠাৎ দূর থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখে গল্প ফেলে থালা-বাটি হাতে দৌড় লাগালেন অনেকে।

হলটা কী?

খেজুরির পাচুড়িয়া গ্রামের ঝড়ুচরণ মালি একটু হেসেই জবাব দিলেন, ‘‘আরে ত্রাণের গাড়ি এসেছে তো। দুপুরের খাবার নিতে হবে না!’’

পথেই এখন জীবন ঝড়ুচরণদের। ‘ইয়াসে’র ঝাপটায় ভিটেহারা হয়ে রাস্তায় এসে উঠেছেন। ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। ত্রাণের খাবারের পাত পড়ছে পিচ ঢালা রাস্তায়। সেখানেই ডাঁই করা ত্রাণ সামগ্রী থেকে বেছে নিতে হচ্ছে জামা-কাপড় কিংবা অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।

ঝড়ুচরণ মালি, সুভাষ পাত্ররা কেউই অবশ্য ফুটপাতবাসী ছিলেন না। বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছিল। ছিল মাথার উপর ছাদ। একটা ঝড় আর তার দাপটে সমুদ্রের তাণ্ডব সব গিলে খেয়েছে। ঘরহারা হয়ে খেজুরির কাদিরাবাড় চর, সাহেবনগর, থানাবেড়িয়া, পাচুড়িয়ার মতো পরপর গ্রামের বহু মানুষের ঠাঁই এখন খোলা আকাশের নীচে। পেশায় মৎস্যজীবী ঝড়ুচরণের একতলা পাকা বাড়ির দেওয়াল জুড়ে ফাটল। মেঝে বসে গিয়েছে। পরিজনেদের নিয়ে ত্রিপল খাটিয়ে পাকা রাস্তার ধারেই থাকছেন। ঝড়ুচরণ বলছেন, ‘‘বাড়ি না সারানো পর্যন্ত যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই।’’

ঝড়ুচরণের পাশেই সুভাষ পাত্রের ছোট্ট মাটির বাড়িটাও তছনছ হয়ে গিয়েছে। উপরের ছাউনি, দরমার দেওয়াল কিছুই আর নেই। মাটির মেঝেতেও পা ফেলা দুষ্কর। সুভাষ বলছেন, ‘‘এ পাড়ায় ত্রাণ দিতে কেউই ঢোকে না। তাই ত্রাণের জিনিস নিতে রাস্তাতেই অপেক্ষায় থাকতে হয়।’’

খানিকটা এগিয়ে রাধাপুর, থানাবেড়িয়া-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা গেল রাস্তায় দুপুরের খাওয়াদাওয়া চলছে। সেখানে শয়ে শয়ে মানুষ খাচ্ছেন। খাবার ছাড়া অন্য ত্রাণ সামগ্রীও মিলছে রাস্তার উপরেই। সাহেবনগর থেকে কাদিরাবাড় চর, ভাঙাবেড়া, বটতলা হয়ে নীচকসবা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় পাকা রাস্তার উপরে ডাঁই করে প্রচুর জামা-কাপড় রাখা। চাহিদা মতো দুর্গতেরা সেখান থেকেই নিজেরটা সংগ্রহ করছেন। খেজুরি-২ এর বিডিও ত্রিভুবন নাথ অবশ্য বলছেন, ‘‘রাস্তার উপরে ত্রাণ সামগ্রী বিলি এবং রান্না করা খাবার বিতরণের তথ্য আমাদের কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

প্রশাসন কবে খোঁজ নেবে জানেন না ঝড়ুচরণেরা। তবে সত্যিটা হল গত ২৬ মে-র পরে রাতারাতি পথবাসী হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সবটুকুই এখন পথের বুকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy